তারকার শখের সঙ্গী
নায়িকা নামবেন গাড়ি থেকে। চোখে গুচির চশমা, পরনে টিপটপ পোশাক আর কোলে তাঁর ছোট্ট বন্ধু। এমন দৃশ্য অচেনা নয়। নায়কদের বেলায়ও এমন দেখা যায়। সুদর্শন তারকা হেঁটে যাচ্ছেন, পাশে তাল মিলিয়ে হাঁটছে নায়কের বিশ্বস্ত সহচর। মানুষের কথা বলছি না, বলছি তারকাদের পোষা প্রাণীর কথা। এই পোষ্য হতে পারে বিড়াল, কুকুর কিংবা খরগোশ। তবে তারকারা এদের বলতে চান বন্ধু, তাঁদের শখের বন্ধু। সেই বন্ধুদের নিয়েই এবারের আয়োজন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারকাদের পোষা প্রাণীও ‘তারকা’
ফেসবুকে আপনার বন্ধুর সংখ্যা কত? কিংবা ইনস্টাগ্রামে আপনার অনুসারী কয়জন? সংখ্যাটা একনিশ্বাসে গুনে বলে ফেলতে পারবেন হয়তো। কিন্তু বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার পোষা কুকুর ডায়নার ইনস্টাগ্রাম অনুসারীর সংখ্যা জানেন? ১ লাখ ৫০ হাজার। হ্যাঁ, এত মানুষ অনুসরণ করে প্রিয়াঙ্কার পোষ্যকে। কোথায় যাচ্ছে সে, কী করছে, এই সব খবর রাখে এই লাখখানেক মানুষ।
শুধু লোকদেখানো নয়, আছে সামাজিক বার্তা
মানুষ নানাভাবে জেনে না–জেনে ক্ষতি করছে নিজেদের, নিজের আশপাশের মানুষদের, পরিবেশের ও প্রাণীদেরও। এ কারণেই তারকারা বিভিন্ন সময় সাধারণ মানুষদের সঠিক সামাজিক বার্তা দিতে যোগ দেন অনেক দাতব্য কাজে। তারকা সম্পৃক্ততার দিক থেকে একটি অন্যতম দাতব্য কাজ হলো প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করা। হলিউড, বলিউড, এমনকি বাংলাদেশের তারকারাও নানা সময় নানাভাবে যুক্ত হচ্ছেন প্রাণী অধিকার রক্ষাবিষয়ক নানা দাতব্য কাজে। আলিয়া ভাটের যেমন ‘পুচ ওভার পটাকা’ নামে নিজস্ব একটি কর্মসূচিই আছে। প্রতিবার হোলি ও দিওয়ালি উৎসবের সময় এই কর্মসূচি নিয়ে প্রচারণা চালান আলিয়া। তাঁর বার্তা, নিরীহ প্রাণীদের সঙ্গে অন্যায় কোরো না। বিভিন্ন উৎসবে দেখা যায় রাস্তার কুকুর–বিড়ালকে লক্ষ্য করে মানুষেরা পানি, রং ছুড়ে মারে। কিংবা কুকুরের লেজে বেঁধে দেয় পটাকা। এসব ঘৃণ্য কাজ বন্ধ করতেই আলিয়া ‘পুচ ওভার পটাকা’ নামের কর্মসূচিটি শুরু করেছেন।
কুড়িয়ে পাওয়া খরগোশ এখন ইনস্টাগ্রামে
দেশের বাইরের তারকাদের মতো হয়তো বড় পরিসরে এ ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে পারেন না বাংলাদেশের তারকারা। তবে তাঁরাও থেমে নেই। যাঁর যতটা সাধ্য ততটা দিয়েই চেষ্টা চালিয়া যান। এই যেমন বলা যায় মডেল ও সংগীতশিল্পী শাহতাজের কথা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে এরই মধ্যে। তাঁর পোষা খরগোশের নাম ‘রোবোকপ’। এই খরগোশেরও আছে ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট। শাহতাজ জানালেন, তিনিও একটা সচেতনতামূলক বার্তা দিতেই ‘রোবোকপ’–এর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। এই রোবোকপ প্রায় মরতে বসেছিল। খরগোশটিকে রাস্তায়
