মৃণাল সেনের শেষকৃত্য আজ
বরেণ্য চিত্র পরিচালক মৃণাল সেনের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে আজ মঙ্গলবার বিকেলে। পারিবারিক সূত্রে জানানো হয়েছে, দক্ষিণ কলকাতার কেওড়াতলা মহাশ্মশানে হবে এই শেষকৃত্য। এর আগে সবার শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আজ বেলা আড়াইটা থেকে তাঁর মরদেহ রাখা হবে দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কের কাছে প্রিয়া সিনেমার সামনে। গতকাল সোমবার মৃণাল সেনের একমাত্র ছেলে কুণাল সেন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো থেকে কলকাতায় এসেছেন। এরপর হঠাৎ করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মৃণাল সেনের শেষ ইচ্ছে ছিল, তাঁর মরদেহে কেউ যেন ফুল আর মালা দিয়ে শ্রদ্ধা না জানায়। তাই পরিবার থেকে অনুরোধ করা হয়েছে, কেউ যেন ফুল আর মালা নিয়ে মৃণাল সেনকে শেষ শ্রদ্ধা না জানান। এখানে শ্রদ্ধা জানানোর পর কেওড়াতলা মহাশ্মশান পর্যন্ত শোকযাত্রা হবে। এই শোকযাত্রায় পা মেলাতে আগ্রহী ব্যক্তিদের অনুরোধ করা হয়েছে তাঁর পরিবার থেকে।
গত রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁর ভবানীপুরের নিজ বাসভবনে প্রয়াত হন মৃণাল সেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। তাঁর জন্ম বাংলাদেশের ফরিদপুর শহরে। মৃত্যুর পর বিকেলেই তাঁর মরদেহ ছেলের ফিরে আসার অপেক্ষায় রাখা হয় কলকাতার হিমঘর পিস ওয়ার্ল্ডে। সেখান থেকেই আজ মরদেহ শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে দেশপ্রিয় পার্কের পাশে প্রিয়া সিনেমার সামনে। ৫ জানুয়ারি কলকাতার গোর্কি সদনে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলাদেশের ফরিদপুর শহরে মৃণাল সেনের জন্ম ১৯২৩ সালের ১৪ মে। তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ফরিদপুর শহরে। মৃণাল সেনের মৃত্যুতে অবসান হলো বাংলা চলচ্চিত্রের একটি যুগের। যে যুগের শ্রেষ্ঠ পরিচালকের সম্মান পেয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক আর মৃণাল সেন।
১৯৪৩ সালে ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজে পড়াশোনার সময় মৃণাল সেন চলে আসেন কলকাতায়। তারপর এখানে স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন। বাংলাদেশ ছাড়ার পর সেই তাঁর স্মৃতিবাহী বাংলাদেশে তিনি প্রথম পা রেখেছিলেন ১৯৯০ সালে।
বহু নামী সিনেমা তৈরির কারিগর ছিলেন এই মৃণাল সেন। ১৮টি ছবির জন্য পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। পেয়েছিলেন ১২টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার। মৃণাল সেন বাংলা, হিন্দি, ওড়িয়া ও তেলেগু ভাষায় ছবি নির্মাণ করেন। তাঁর প্রথম ছবি ‘রাতভোর’ নির্মিত হয় ১৯৫৫ সালে। এর পরের ছবি ছিল ‘নীল আকাশের নিচে’। তিনি ২৬টি ছবি নির্মাণ করেছেন। নির্মাণ করেছেন ১৪টি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি আর চারটি প্রামাণ্যচিত্র। এই মৃণাল সেনকে নিয়েই কলকাতায় নির্মিত হয়েছে পাঁচটি তথ্যচিত্র।
মৃণাল সেনের নির্মিত ছবির মধ্যে রয়েছে ‘কলকাতা ৭১’, ‘ইন্টারভিউ’, ‘পদাতিক’, ‘একদিন প্রতিদিন’, ‘মৃগয়া’, ‘আকালের সন্ধানে’, ‘তাহাদের কথা’, ‘কোরাস’, ‘ভুবন সোম’, ‘খারিজ’, ‘বাইশে শ্রাবণ’, ‘পরশুরাম’, ‘খণ্ডহার’ ইত্যাদি। পেয়েছেন আন্তর্জাতিক পুরস্কারও। মস্কো, বার্লিন, কান, শিকাগো, মন্ট্রিয়েল, ভেনিস ও কায়রো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। তাঁর নির্মিত ছবি বার্লিন, ভেনিস, মস্কো, চেকোশ্লোভাকিয়া, শিকাগো, মন্ট্রিয়েল, স্পেন, ইতালি, তিউনিসিয়া ও কলম্বোর চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়েছে। তিনি পেয়েছেন ভারতের বিনোদন জগতের সর্বোচ্চ সম্মান দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারসহ (২০০৫) ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মশ্রী (১৯৮১)। পেয়েছিলেন ফরাসি সরকারের ‘কমান্ডার অব দ্য অর্ডার অব আর্টস লেটারস’ সম্মান।