প্রযোজকেরা প্রযোজনায় নীরব, নির্বাচনে সরব
প্রায় সাত বছর পর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির নির্বাচন হতে যাচ্ছে ২৭ জুলাই। ছবি নির্মাণে ধারাবাহিক নন বা মাত্র একটি ছবি নির্মাণ করেছেন—এমন প্রার্থীদেরই বেশি দেখা গেল। এমনকি দু-একটি ছবিতে সহ-প্রযোজনা করেই এই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন কেউ কেউ। প্রযোজনায় নীরব থাকলেও এই নির্বাচনে তাঁদের বেশ সরব থাকতে দেখা যাচ্ছে।
নির্বাচনে সাধারণ সদস্য পদে প্রার্থী হয়েছেন মোরশেদ খান হিমেল। তাঁর প্রযোজিত সবশেষ ছবি পুড়ে যায় মন মুক্তি পায় ২০১৬ সালে। গত চার বছরে তাঁর প্রযোজিত নতুন কোনো ছবি মুক্তির তালিকায় নেই। নিয়মিত প্রযোজনায় না থাকলেও নির্বাচনে থাকা নিয়ে হিমেল বলেন, ‘একেবারেই যে প্রযোজনায় নেই, তা নয়। চলচ্চিত্রের অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। এ কারণে আমার মতো অনেকেই নিয়মিত ছবিতে বিনিয়োগ করছেন না। কিন্তু সারা বছরই কোনো কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত থেকে চলচ্চিত্রের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’
আরেক প্রার্থী মেহেদী হাসান সিদ্দিকী গত সাড়ে চার বছর ছবিতে বিনিয়োগ করেননি। তাঁর সবশেষ প্রযোজিত ছবি রাজা বাবু ২০১৫ সালে মুক্তি পায়। তবে তাঁর দাবি, এর মধ্যে ওয়ানওয়ে নামে একটি ছবিতে যৌথভাবে প্রযোজনায় ছিলেন তিনি। মেহেদী হাসান বলেন, ‘এখানে আমরা যাঁরা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি, সবাই সিনেমার মানুষ। বাইরের কেউ কিন্তু নির্বাচন করছেন না। আর আগে তো নিয়মিতই প্রযোজনা করেছি। বেশ কয়েক বছর ধরে সিনেমার অবস্থা সবারই জানা। বিনিয়োগ করলেই লোকসান। জায়গাটি আগে ঠিক করতে হবে। এ জন্য প্রযোজক সমিতি অতি জরুরি। এখানে নির্বাচন করছি। সমিতি গঠিত হলে অনেক প্রযোজকই প্রযোজনায় ফিরবেন।’
চার বছর আগে মুক্তি পেয়েছে আমার মা আমার অহংকার ছবিটি। এর প্রযোজক শামসুল আলম। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পায় রাত্রির যাত্রী ছবিটি। ছবিটিতে হাবিবুল ইসলাম হাবিবের সঙ্গে সহযোগী প্রযোজক হিসেবে ছিলেন তিনি। তিনিও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রযোজনায় সক্রিয় না হলেও নির্বাচনে সক্রিয় হওয়া প্রসঙ্গে শামসুল আলম বলেন, ‘যাঁরা ছবি বানাচ্ছেন না, তাঁদের যে ছবিতে বিনিয়োগে সামর্থ্য নেই, তা নয়। ইচ্ছা করলে বছরে পাঁচটি ছবি অনায়াসে বানাতে পারেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সিনেমা বানালে বিনিয়োগের দশ ভাগের এক ভাগও ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কম। সবশেষ রাত্রির যাত্রী ছবিতে ৬৫ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে।’
শামসুল আলম আরও বলেন, ‘বর্তমান চলচ্চিত্রের অবস্থা অনিশ্চিত। সেই অবস্থা থেকে ফেরানোর জন্যই নির্বাচন। শুধু নেতা হওয়ার জন্য নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নয়। আমরা একটা প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে সিনেমার সমস্যা সমাধান করতে চাই, নতুন করে প্রযোজনায় আসতে চাই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রযোজক বলেন, ‘এখানে যাঁরা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই নিয়মিত সিনেমা নির্মাণ করেন না। নির্বাচনের আগে তাঁরা হয়তো বলবেন, সমিতিতে আসতে পারলে নিয়মিত সিনেমায় বিনিয়োগ করবেন, সিনেমার উন্নয়নে কাজ করবেন। আমি লিখিত দিতে পারি, এঁদের বেশির ভাগই নেতাগিরি করবেন। নেতা হয়ে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। কারণ, শিল্পী সমিতি কিংবা পরিচালক সমিতির বেশির ভাগ নেতার ক্ষেত্রে সেটাই দেখে আসছি।’
এ ব্যাপারে সাবেক প্রযোজক নেতা ও এবারের প্রার্থী খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, সবাই এমন না। তবে এখানে ভোটারদের ভূমিকা বেশি। যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জিতিয়ে আনতে হবে। তাহলে আর সমস্যা হবে না।’ খোরশেদ আলম খসরু প্রযোজিত মুক্তিপ্রাপ্ত সবশেষ ছবি আরো ভালোবাসবো তোমায় ২০১৫ সালে মুক্তি পেয়েছে।
এদিকে নির্বাচনের বাকি আর সাত দিন। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর থেকেই বিএফডিসির প্রযোজক সমিতির কার্যালয় থেকে শুরু করে কাকরাইল এলাকায় প্রার্থীদের পদচারণ বেড়েছে। সমিতির কার্যালয়ের আঙিনাজুড়ে এখনো প্রার্থীদের পোস্টার-ব্যানার না উঠলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক প্রার্থী ভোট চেয়ে পোস্টার ছেড়েছেন।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক কার্যনির্বাহী পরিষদের ২০১৯-২১ মেয়াদি নির্বাচনে ১৯ সাধারণ সদস্য পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ৪১ জন। ভোটার ১৪০ জন। দুই সহযোগী সদস্য পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ৯ জন। ভোটার ৫৪ জন।