২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সরল চেহারার তাপস পালকে ঘিরে তৈরি হয় সুপারহিট পারিবারিক গল্পের ছবি

তাপস পাল
তাপস পাল

তথাকথিত নায়কের বাইরে সরল–শান্ত চেহারা আর অভিনয়দক্ষতা দিয়ে দর্শকমন জয় করেছিলেন ভারতের চলচ্চিত্র অভিনেতা তাপস পাল। আশি-নব্বই দশকে দুই বাংলাতেই তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে।

ভারতের বিশেষ করে কলকাতার বাণিজ্যিক সিনেমার পরিচালকেরা তাপস পালকে বারবার এমন সব চরিত্রের জন্য নির্বাচন করছিলেন, যা বাংলার তথাকথিত নায়কের মতো নয়; বরং স্বাভাবিক, সারল্যই তাপস পালের চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ছিল। যে কারণে তাঁর একের পর এক পারিবারিক গল্পের ছবি হয়ে উঠেছিল আশি ও নব্বই দশকের সুপারহিট বাণিজ্যিক সিনেমা।

১৯৫৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর হুগলির চন্দননগরে জন্ম নেন তাপস পাল। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল তাঁর। কলেজজীবনে মাত্র ২২ বছর বয়সে অভিনয়জগতে পা রাখেন। তাঁর অভিনয়দক্ষতা ছিল ব্যতিক্রমী। তাঁর এই অভিনয়দক্ষতাকেই কাজে লাগান খ্যাতনামা পরিচালকেরা। বাংলা চলচ্চিত্রের তথাকথিত নায়কদের মতো সুদর্শন, ভালো নাচ, মারপিট জানার বিপরীতে সরল চেহারা তাপস পালকে করে তোলে অনন্য। তাঁকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় একের পর এক পারিবারিক গল্পের চলচ্চিত্র।

প্রেম, অভিমান, অনুরাগ এবং প্রয়োজনে হালকা মারপিট ছিল তাপস পালের সিনেমার বৈশিষ্ট্য। একদিকে নিপাট সারল্য অন্যদিকে ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছে বীরত্ব প্রদর্শন করে নায়িকাকে উদ্ধার। এমন বহু দৃশ্যে তিনি অভিনেতা থেকে তারকা হয়ে উঠেছিলেন। তবে এখানে শেষ নয়, বাণিজ্যিক সিনেমার এই তারকাকে নিয়েছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মতো বিকল্পধারার পরিচালকও। তাপস পাল নিজেকে মেলে ধরেছিলেন ‘উত্তরা’ বা ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’–এর মতো সিনেমায়। যেখানে তাঁর চরিত্র ছিল ছোট, অভিনয় ছিল অসামান্য।

তরুণ মজুমদার পরিচালিত ‘দাদার কীর্তি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তাপস পাল সিনেমাজগতে পা রাখেন। এরপর ‘গুরুদক্ষিণা’, ‘সাহেব’, ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’সহ বেশ কিছু হিট ছবি তাঁকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দেয়। অভিনেতা হিসেবে তিনি বাংলাদেশেও সমান জনপ্রিয় ছিলেন। ‘সাহেব’ ছবির জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান।

বাংলার পাশাপাশি তাপস পাল অভিনয় করেছেন হিন্দি ছবিতেও। একসময় তিনি তৎকালীন বোম্বেতেও গিয়েছিলেন অভিনয়ের সূত্রে। ১৯৮৪ সালে হীরেন নাগের ‘অবোধ’ সিনেমায় তাঁর বিপরীতে নায়িকা ছিলেন মাধুরী দীক্ষিত। রাখি গুলজারের সঙ্গেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। একসময় তরুণ মজুমদারের ডাকে আবার কলকাতা ফিরে এসে দেবশ্রী রায়ের সঙ্গে অভিনয় করেন ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’ ছবিতে। ১৯৮৫ সালের ওই ছবি বক্স অফিসে বিপুল সাফল্য এনে দেয়।

বাংলা ছবিতে তৈরি হয় দেবশ্রী-তাপস সফল জুটি। ‘অর্পণ’, ‘সুরের সাথী’, ‘সুরের আকাশে’, ‘নয়নমণি’, ‘চোখের আলোয়’, ‘তবু মনে রেখো’ তাপস পালের বাণিজ্যিক সফল সিনেমা।

জনপ্রিয়তার সূত্রে একসময় রাজনীতিতেও নামেন তাপস পাল। ২০০৯ সালে পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের মনোনয়ন পেয়ে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ হন। অবশ্য নানা মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্কেও জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে রোজভ্যালি–কাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁকে গ্রেপ্তারও করে সিবিআই। শেষ পর্যন্ত অভিনয়ের চেনা জগতে আবার ফিরতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ফেরা হয়নি, চলে গেছেন না–ফেরার দেশে।

ভারতের গণমাধ্যমগুলোর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ৩টা ৩৫ মিনিটে মুম্বাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তাপস পাল। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে স্নায়ুর রোগে ভুগছিলেন। কথা বলা ও চলাফেরায় সমস্যা ছিল। ১ ফেব্রুয়ারি বান্দ্রার হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই তিনি ভেন্টিলেশনে ছিলেন। ৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর ভেন্টিলেশন খুলে ফেলা হয়। গতকাল রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।