করোনা মহামারিতে স্কুল বন্ধ থাকায় বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা তাদের জীবনের সম্ভাব্য উপার্জনের ১৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে, যা বর্তমান বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় ১৪ শতাংশ।
গত সোমবার বিশ্বব্যাংক, ইউনেসকো ও ইউনিসেফ প্রকাশিত ‘দ্য স্টেট অব দ্য গ্লোবাল এডুকেশন ক্রাইসিস: আ পাথ টু রিকভারি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গত বছর এ ক্ষতির পরিমাণ অনুমান করা হয়েছিল ১০ ট্রিলিয়ন ডলার।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মহামারি করোনার আগে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ৫৩ শতাংশ শিশু ‘লার্নিং পোভার্টি’র মধ্যে ছিল। করোনায় দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকায় এবং স্কুল বন্ধের সময় অনলাইনে যথাযথভাবে পাঠদানে ব্যর্থতার কারণে এ হার বর্তমানে ৭০ শতাংশে পৌঁছেছে।
শিক্ষা খাতে এ পর্যন্ত সরকার প্রণোদনা প্যাকেজের ৩ শতাংশেরও কম বরাদ্দ করেছে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি পুষিয়ে দিতে দ্রুত আরও তহবিলের প্রয়োজন।
বিশ্বব্যাংকের বৈশ্বিক শিক্ষাবিষয়ক পরিচালক জেইম সাভেদ্রা বলেন, কোভিড-১৯ সংকট সারা বিশ্বে শিক্ষাব্যবস্থাকে স্থবির করেছে। ২১ মাস পরও অনেক স্কুল এখনো বন্ধ আছে। লাখো শিশুর পড়াশোনা বন্ধ রয়েছে, অনেকে হয়তো আর স্কুলে না-ও ফিরতে পারে। শিশুদের পড়াশোনার এ ক্ষতি নৈতিকভাবে গ্রহণ করার মতো নয়। লার্নিং পোভার্টির হার যে হারে বাড়ছে, তা এ প্রজন্মের শিশু ও তরুণদের পরিবার, বৈশ্বিক অর্থনীতির উৎপাদনশীলতা ও উপার্জনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিম্ন আয়ের পরিবারের শিশু, প্রতিবন্ধী শিশু ও মেয়েশিশুদের তাদের সমবয়সীদের তুলনায় অনলাইনে পড়াশোনার সুযোগ কম। প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ ও ইলেকট্রনিক ডিভাইসের অপ্রাপ্তি ও বৈষম্যের কারণে তারা এ সুযোগ কম পায়।
শিশুশিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বড়দের তুলনায় অনলাইনে পড়াশোনার সুযোগ কম ছিল। এ কারণে তাদের পড়াশোনা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বিশেষ করে প্রাক্-প্রাথমিক শিশুদের মধ্যে তা মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।
সমাজের প্রান্তিক বা দুর্বলদের মধ্যে এর প্রভাব বেশি পড়েছে। ঘানা, মেক্সিকো ও পাকিস্তানের মতো দেশের নিম্ন আর্থসামাজিক অবস্থার শিক্ষার্থীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিক প্রমাণ মেয়েদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ক্ষতির দিক ইঙ্গিত করে।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সারা বিশ্বে স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন শিক্ষার্থীর শিক্ষা ব্যাহত হয়েছে এবং লিঙ্গবৈষম্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
ইউনিসেফের শিক্ষা পরিচালক রবার্ট জেনকিন্স বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সারা বিশ্বে স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন শিক্ষার্থীর শিক্ষা ব্যাহত হয়েছে এবং লিঙ্গবৈষম্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে। কিছু দেশে আমরা দেখেছি, সেখানে মেয়েদের পড়াশোনায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে মেয়েদের শিশুশ্রম, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, বাল্যবিবাহের ঝুঁকি ও অকাল গর্ভাবস্থা বাড়ছে। এ প্রজন্মের এমন ক্ষতি পুষিয়ে দিতে অবশ্যই স্কুলগুলো আবার খুলে দিতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষা খাতে এ পর্যন্ত সরকার প্রণোদনা প্যাকেজের ৩ শতাংশেরও কম বরাদ্দ করেছে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি পুষিয়ে দিতে দ্রুত আরও তহবিলের প্রয়োজন।