কুড়িয়ে পেয়েছিলেন শাহতাজ। পায়ে চোট পেয়েছিল বলে খরগোশটিকে একটি প্রাণী বিক্রয়কারী দোকানের লোকেরা রাস্তায় ফেলে দেয়। পরে শাহতাজ ওকে কুড়িয়ে এনে যত্নআত্তি করে বড় করেছেন। এখন এই খরগোশের বয়স ৮ মাস, আর ইনস্টাগ্রামে তার অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ৪০০। শাহতাজ বলেন, ‘আমার মনে হয় সেসব প্রাণীকেই পোষ্য হিসেবে নেওয়া উচিত যারা অসহায় ও পরিত্যক্ত। রোবোকপ (খরগোশ) যেমন ছিল, পরিত্যক্ত, আহত। কিন্তু এখন একটু যত্ন তাকে কতটা ভালো রেখেছে দেখুন। এটাই আমি সবাইকে দেখাতে চাই।’
জয়া আর ক্লিওপেট্রা
জয়া আহসানের অভিনয় তো দেশের গণ্ডিকে ছাড়িয়ে অনেক দূর পৌঁছে গেছে সীমান্তের ওই পাড়েও। বাংলাদেশ–ভারত দুই দেশ মিলিয়েই তাঁর কাজ করতে হয়। কিন্তু যখনই কাজের জন্য ভারতে যান, জয়ার মনটা পড়ে থাকা তাঁর ঢাকার বাসায়। কারণ জয়ার অন্যতম বন্ধু ক্লিওপেট্রা যে তাঁর অপেক্ষায় থাকে এখানে। ক্লিওপেট্রা মানে জয়ার গোল্ডেন রিট্রিভার কুকুর। এই পোষ্য এখন তাঁর বন্ধুর চেয়ে বেশি, পরিবারের সদস্যের মতো। ঢাকায় ক্লিওপেট্রাকে নিয়ে ঘোরার মতো জায়গা আর সুযোগ নেই বলে নিয়মিত শহরের আশপাশের বিভিন্ন রিসোর্ট আর খোলা জায়গায় চলে যান জয়া ও তাঁর পরিবার। ছুটি পেলেই শুধু ক্লিওপেট্রার জন্য নিজের পুরো দিনকে উৎসর্গ করে দেন। বাইরে কোথাও বেড়াতে গেলে ক্লিওর জন্য খেলনা কেনা চাই–ই চাই। শুধু যে ক্লিও, তা নয়। জয়া আহসান কলকাতায়ও কিছু পরিত্যক্ত কুকুরের দেখভাল করেন, সময় কাটান তাঁদের সঙ্গে। ক্লিওপেট্রারও আছে ইনস্টাগ্রামে। তার অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ৫০০। জয়ার কাছে ক্লিওর গল্পের কোনো শেষ নেই। আমাদের বললেন, ক্লিওকে দেখতে নাকি ভারত থেকেও বাংলাদেশে ছুটে আসে জয়ার বন্ধুরা।
টোকিওকে নিয়ে মাহির ঘোরাঘুরি
আমরা নায়িকা মাহিয়া মাহির ছবি তুলতে চাইছিলাম। কিন্তু মাহির সঙ্গে ফটোশুটে আমরা পেয়ে গেলাম তাঁর বন্ধু টোকিওকেও। টোকিওর বয়স মাত্র দেড় মাস। কিন্তু এরই মধ্যে মাহির বাধ্য হয়ে উঠেছে। নায়িকার সঙ্গী, তাই পোজও দিতে শিখে গেছে নায়িকার মতো। কথায় কথায় শুনলাম টোকিওর অনেক গল্প। মাহি বললেন, এই পোষ্য তাঁর সার্বক্ষণিক সঙ্গী এখন। যেখানে যাচ্ছেন টোকিও থাকছে সঙ্গে। খুব কঠিন সময়েও টোকিওর দুরন্তপনা কাটিয়ে দিচ্ছে মাহির দুশ্চিন্তা, অবসাদ আর মন খারাপ। এই পোষা কুকুরকে নিয়ে তিনি বাড়ির পাশের পার্ক থেকে শুরু করে দেশের নানা প্রান্তেও চলে যান, আর টোকিও নাকি সেটা উপভোগও করেন।
আর কিছু তারকা পোষ্য
তারকাদের প্রিয় পোষা প্রাণীদের কথা বলে শেষ করা যাবে না। দেশের বাইরের তারকারা তো আছেনই, এর পাশাপাশি আমাদের দেশের পরীমনি, এ বি এম সুমন, প্রাণ রায়–শাহনেওয়াজ কাকলী দম্পতি, ইরেশ যাকের, শম্পা রেজাসহ আরও অনেকেই প্রাণীদের প্রতি বেশ সহনশীল। কোনো জীবই হিংস্রতা বা অবহেলার জন্য নয়, সবাই একটুখানি ভালোবাসা পেতেই পারে। এটাই এই তারকারা প্রকাশ করেন তাঁদের কাজে ও ব্যক্তিজীবনের চর্চায়।