সমরেশ মজুমদার হয়ে ওঠার গল্প শোনালেন
দুই বাংলার জনপ্রিয় লেখক সমরেশ মজুমদারের শুরুটা ধারাবাহিক ব্যর্থতা দিয়ে। শনিবার দুপুরে ভক্তদের শোনালেন সেই গল্প। সমরেশ মজুমদারেরা গ্রুপ থিয়েটার করতেন কলকাতায়। মৌলিক নাটকের দরকার হলে বন্ধুরা অনুরোধ করেন নাটক লেখার জন্য। সমরেশ মজুমদার লিখলেন নাটক। পরদিন সেই নাটক সবাইকে শোনালেন। সবার মুখ গম্ভীর। আর যা–ই হোক, নাটক হয়নি। তখন এক বন্ধু বললেন, ‘তুই আগে এক কাজ কর, গল্পটা আগে লিখে ফেল। তারপর নাট্যরূপ দে।’ সমরেশ মজুমদার একটা গল্প লিখলেন। সবাই বললেন, পড়ে খুব ভালো লাগছে, কিন্তু নাটক হবে না।
রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের অষ্টমতলায় অবস্থিত বাতিঘরের মঞ্চে বসে এ কথা যখন বলছিলেন, তখন সেখানে ভক্তদের উপচে পড়া ভিড়। লেখকের কথা তন্ময় হয়ে শুনলেন সবাই। হাসলেন, করতালিতে অভিবাদন জানালেন।
বাতিঘরের আয়োজনে ‘আমার জীবন আমার রচনা’ শীর্ষক আলাপচারিতায় শুরুতে আরও জানালেন কলকাতার বিখ্যাত দেশ পত্রিকায় প্রথমবার পাঠানো তাঁর লেখা ছাপা হওয়ার গল্পটিও। বেশ কয়েকবার যোগাযোগের পর সম্পাদক লেখাটা ছাপা হবে আশ্বাস দিয়েছিলেন। আশ্বাস পেয়ে খুশিতে সাত বন্ধুকে কফি হাউসে খাইয়েছিলেন। কিন্তু পরের সংখ্যায় সেটি ছাপা হয়নি। সমরেশ স্মৃতিচারণা করেন, ‘এরপর পাবলিক ফোন থেকে দেশ পত্রিকার তৎকালীন সম্পাদক বিমল করকে কল করে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করলাম।’ পরে কাগজে গল্পটা ছাপা হয়। ১৫ টাকা সম্মানী পেয়ে সেটাও বন্ধুদের খাওয়াতে হলো। সেই খাওয়ার লোভে বন্ধুরা তাঁকে আবারও লিখতে বলেন। সেই কফি খাওয়া ও খাওয়ানোর লোভ থেকেই সাহিত্যিক হিসেবে পদার্পণ করেন সমরেশ মজুমদার।
দীর্ঘ এই আড্ডায় বারবার উঠে আসে তাঁর উপন্যাসত্রয়ী উত্তরাধিকার, কালবেলা ও কালপুরুষ প্রসঙ্গ। উপন্যাসত্রয়ী নিয়ে তিনি বললেন, এই তিনটির মধ্যে প্রথম দুটি অনেকটা জোর করে লেখা। মন থেকে লেখেননি। বলা যেতে পারে, বাধ্য হয়েই লিখেছেন। উত্তরাধিকার প্রকাশের পর পাঠকদের আগ্রহের কথা ভেবে প্রকাশক সাগরময় ঘোষের নির্দেশে বাকি দুই পর্ব লেখা হয়।
উঠে আসে সাতকাহন–এর দীপাবলির কথাও। বললেন, ‘আমার বাড়ির পাশে বারো বছরের একটি মেয়েকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়। তবে বিয়ের আট দিন পর বিধবা হয়ে মেয়েটি ফিরে আসে। এখান থেকে দীপাবলি চরিত্রটি তৈরি হয়।’ আত্মজীবনী লেখা নিয়ে কী ভাবছেন সমরেশ? এমন প্রশ্নের জবাবে লেখক অকপটে বললেন, আত্মজীবনী লিখলে ঘরে এবং বাইরে শত্রু তৈরি হবে। এ ‘কুকার্য’ হবে না বলেও জানালেন তিনি। তবে বাংলাদেশ নিয়ে একটি দীর্ঘ উপন্যাস লেখার খুব ইচ্ছে তাঁর, ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট থেকে শুরু করে’ ৭১ সাল পর্যন্ত সময়কাল নিয়ে সেই উপন্যাস।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সবাইকে স্বাগত জানান বাতিঘরের কর্ণধার দীপঙ্কর দাস। লেখককে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। সাবলীল সঞ্চালনা করেন এম আলমগীর।