২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ধর্ষণের শিকার এক কিশোরীর অস্কার জয়ের গল্প

লেডি গাগা
লেডি গাগা

লেডি গাগার গ্র্যামি বা গোল্ডেন গ্লোব জয়ের খবর এরই মধ্যে পুরোনো হয়ে গেছে। লেডি গাগা নামটি পড়লেই এখন সবার মনে পড়ে জনপ্রিয় ‘শ্যালো’ গানটির কথা। ২০০ কোটি টাকা মূল্যের হিরার নেকলেস পরে ৯১তম অস্কারের লালগালিচায় দ্যুতি ছড়ানোর গল্প সবাই জানে। সবাই জানে ‘আ স্টার ইজ বর্ন’ নামের একটা চলচ্চিত্র দিয়ে গায়িকা থেকে রীতিমতো হলিউডের নামী নায়িকা হওয়ার গল্পটাও। কিংবা সেরা অভিনেত্রী বিভাগে অস্কার মনোনয়ন পাওয়ার কথা। সেরা মৌলিক গান বিভাগে ‘শ্যালো’ দিয়ে অস্কার জয়ের গল্প অজানা নেই কারও। কিন্তু কেউ কি জানেন এই সাফল্যের পেছনের কথা? কষ্ট, হতাশা আর ব্যথার গল্প? বিভীষিকাময় নির্ঘুম রাতের গল্প? আলোর গল্প তো সবাই করে। এবার বরং একটু অন্ধকারের গল্প শোনা যাক। অন্ধকার জয়ের গল্প।

লেডি গাগার যাত্রা শুরু হয়েছিল দীর্ঘস্থায়ী, দুরারোগ্য ব্যথা, হতাশা আর দুশ্চিন্তা দিয়ে। তিনি যখন ‘ছোটখাটো’ শিল্পী হিসেবে মাত্র যাত্রা শুরু করেছিলেন, তখন তাঁর একজন প্রেমিক ছিলেন। তিনি লেডি গাগাকে বলেছিলেন, ‘তুমি জীবনে কখনো সফল হবে না। কখনো একটা হিট গান দিতে পারবে না। কখনোই গ্র্যামির জন্য মনোনীত হবে না।’

সেই দিন গাগা তাঁকে বলেছিলেন, ‘এমন একটা সময় আসবে, যখন তুমি–আমি একসঙ্গে থাকব না। সেদিন তুমি রেস্তোরাঁয় বসে আমার গান না শুনে বা আমার চেহারা না দেখে এক কাপ কফিও অর্ডার করতে পারবে না। শহরের প্রতিটা রেস্তোরাঁ আর কফিশপে আমার গান বাজবে, আমার ছবিতে ছেয়ে যাবে প্রতিটি বিলবোর্ড আর দেয়াল!’ শুধু বলেই ক্ষান্ত থাকেননি। প্রমাণও করেছেন এই শিল্পী, গীতিকার, অভিনেত্রী আর সমাজসেবক।

লেডি গাগা
লেডি গাগা

লেডি গাগার কোনো স্বাভাবিক শৈশব ছিল না। স্কুলের সহপাঠীরা কখনো গাগাকে তাদের একজন হিসেবে গ্রহণ করতে পারেনি। অদ্ভুত চেহারার জন্য তাঁকে উত্ত্যক্ত করেছে। ‘খারাপ মেয়ে’ বলে মন্তব্য করেছে। তিনি যখন কিশোরী, তখন যৌন নিপীড়নের শিকার হন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে ধর্ষণের শিকার হন অস্কারজয়ী এই শিল্পী। এরপর মারাত্মক হতাশায় ডুবে যান। মেনে নিতে না পারার কষ্ট, কাউকে বলতে না পারার কষ্ট আর ভয়—এসবই তাঁকে দিয়েছিল কেবল বীভৎস অনেক নির্ঘুম রাত। এভাবে কেটে যায় সাত বছর।

