ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক ভিটা সংরক্ষণের দাবিতে মানববন্ধন
বরেণ্য চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক ভিটা স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার রাজধানীর দারুস সালামে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের (বিসিটিআই) সামনে প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্তনী সংসদ এ কর্মসূচির আয়োজন করে। দিনব্যাপী এ কর্মসূচিতে ছিল মানববন্ধন, আলোচনা ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন।
মানববন্ধনে প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্তনী সংসদের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দ, বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী ছাড়াও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম হামিদ ও চলচ্চিত্র শিক্ষক হায়দার রিজভি উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধনে ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক ভিটা সংরক্ষণের যৌক্তিকতা ও প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন বক্তারা।
সভায় বক্তারা বলেন, ঋত্বিক ঘটকের চলচ্চিত্রে এই বাংলাদেশের কথা বারবার নানাভাবে উঠে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মানুষের পাশে, বাংলাদেশের পাশে তিনি সোচ্চার হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো বাংলা শুধু নয়, বৈশ্বিক চলচ্চিত্রের প্রেক্ষাপটেই ঋত্বিক ঘটক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তিত্ব। এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে এই স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ জাতীয় দায়িত্বের পর্যায়ে পড়ে।
উল্লেখ্য, ঋত্বিক ঘটকের জন্ম ঢাকার ঋষিকেশ দাস লেনে। তাঁর জীবনের একটি বড় অংশ কেটেছে পৈতৃক বাড়ি রাজশাহীতে। সেখানেই তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহী কলেজে পড়াশোনা করেন। সে সময় ‘অভিধারা’ নামে সাহিত্যের কাগজ সম্পাদনা করেছেন ঋত্বিক। তাঁকে ঘিরেই তখন রাজশাহীতে সাহিত্য ও নাট্য আন্দোলন বেগবান হয়। ওই বাড়িতে থেকেছেন ঋত্বিক ঘটকের ভাইঝি বরেণ্য কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী। অথচ সাইকেল গ্যারেজ তৈরির জন্য বহু স্মৃতিবিজড়িত এই বাড়ি ভেঙে ফেলছে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। ১৯৮৯ সালে এরশাদ সরকার এই বাড়ির ৩৪ শতাংশ জমি রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজকে ইজারা দিয়েছিল।
বিসিটিআই আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা বাংলাদেশের প্রতি ঋত্বিক ঘটকের মমত্বের নানা উদাহরণ টেনে বলেন, সরকারের কাছ থেকে ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক ভিটা স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে মর্যাদা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা এই শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপগুলো চালিয়ে যাবেন। প্রয়োজনে ঋত্বিক ঘটকের বাড়ির সামনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনের পরিকল্পনাও তাঁদের রয়েছে।
মানববন্ধন শেষে বিসিটিআই মিলনায়তনে প্রদর্শিত হয় ঋত্বিক ঘটক নির্মিত ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ চলচ্চিত্রটি। চলচ্চিত্র প্রদর্শন শেষে ঋত্বিক ঘটকের জীবন ও কর্ম নিয়ে এক মুক্ত আলোচনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি সমাপ্ত হয়।