গত বছরের শেষভাগে পরীমনির ফেসবুক পোস্ট ধরে তাঁর সঙ্গে শরীফুল রাজের সম্পর্কে ফাটলের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। সেটি আরও স্পস্ট হয় বছরের শেষ দিনে এসে। গতকাল বছরের প্রথম দিনেও আলোচিত ছিলেন তাঁরা।
গত শুক্রবার রাতে পরীমনি এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন, ‘আমি আজ রাজকে আমার জীবন থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম এবং নিজেকেও মুক্ত করলাম একটা অসুস্থ সম্পর্ক থেকে। জীবনে সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে জরুরি আর কিছুই নাই।’ অভিনেত্রীর এই পোস্ট থেকেই শরীফুল রাজের সঙ্গে তাঁর দাম্পত্য জীবনের যে ইতি ঘটছে, সেটি স্পষ্ট হয়। পরে শনিবার সকালে পরীমনি প্রথম আলোকে জানান, সন্তানকে নিয়ে তিনি বসুন্ধরার বাসা থেকে বের হয়ে গেছেন। শিগগিরই রাজকে বিচ্ছেদের নোটিশ পাঠাবেন।
পরীমনির ফেসবুক পোস্ট নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে শনিবার রাতে খবর আসে, রাজ ও পরীমনির সম্পর্কের বরফ গলেছে; তাঁরা এখন বসুন্ধরার বাসায় একসঙ্গেই আছেন। পরীমনি ও রাজের অনুসারীরা এ খবরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেও রাত পোহাতেই বদলে যায় দৃশ্যপট। আগের ঘটনার রেশ ধরেই সারা দিনই খবরে ছিলেন পরীমনি ও রাজ। সকাল ও বিকেলে আলাদা স্ট্যাটাস দিয়েছেন পরী। দিনটি শুরুই হয় পরীর স্ট্যাটাস দিয়ে—এবার রক্তারক্তি অবস্থা! রোববার ভোর পাঁচটায় ছোপ ছোপ রক্তমাখা বালিশ ও বিছানার চাদরের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে পরীমনি সংবাদ সম্মেলনে আসার ঘোষণা দেন। মন্তব্যের ঘরে সবাই জানতে চাইছেন, কী ঘটেছে? বিষয়টি নিয়ে দিনভর নানা নাটকীয়তার মধ্যে চুপ ছিলেন শরীফুল রাজ। গতকাল বেলা দুইটায় প্রথম আলোকে শরীফুল রাজ বলেন, ‘আমি আসলে এসব ইস্যুতে কিছুই বলতে চাই না। কী হচ্ছে, এসবের কিছুই আমি জানিও না। জানতেও চাই না। আমি বাসায় আছি। সারা রাত ঘুমাইনি। এখন ঘুমাচ্ছি, ঘুমানোর চেষ্টা করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে না এলেও গতকাল বিকেলে ফেসবুকে আরেকটি পোস্টে পরীমনি লিখেছেন, ‘একটা সম্পর্কে পুরোপুরি সিরিয়াস বা খুব করে না চাইলে একটা মেয়ে বাচ্চা নেওয়ার মতো এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারে না কখনোই। আমার জীবনের সবটুকু চেষ্টা যখন এই সম্পর্কটাকে ঠিকঠাক টিকিয়ে রাখা, তখনই আমাকে পেয়ে বসা হলো। যেন শতকোটিবার যা ইচ্ছে তাই করলেও সব শেষে ওই যে আমি মানিয়ে নিই, এটা রীতিমতো দারুণ এক সাংসারিক সূত্র হয়ে দাঁড়াল। আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, আমাদের এই সম্পর্ক এত দিন আমার অ্যাফোর্টে টিকে ছিল শুধু।’
রাজ্য এবং রাজের মঙ্গলের জন্যই আলাদা হয়ে গেছেন বলেও পোস্টে উল্লেখ করেন পরীমনি। এরপর সবার নজর ছিল রাজ কী বলেন সেদিকে। কিন্তু রাজ আর বিষয়টিতে মুখ খোলেননি। ফেসবুকে পোস্ট তিনি দিয়েছেন ঠিকই। তবে গতকাল বিকেলে ছেলে রাজ্যকে কোলে নিয়ে তোলা একটি ছবি দিয়ে কেবল ভক্তদের নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাজ।
এফডিসিতে জমেছিল আড্ডা
দুপুর গড়িয়ে শীতের বিকেল নামতেই জমে ওঠে আড্ডা, পরিচালক সমিতির সামনে পাওয়া গেল সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি কাজী হায়াৎকে। সমিতির আঙিনায় চেয়ার পেতে আড্ডায় মেতেছেন পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, পরিচালক ও চিত্র সম্পাদক আবু মুসা দেবু, পরিচালক দেওয়ান নজরুলসহ আরও অনেকে। চায়ে চুমুক দিতে দিতে সিনেমার হালচাল নিয়ে আলাপ করছেন তাঁরা।
