'তাঁদের কাছে বন্ধুত্বের চেয়ে টাকা মুখ্য'
>আমি তানযীর তুহিন, ব্যক্তিগত কারণে শিরোনামহীন ছাড়ছি, কিন্তু গান নয়। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এই স্ট্যাটাস দিয়েছেন অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড শিরোনামহীনের কণ্ঠশিল্পী তানযীর তুহিন। কিন্তু কেন? এরপর তাঁর সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করা হয়। অবশেষে আজ শনিবার দুপুরে তিনি কথা বলেন প্রথম আলোর সঙ্গে।
তুহিন আপনি কেমন আছেন?
গত ২১ সেপ্টেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলাম। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি ছিলাম। হার্টের রক্তনালিতে ছোট্ট একটা ব্লক পাওয়া গেছে। অস্ত্রোপচার লাগেনি। চিকিৎসক বলেছেন ওষুধেই ঠিক হয়ে যাবে। হাসপাতালে চার দিন ছিলাম। আমাকে এক মাস চিকিৎসকের পরামর্শে চলতে হবে।
আপনি তো সংগীতশিল্পী। মঞ্চে গান না গাওয়ার ব্যাপারে চিকিৎসক কিছু বলেছেন?
ওই যে বললাম, এক মাস একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। তবে গান একেবারেই গাওয়া যাবে না, এমন কিছু মোটেও বলেননি।
শিরোনামহীন খুবই জনপ্রিয় ব্যান্ড। নিয়মিত শো থাকে। এ ক্ষেত্রে ব্যান্ড কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে?
এ সময় ব্যান্ডের অন্য সদস্যদের আচরণে আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি। আমি যখন অসুস্থ, আমাকে সুস্থ করার জন্য আমার পরিবার ছুটছে, তখন ব্যান্ডের সদস্যদের কাছে বন্ধুত্বের চেয়ে টাকা মুখ্য হয়ে যায়। তারা একটি শোও মিস করতে চায়নি। তাদের কত টাকার দরকার? তারা ভেবেছে আমি সুস্থ হব না, মঞ্চে আর গান গাইতে পারব না। আমার জায়গায় আরেকজন কণ্ঠশিল্পীকে যুক্ত করে তারা।
আপনি ব্যান্ডের অন্য সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন?
হ্যাঁ, আমি তাদের কাছে এক মাস সময় চেয়েছিলাম। এই এক মাস শো না করলে শিরোনামহীন ব্যান্ডের কী এমন ক্ষতি হতো? কিছু টাকা নাহয় কম আয় হতো। এটা কি আমাদের এত বছরের সম্পর্কের চেয়ে খুব বেশি কিছু? কেউ এতটুকু ছাড় দিতে চায়নি।
শিরোনামহীন ব্যান্ডের সঙ্গে আপনি কবে থেকে যুক্ত?
১৯৯৬ সালে। আমি তখন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আমি ‘শিরোনামহীন’ ব্যান্ডের ফাউন্ডার মেম্বার। দীর্ঘ ২১ বছর আমরা একসঙ্গে ছিলাম। আমি এই সময় নিজের কথা ভাবিনি, পেশার কথা ভাবিনি, পরিবারের কথা ভাবিনি। আমার সামনে ছিল ব্যান্ড, ভক্ত আর শ্রোতা।
শুনেছি, ব্যান্ডের সদস্যরা আপনার বাসায় মিটিং করেছেন।
২ অক্টোবর তারা আমার বাসায় এসেছিল। তখন কিছু কথা হয়েছে।
আপনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত?
হ্যাঁ, আমি শিরোনামহীন ব্যান্ড ছেড়ে দিয়েছি। আমি যদি এখন ব্যান্ডে থাকি, তাহলে আমাকে কিন্তু আরেকজন কণ্ঠশিল্পীকে সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে। এটা আমি মেনে নিতে পারব না।
যতটুকু জানি, নতুন যুক্ত হয়েছেন ইশতিয়াক। তিনি নাকি ইংরেজি গানে দক্ষ।
কিছু করপোরেট শোতে ইংরেজি গানের চাহিদা থাকে। এর সংখ্যা মোটেও খুব বেশি না। তবে এসব করপোরেট শোতে টাকা অনেক বেশি পাওয়া যায়। হাতেগোনা কয়েকটি শোর জন্য আমরা কি বিশাল ভক্ত আর শ্রোতার কথা ভুলে যাব? এটা ব্যান্ডের কেউ ভেবে দেখেনি।
শিরোনামহীন থেকে বের হয়ে আপনি নতুন কোনো ব্যান্ড গড়ার কথা ভাবছেন?
এটা ঠিক আমি শিরোনামহীন ব্যান্ডের সঙ্গে আর নেই। এই ব্যান্ড ভেঙে গেছে। সামনে কী করব, তা এখনই বলতে চাইছি না। তবে আমি গান নিয়েই থাকব।
শিরোনামহীন ব্যান্ডে আপনার নিজের কোনো গান ছিল?
বেশির ভাগ গানই আমার। আমি চাই না, আমার গান অন্য কেউ করুক। আমার গান আমিই করব। এসব গানের সম্পূর্ণ স্বত্ব আমার। যেসব প্রতিষ্ঠান শিরোনামহীনের গান নিয়ে ব্যবসা করছে, এসব নিয়ে কাজ করছে, আমি সবার কাছে আইনি নোটিশ পাঠাব। তাদের সঙ্গে কথা বলব। আশা করছি, সবাই আমাকে সহযোগিতা করবে।