এরপর তিনি আবারও যৌন নিপীড়নের শিকার হন এবং দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে যা হয়। তখন নিঃশেষ হয়ে যেতে হতো, নয়তো পুরো শক্তি আর সাহস জড়ো করে সামনে এগোতে হবে। লেডি গাগা যে লেডি গাগাই। তিনি তাই দ্বিতীয়টি করলেন। সমস্ত নিপীড়ন আর হতাশার কথা চিৎকার করে পুরো পৃথিবীকে শুনিয়ে দেন। অনেকটাই হালকা হলেন। অনেক বছর পর সেই রাতে সুন্দর করে ঘুমালেন। সবচেয়ে বেশি গুগল করা শিল্পী হওয়ার গল্প এই ঘুমের পরই লেখা। ইতিহাসে যাঁদের অ্যালবাম সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে, সেই তালিকায় তাঁর নাম উঠেছিল এই ঘুমের পর।

লেডি গাগা
লেডি গাগা

সেসব দিনের কথা সবাই পেয়েছে তাঁর গানে আর বক্তৃতায়। বললেন, ‘আমার মনে হয় সেসব মারাত্মক হতাশা, ভয়ংকর দুশ্চিন্তা আর ভীতসন্ত্রস্ত নির্ঘুম রাতগুলো আমার জীবনটা বদলে দিয়েছে। আমি নিয়মিত হতাশা আর অবসাদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ওষুধ খেতাম। একগাদা ঘুমের ওষুধ না খেয়ে দুই ঘণ্টা ঘুমাতে পারিনি। ডাক্তার বলেছিল, এটা মোটেই ঠিক হচ্ছে না। এই অসুস্থতা গুরুতর স্নায়ুর সমস্যায় রূপ নেয়। তা আমার মানসিক অস্থিরতা ও ব্যক্তিত্বের সংকট তৈরি করে। নিজেকে রক্ষা করার জন্য তখন আয়ুর্বেদিক আর মেডিটেশনের দিকে ঝুঁকে পড়ি। মাঝেমধ্যে গভীরভাবে প্রার্থনায় মগ্ন থেকেছি। সেই জীবনেও গান আর কবিতা আমাকে শান্তি দিয়েছে, কিছু সময়ের জন্য হলেও সবকিছু ভুলিয়ে দিয়েছে। এরপর হঠাৎ একদিন নিজেকে জিজ্ঞেস করলাম, আমি কেন অসুখী? মন জবাব দিল, আমি “না” বলতে পারি না। আমি সারা দিন অমানুষিক পরিশ্রম করি আর অর্থ ও খ্যাতির পেছনে ছুটছি। দিন শেষে আমার নিজেকে একটা “টাকা উৎপাদনের যন্ত্র” ছাড়া কিছুই মনে হয় না। পরদিন থেকে আমি তালিকা তৈরি করি। যে কাজগুলো আমার হৃদয় করতে চায় না, সেগুলোকে “না” বলতে শুরু করি। দেখলাম, দিন শেষে আমি বেশ আনন্দ অনুভব করছি।’ এভাবেই অন্ধকার দিনগুলোর সঙ্গে নিজের যুদ্ধের কথা বলেছেন ২০১৩ সালের বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ‘ফোর্বস’-এর ৪৫ বছরের কমবয়সী সবচেয়ে প্রভাবশালী নারীদের তালিকায় শীর্ষে জায়গা করে নেওয়া এই মার্কিন শিল্পী।

লেডি গাগার মতে, ‘বিজয়ী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো কখনো হাল ছেড়ে না দেওয়া। যদি তুমি স্বপ্ন দেখো, তাহলে সেই স্বপ্নের জন্য যুদ্ধ করো। কতবার তুমি ব্যর্থ হয়েছ, ভেঙে পড়েছ বা হতাশ হয়েছ, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো, কতবার তুমি শক্তি আর সাহস জড়ো করে উঠে দাঁড়িয়েছ, আবারও ঝাঁপিয়ে পড়েছ। হাল ধরেছ বা নিজের পথচলা থামিয়ে দাওনি! নিজের জীবন আমাকে শিখিয়েছে, হতাশা কখনো আমার যোগ্যতাকে খেয়ে ফেলতে পারে না। আমি চরম হতাশাগ্রস্ত অবস্থায়ও নিজের বুকের অনেক গভীরে জ্বলতে থাকা ওই একটা আলোকরশ্মিকে খুঁজে বের করেছি।’