তারকা
রাজ–পরীর ঈদ
পরীমনি ও শরিফুল রাজের প্রেমের গল্প সিনেমাকেও হার মানায়। এক ছাদের নিচে এবার এই তারকা দম্পতির প্রথম ঈদ। ঈদটি কেমনভাবে রাঙিয়ে তুলবেন তাঁরা? তাঁদের সঙ্গে কথা বলে সেই গল্প জানাচ্ছেন মনজুর কাদের।
রাবেয়া ও রমিজের কবে দেখা হয়েছিল? প্রথম দেখাতেই কি নীরবে এসেছিল প্রেম? সিনেমার প্রেম দেখেই কি বাস্তবে প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন তাঁরা? প্রশ্নের পর প্রশ্ন। শুরুতেই এত প্রশ্নের ধাক্কায় তাঁরা নাকাল হবেন কি, আলাদা আলাদাভাবে দুজনকে যখন ফোন করা হলো, ফোনের ও প্রান্ত থেকে দুজনের কণ্ঠেই হাসির শব্দ শোনা গেল।
সিনেমার চেয়ে বেশি বাস্তব রাবেয়া–রমিজের প্রেমকাহিনি। মজার ব্যাপার হলো, রাবেয়া–রমিজ আদতে সিনেমারই চরিত্র। চরকির প্রযোজনায় গিয়াস উদ্দীন সেলিম পরিচালিত গুণিন চলচ্চিত্রে প্রথম দেখাতেই প্রেম হয়ে গিয়েছিল গ্রামের তরুণ–তরুণী রাবেয়া ও রমিজের। একইভাবে সিনেমায় এই রাবেয়া ও রমিজ চরিত্র রূপদানকারী পরীমনি ও শরিফুল রাজও প্রথম দেখাতেই একে অপরের ভেতর ডুবে গিয়ে নিজেদের নির্ভরতার চাবি খুঁজে পেয়েছিলেন পরস্পরের চোখে। বছরখানেক আগেও পরীমনি ও রাজ একে অন্যের কাছে ছিলেন একেবারেই অপরিচিত। তবে এখন একই ছাদের নিচে বসে দুজনই গেয়ে চলেছেন, ‘আমি তোমারে পেয়েছি অজানা সাধনে।’ এই দুই তারকার কাছে আসার গল্প সিনেমাকেও হার মানায়। সেসব গল্প এখন সবারই জানা, গুণিন সূত্রে দুজনের পরিচয় ও পরিণয় হলেও এ সিনেমা মুক্তির আগেই বিয়ে করেন তাঁরা। তাঁদের মা–বাবা হওয়ার খবরও প্রকাশ্যে আসে। এবার তাঁদের যৌথ জীবনের প্রথম ঈদ। ঈদটি কেমনভাবে উদ্যাপন করবেন এই দম্পতি?
শরীফুল রাজ বললেন, ‘অ–নে–ক পরিকল্পনা আছে আমাদের।’
ঈদ নিয়ে পরীরও পরিকল্পনার কমতি নেই। পয়লা বৈশাখে নৌবিহার করে সবাইকে যেভাবে চমকে দিয়েছেন, এই ঈদেও হয়তো ভক্তদের সেভাবেই চমকে দেবেন। রাজ–পরীর ঈদ উদ্যাপনের বিস্তারিত বৃত্তান্ত জানার আগে তাঁদের সাম্প্রতিক দিনকালেও খানিকটা ঢুঁ মারা যাক।
মাতৃত্বকালীন অবসর পার করছেন বলে আপাতত সব ধরনের কাজ ছুটি নিয়েছেন পরীমনি। আর ঈদের দশ দিন আগে থেকেই কাজলরেখা সিনেমার শুটিংয়ে নেত্রকোনায় ছিলেন শরীফুল রাজ। ফিরেছেন কয়েক দিন আগে। তবে এত দিন দূরে থাকলেও মনটা তাঁর পড়ে ছিল ঘরেই, পরীর কাছে। তাঁর অনাগত সন্তানের মা পরী। এই সময়টায় তাঁর সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা খুবই দরকার। রাজ সেটি করেছেনও বটে। বললেন, ‘বাসায় এখন আম্মা আছেন। এই সময়টায় পরীর দেখভাল তিনিই করছেন। আর ঘরে মা থাকায় আমিও স্বস্তিতে শুটিং করতে পারছি।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছেলে শরীফুল রাজ এখন ঢাকায় থিতু হয়েছেন। অন্যদিকে পিরোজপুরের মেয়ে পরীমনির বর্তমান আবাসও ঢাকা। তাঁদের জীবনে ঈদের খতিয়ান এত দিন ছিল আলাদা আলাদা। তবে এটি তাঁদের প্রথম ঈদ বলেই কি ঈদ উদ্যাপনে দুজনের উৎসাহ একটু ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে! রাজের কথা শুনে তো তা–ই মনে হয়, ‘এত দিন মা–বাবার সন্তান হয়ে ঈদ পালন করেছি। আর এখন নিজের বউয়ের জন্য ঈদ করব। অনাগত সন্তানের প্রতীক্ষায় আছি। কবে আমরা সন্তানের মুখ দেখব। উফ! তাই এটা আমার জীবনের অন্যরকম এক ঈদ।’
পাঠক, ঈদ নিয়ে শরিফুল রাজের উচ্ছ্বাস আপনাকেও নিশ্চয়ই স্পর্শ করছে!