দিন দুয়েক আগেই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন কাজী হায়াৎ। আড্ডার ফাঁকে জানালেন, এফডিসিতে এলে যেন প্রাণ ফিরে পান তিনি। তাই বছরের প্রথম দিন ছুটে এসেছেন পরিচালক সমিতিতে। এসেই কয়েকজনকে পেয়ে আড্ডার মেতে কখন সন্ধ্যা নেমে গেল, বুঝতেই পারেননি।
শুধু পরিচালক সমিতি নয়, এফডিসির ক্যানটিনের সামনেও পরিচালক, অভিনয়শিল্পীদের জটলা। বছরের প্রথম দিনে একে অপরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন তাঁরা। ক্যানটিনের সামনের আড্ডা ফেলে ৯ নম্বর ফ্লোরের সামনে গিয়ে দেখা গেল কর্মব্যস্ততা। একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুষ্ঠানের জন্য সেট নির্মাণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কয়েকজন।
এফডিসির ২ নম্বর ফ্লোরের সামনে চাদর সিনেমার সেট নির্মাণ করছেন কয়েকজন কর্মী। তাঁরা বলেন, কয়েক দিন পরই সিনেমাটির দৃশ্যধারণ শুরু হবে। শেষ মুহূর্তের কাজ সেরে ফেলছেন তাঁরা। পরিচালক জাকির হোসেনের পরিচালনায় সিনেমায় অভিনয় করছেন শবনম বুবলী ও সাইমন।
এফডিসির প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে দেখা গেল, একে অপরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন কর্মীরা। দুই দিনের ছুটির পর কাজে ঢিলে ভাব থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মচঞ্চলতা বাড়তে থাকল।
স্টুডিওপাড়ায় ব্যস্ততা, সিনেমা হলে ভিড়
দেখা গেল কাকরাইল সিনেমাপাড়া, নিকেতনের স্টুডিওগুলোও সরগরম। মগবাজারের গানের স্টুডিওগুলোতেও রেকর্ডিংয়ের ব্যস্ততা। সিনেমা দেখতে ঢাকার বসুন্ধরা শপিং মলের স্টার সিনেপ্লেক্সে ভিড় করতে দেখা গেছে দর্শকদের।
স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ জানান, বছরের প্রথম দিন অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার সিনেমাটি দেখছেন দর্শকেরা। দর্শকের এখন সিনেমা দেখার অভ্যাস বেড়েছে, বছরের প্রথম দিন দর্শকের উপস্থিতিও ছিল ভালো।
নতুন বছরে মঞ্চনাটক
সিনেমার বাইরে মঞ্চনাটক দেখতেও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে ভিড় করেছেন দর্শক, জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে প্রদর্শিত হয়েছে চারুনীড়ম থিয়েটারের প্রযোজনা আরশোলা, রঙের দিন ও শরতের মেঘ। নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন গাজী রাকায়েত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বছরের প্রথম দিনে দর্শক সমাগম ভালো হয়েছে, টিকিট বিক্রিতে ভালো সাড়া পেয়েছি।’
টেনেসি উইলিয়ামের ‘দ্য লেডি অব লার্কসপুর লোশন’ অবলম্বনে ‘আরশোলা’, আন্তন চেকভের ‘দ্য বিয়ার’ অবলম্বনে ‘শরতের মেঘ’ ও ‘সোয়ান সং’ অবলম্বনে ‘নানা রঙের দিন’ নাটক দুটির অনুবাদ করেছেন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়।
এছাড়াও নাট্যশালাল মূল মিলনায়তনে ছিল নৃত্যশিল্পী বুলবুল চৌধুরীর ১০৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা ও নৃত্যানুষ্ঠান।
ব্ল্যাক ওয়ার’ সিনেমার ট্রেলার প্রকাশ
গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকার একটি ক্লাবে ‘মিশন এক্সট্রিম’–এর সিকুয়েল ‘ব্ল্যাক ওয়ার’ সিনেমার ট্রেলার প্রকাশ করা হয়েছে। সানী সানোয়ার ও ফয়সাল আহমেদ পরিচালিত ছবিটি ১৩ জানুয়ারি মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। ২০২১ সালের ৩ ডিসেম্বর মুক্তি পায় মিশন এক্সট্রিম–এর প্রথম পর্ব।