পাবনা থেকে এফডিসিতে এসে কাঁদলেন সুচরিতা
শুটিং স্পটে পরিচালকের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ আনলেন একসময়ের জনপ্রিয় নায়িকা সুচরিতা। পাবনা থেকে এসে গতকাল মঙ্গলবার তিনি তরুণ পরিচালক রফিক শিকদারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি বরাবর।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়ক জায়েদ খান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘পাবনা থেকে ফিরে এসেছেন সুচরিতা আপা। গতকাল আমাদের সমিতির অফিসে এসে রীতিমতো কেঁদে ফেলেন। আমরা অবাক, একজন সিনিয়র শিল্পীর সঙ্গে বাজে ব্যবহার!’ জায়েদ খান জানান, ‘অভিযোগ পেয়ে আমরা তৎক্ষণাৎ কমিটির সদস্যদের নিয়ে সভায় বসি। সে সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত সমিতির সকল সদস্যকে পরিচালক রফিক শিকদারের যেকোনো শুটিং ও ডাবিং থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছি। আমার বিশ্বাস, পরিচালক সমিতি এ ব্যাপারে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবেন। এই পরিচালকের বিরুদ্ধে এর আগেও বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। আশা করি, এবার তাঁর বিচার হবে।’
লিখিত অভিযোগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী সুচরিতা উল্লেখ করেন, ‘বসন্ত বিকেল’ ছবিতে অভিনয় করার কথা ছিল। শুটিংয়ের জন্য পাবনা যান তিনি। কিন্তু পরিচালক রফিক শিকদার সুচরিতার শুটিং না করে সারা দিন বসিয়ে রাখেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁর সঙ্গে তিনি অসদাচরণ করেন, গালিগালাজ করেন। দুজনের বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে তাঁকে মারতে যান পরিচালক, যে কারণে শুটিং রেখে ঢাকায় চলে আসেন সুচরিতা।
অভিযোগের ব্যাপারে পরিচালক রফিক শিকদার বলেন, ‘সুচরিতা আপা শুটিংয়ের জন্য তাড়া দিচ্ছিলেন। তখন দিনের আলোয় শুট চলছিল। নায়িকার কিছু অভিনয় দৃশ্যের চিত্র ধারণের জন্য দিনের আলো প্রয়োজন ছিল। সুচরিতা আপার দিনের আলোয় শুট ছিল না। বেলা দুটোর দিকে আমি তাঁকে বলি, ‘আপু, নায়িকার কয়েকটি দৃশ্য আছে, সূর্যের আলো পড়ে গেলে নিতে পারব না। আজকের দিন তো শেষ। তাই আপনি বিশ্রাম করুন।’
রফিক শিকদারের দাবি, এরপর নাকি সুচরিতা তাঁর ছোট ভাইকে ডেকে দেরি হওয়ার জন্য শিকদারকে গালিগালাজ করেন। একই আচরণ করেন শিকদারের সহকারীর সঙ্গেও। পরে রফিক শিকদার নিজে গেলে তাঁর সামনেও গালিগালাজ করেন সুচরিতা। রফিক প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গে তর্ক হয়। কিন্তু মারার জন্য এগিয়ে যাওয়ার মতো কিছু হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
রফিক শিকদার বলেন, ‘শুনেছি, ঢাকায় এসে শিল্পী সমিতিতে অভিযোগ করেছেন। শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকও আমাকে ফোন করে নানা হুমকি দেন, গালিগালাজ করেন। আমিও আমাদের পরিচালক সমিতি এবং প্রযোজক সমিতিতে অভিযোগ করব।’
এ বিষয়ে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, যদি আপা রাগও করে থাকেন, তাহলেও রফিক শিকদারের মতো একজন জুনিয়র পরিচালকের উচিত ছিল চুপচাপ থাকা। ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করা। মনে রাখতে হবে, সুচরিতা আপা শুধু একজন শিল্পীই নন, একটি অধ্যায়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তাঁর অবদান অনেক। তিনি শিল্পী সমিতির আজীবন সদস্য।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এ ঘটনার কথা শুনেছি। ওই পরিচালক এখন ঢাকার বাইরে। আমরাও পিকনিকসহ সাংগঠনিক কিছু কাজে ব্যস্ত। খুব শিগগির আমরা অভিযোগ ওঠা পরিচালক এবং অভিযোগকারীর সঙ্গে বসে বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করব।’
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী সুচরিতার আসল নাম বেবী হেলেন হলেও ঢাকাই চলচ্চিত্রে সুচরিতা নামেই পরিচিত তিনি। তাঁর অভিনয়জীবন শুরু হয়েছিল শিশুশিল্পী হিসেবে। পরে বহু চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। ১৯৭২ সালে আজিজুর রহমান পরিচালিত ‘স্বীকৃতি’ ছবিতে প্রথম নায়িকা হিসেবে কাজ করেন সুচরিতা। ১৯৭৭ সালে আবদুল লতিফ বাচ্চু পরিচালিত ‘যাদুর বাঁশী’ ছবিটি তাঁকে জনপ্রিয় করে তোলে। ইলিয়াস কাঞ্চন, ওয়াসিম, উজ্জলসহ বিভিন্ন নায়কের সঙ্গে বেশ কিছু রোমান্টিক ছবিতে অভিনয় করে দর্শকনন্দিত হন তিনি।