ঈদ নিয়ে রাজের মতো পরীমনির উচ্ছ্বাসও চোখে পড়ার মতো। তিনি জানান, ‘আসলে ঈদের আনন্দ ছোটবেলার জন্যই। তখন ঈদের দিনে নতুন পোশাক পরে সাজুগুজু করে ঘুরে বেড়াতাম, সালামি পেতাম। মজার মজার খাবার খেতাম। তবে আমার ঈদ এখন বদলে গেছে। আগে ঈদে সালামি পেতাম আর এখন ঈদে সালামি দিতে হয়। এবারে আমার ঈদ তো অন্য সবার চেয়ে আলাদা। ঈদের সময় এবার রাজকে নিয়ে হারিয়ে যাব... হি হি হি।’
তাঁর হাসির শব্দের মধ্যেই ফোনের এ প্রান্ত থেকে জানতে চাইলাম, ‘কোথায় হারাবেন, কোন সে স্থানে?’
‘এটা তো টপ সিক্রেট’ প্রশ্ন করতেই বললেন পরীমণি। কিন্তু সেই অন্য ফোনে ‘সিক্রেট’ মুহূর্তেই ফাঁস করে দিলেন রাজ, ‘ঈদের পরও আমাকে টানা শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে। তাই এ সময় কয়েকটা দিনের জন্য ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে কোথায় যাব, এখনো ঠিক করিনি। আমাদের সব সিদ্ধান্ত হুট করে নেওয়া হয়। এই ঈদেও হয়তো তেমনটাই হবে। দেশের বাইরে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু দুজনের শিডিউল মেলানো মুশকিল। তাই দেশের মধ্যে নিরিবিলি কোথাও, প্রকৃতির কাছাকাছি কয়েকটা দিন কাটাব হয়তো।’
বিয়ের পর এই তারকা দম্পতির জীবনে এসেছে বড় পরিবর্তন। বদলে যাওয়ার বিষয়টি রাজ খোলাসা করেন এভাবে, ‘আগে একা ছিলাম। জীবন খুব গোছালো ছিল না। এখন মনে হচ্ছে জীবনে একটা দায়িত্ব এসেছে। আমাদের দুজনেরই জন্যই এটা যেন দায়িত্বময় ঈদ, ভালোবাসার ঈদ। পরী মা হবে, একটা দারুণ জার্নির মধ্য দিয়ে সে দিন পার করছে। সঙ্গে থেকে আমিও তাঁকে আনন্দে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
সেই আনন্দকে আরেকটু রাঙিয়ে দিতে এই ঈদে পরীমণিকে শাড়ি উপহার দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন রাজ। ‘কী উপহার দেবেন?’ প্রশ্নের জবাবে এর সঙ্গে তাঁর সরস উত্তর ছিল, ‘অনেক অনেক ভালোবাসা জমা রেখেছি। এটাই দেব। একবুক ভালোবাসাই চায় পরীমনি।’
টানা শুটিংয়ের কারণে ঘোরাঘুরি করে কেনাকাটার সুযোগ খুব একটা নেই। তাই চাঁদরাতেই সব ধরনের কেনাকাটা সারবেন বলে জানান শরিফুল রাজ। আর পরীমনি জানান, এবার রাজ, নানাভাই ও শ্বশুর–শাশুড়ির পছন্দের খাবার রান্না করেবেন। আর সবার জন্য নিজের পছন্দের পোশাকও কিনবেন। তবে কাকে কী দেবেন, বরাবরের মতো সেটি সারপ্রাইজ হিসেবেই রেখে দিতে চান এই ঢালিউডকন্যা।
ঈদ যে এ বছর রাজ–পরীর সংসারে নতুন আলোর ঝলক নিয়ে এসেছে, তাতে আর সন্দেহ কী!