মূক ও বধির বিদিশা 'মিস ডিফ ওয়ার্ল্ড'
২১ বছর আগের কথা। ভারতের উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগরে জন্ম নেয় এক শিশু। কিন্তু অন্য শিশুদের মতো সে জন্মের পর কেঁদে ওঠেনি। পরে জানা যায়, সে মূক ও বধির। নিজের এই জন্মগত ত্রুটিকে মেনে নেয় শিশুটি। এসবকে সে কখনো নিজের স্বপ্নের থেকে বড় হতে দেননি। তাই তো স্বপ্ন এসে ধরা দিয়েছে তার হাতে। হয়েছে ‘মিস ডিফ ওয়ার্ল্ড’। তাঁর নাম বিদিশা বালিয়ান।
২০০১ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে ‘মিস ডিফ ওয়ার্ল্ড’। এত দিন পর্যন্ত এই মুকুট অধরাই ছিল ভারতের। এ বছর বিদিশা বালিয়ানের মাধ্যমে ভারত মূক ও বধির বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতায় পেয়েছে শ্রেষ্ঠত্ব। দক্ষিণ আফ্রিকার মোম্বেলা শহরে ২২ জুলাই এই প্রতিযোগিতার ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ভারতীয় হিসেবে আরও ১০ দেশের সুন্দরীদের পেছনে ফেলে মুকুট পান বিদিশা। ২১ বছর বয়সী এই সুন্দরী পড়াশোনা করছেন এশিয়ান একাডেমি অব ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশনে।
তবে বিদিশার জন্য ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিনিধিত্ব করা এবারই প্রথম না। বিদিশা প্রথম আন্তর্জাতিক স্তরের টেনিস প্রতিযোগিতায় ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। ডিফ অলিম্পিকে জিতেছেন রুপা।
‘মিস ডিফ ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া নিয়েও সংশয় ছিল বিদিশার। কোমরে মারাত্মক চোট ছিল। এই অবস্থায় কথা ছিল দক্ষিণ ভারতীয় যে সুন্দরী দ্বিতীয় হয়েছেন, তাঁকেই পাঠানো হবে দক্ষিণ আফ্রিকায়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বেঁকে বসেন বিদিশা। ব্যথা নিয়ে বিছানা থেকে উঠে ব্যাগ গুছিয়ে জানান, তিনি তৈরি। তিনিই যাবেন।
বিশ্বসুন্দরীর মঞ্চে তাঁর ‘তাণ্ডব নাচ’ সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। সেটিকে এখন পর্যন্ত এই মঞ্চের সেরা পারফরম্যান্স বলে ধরা হচ্ছে। সেই নাচের ছবি শেয়ার করে বিদিশা ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘তাণ্ডব মূলত হিন্দু দেবতা শিবের বিভিন্ন রূপের বিশেষ ধরনের নাচ। আমি ছোটবেলা থেকেই নাচতে ভালোবাসতাম। যদিও আমি শব্দ, ছন্দ শুনতে পাই না। তবে আমার মনে হয়, সেটা জরুরি বা আবশ্যক নয়। নাচের জন্য হৃদয়ে প্রবল ইচ্ছা থাকতে হয়। মনে থাকতে হয় মিউজিক।’
বিদিশা ছোটবেলা থেকেই বিশ্বসুন্দরী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন। ছোটবেলা থেকেই নাচ শিখেছেন। সুন্দরী প্রতিযোগিতাগুলো মন দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছেন। নিয়মিত ম্যাগাজিন পড়েন। আর স্বপ্ন দেখেন বিশ্ব জয়ের। সেই স্বপ্নে কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। তাই তো বিশ্বসুন্দরীর মুকুট জয়ের পর তিনি লিখেছেন, ‘হ্যাঁ, একটা স্বপ্ন পূরণ হয়েছে বটে। তবে এটা কেবল শুরু। আরও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে।’
আরও জানিয়েছেন, তিনি তো মাত্র একজন। তাঁর মতো আরও অনেক আছেন, যাঁদের ক্ষমতা আছে পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার, যাঁরা অত্যন্ত গুণী, কিন্তু সুযোগের অভাবে তাঁরা কখনো নিজেদের প্রমাণ করতে পারেনি, পারছে না। আজ তাঁর কাছে সুযোগ আছে। এই সুযোগকে তিনি সেসব মানুষের স্বপ্ন জয়ের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিতে ব্যবহার করতে চান। তিনি এই অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে রবার্ট ফ্রস্টের জনপ্রিয় কবিতার উদাহরণ দেন, ‘মাইলস টু গো বিফোর আই স্লিপ’।
বিশ্বসুন্দরীর মঞ্চে যখন তাঁকে সেরার মুকুট পরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, ইনস্টাগ্রামে সেই মুহূর্তের ভিডিও শেয়ার করে বিদিশা লিখেছেন, ‘সেই মুহূর্ত...আমি কথা বলতে পারলে যা বলতাম, আমার চোখের পানি তার চেয়ে অনেক বেশি বুঝিয়ে দিয়েছে। আমার খুশি, আমার ব্যথা, আমার কঠোর পরিশ্রমের দিনগুলো, আমার বিশ্বাস আর প্রতিদিন ভোরে ওঠার সকালগুলো—সবকিছু মিলে এই মুহূর্ত।’