দুই ভাইয়ের 'অনির্বাণ ২০১৯'
ইদানীং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী নিবেদিত, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও গোলাম কিবরিয়া ফারুকী পরিচালিত সেই ছবিটির নাম ‘অনির্বাণ ২০১৯’।
‘রাইজ অব ঈগল’ বা ‘অনির্বাণ ২০১৯’ নিয়ে আলাপের শুরুতেই পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এই ছবি নির্মাণের ৬৫ ভাগ কৃতিত্ব দিলেন ভাই গোলাম কিবরিয়া ফারুকীকে। আর নিজে নিলেন ৩৫ ভাগ। যদিও চিত্রনাট্যের একটি বড় অংশের কাজ করেছেন তিনি। ১৬ দিনের শুটিংয়েও এই দুই ভাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিলেন। তবে? মোস্তফা সরয়ার ফারুকী জানালেন, এই ছবির একটি বড় অংশের কাজ হয়েছে সম্পাদনার টেবিলে। আর সেই সময় তিনি নিউইয়র্কে ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’ ছবির শুটিংয়ে ছিলেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি নিজের মন্তব্য জানিয়েছেন, পরামর্শ দিয়েছেন। আর তিনি নিজেও স্বীকার করলেন, দূর থেকে বসে প্রতিক্রিয়া জানানোটা খুবই সহজ। কিন্তু সম্পাদনার ক্ষেত্রে মূল কাজটা করেছেন গোলাম কিবরিয়া ফারুকী। কিছু শট যখন নেওয়া হয়েছে, তখন এক অর্থ ছিল। কিন্তু সম্পাদনায় গিয়ে সেই শট বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ব্যবহার করায় তা নতুন অর্থ তৈরি করেছে। ‘একান্নবর্তী’, ‘পিঁপড়াবিদ্যা’, ‘ডুব’খ্যাত এই পরিচালক আরও জানান, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর পেজ থেকে এই চলচ্চিত্র শেয়ার করার পর প্রথম তিন দিনে সাত লাখ বার দেখা হয়েছে, আর সাড়ে পাঁচ হাজার বার শেয়ার হয়েছে ‘অনির্বাণ ২০১৯’। জানালেন আরেক ‘দুঃখে’র গল্পও। রোববার রাতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ‘অনির্বাণ ২০১৯’–এর অন্য একটি ভার্সন আপলোড করতে গিয়ে আগেরটি ডিলিট হয়ে যায়। ফলে সব শেয়ার হারিয়ে যায়। ফারুকীর ভাষায়, ‘সাড়ে পাঁচ হাজার সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেলে যে রকম লাগার কথা, সে রকম লাগতেছে। সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ তাদের নিজ নিজ প্রোফাইলকে সিনেমা হলে রূপান্তরিত করছিলেন। এঁরা প্রায় সবাই কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাঁদের বন্ধুবান্ধবেরা তাঁদের প্রোফাইলে এসে এই ছবিটি দেখতেন।’
তবে এই পরিচালক এটিও জানালেন, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ‘অনির্বাণ ২০১৯’ যে সাড়া পেয়েছে, তা ‘অবিশ্বাস্য’। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর জন্য এর আগেও অনেক কনটেন্ট নির্মিত হয়েছে। তবে এই ছবিটি সবচেয়ে বেশি আলোচনার সৃষ্টি করতে পেরেছে। ছবিটি নির্মাণের ক্ষেত্রে মূল চ্যালেঞ্জ কী ছিল? ‘অল অ্যাবাউট হিজ মাদার’, ‘পুরাঘটিত বর্তমান’খ্যাত নির্মাতা গোলাম কিবরিয়া ফারুকী বলেন, ‘প্রথম ফ্রেম থেকে শেষ ফ্রেম পর্যন্ত পুরোটাই চ্যালেঞ্জের ছিল। বাংলাদেশে এ ধরনের কাজ আমরা তো করি নাই, অন্য কেউও করে নাই। আমরা কেউ জানতাম না, ফাইটার (প্লেন) কীভাবে চলে। এখন তো মিগ, পিটি সিক্স কীভাবে চালাইতে হয় সব জানি।’ মূল চরিত্রের নাম কেন ইন্তেখাব রাখা? এই পরিচালক বললেন, এই নামটার ভেতরে নাকি একটা মায়া আছে। ফারুকী নাকি চেয়েছিলেন, এমন একজনকে নিতে, যাঁকে দেখে মনে হবে যে সে পারবে না। ইন্তেখাব চরিত্রটি যিনি করেছেন, তাঁর আসল নাম তানভীর জিম। পর্দায় যেমনটি দেখা গেছে, তিনি বাস্তবেও বিমানবাহিনীর একজন ক্যাডেট। প্রথমে এটি প্রামাণ্যচিত্র হওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তী সময়ে ফারুকী এটিকে ফিচার ফিল্ম হিসেবে উপস্থাপন করেন। সিনেমাটি বানানোর উদ্দেশ্য ছিল, তরুণেরা যাতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে যোগদান করতে অনুপ্রাণিত হয়।