২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরে। তবে প্রাথমিক যোগ্যতা থাকলেও ভর্তি-ইচ্ছুক সব পরীক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন না। আবেদনের পর বাছাই করা প্রার্থীরাই কেবল এই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে উপস্থিত গুচ্ছে থাকা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. ছাদেকুল আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, সভায় তিনটি বড় সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথমত, শিক্ষা মন্ত্রণালয় যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেবে, তারপর এই ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয়ত, ইতিমধ্যে ঘোষিত যোগ্যতা অনুযায়ী, ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা আবেদন করবেন। এ জন্য কোনো টাকা লাগবে না। এরপর আবেদন করা প্রার্থীদের যাচাই-বাছাই (স্ক্রিনিং) করে নির্ধারিত সংখ্যক প্রার্থীদের ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হবে। যাঁরা ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য যোগ্য হবেন, সেটি তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হবে। এরপর যোগ্য প্রার্থীরা ৫০০ টাকা ফি দিয়ে আবার আবেদন করবেন এবং তাঁরাই ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবেন। এ ছাড়া ভর্তি পরীক্ষায় ভুল উত্তরের জন্য নম্বর কাটা যাবে।
প্রথমে আবেদন করা কত শতাংশ প্রার্থীকে ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হবে এবং ভুল উত্তরের জন্য কত নম্বর কাটা যাবে—জানতে চাইলে অধ্যাপক ছাদেকুল আরেফিন বলেন, এগুলো পরে ঠিক করা হবে। তবে ভুল উত্তরের নম্বর কাটার বিষয়টি প্রচলিত নিয়মেই হবে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্র থাকবে। মূলত এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বসার ব্যবস্থা অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থী বাছাই করা হবে। ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা তাঁদের সুবিধামতো কেন্দ্র পছন্দ করবেন।
এ ছাড়া আজকের সভায় বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত শনিবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার মূল্যায়নের ফল প্রকাশের পর এখন উচ্চশিক্ষায় ভর্তির প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা হবে বহুনির্বাচনী প্রশ্নে (এমসিকিউ)। উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা (বাণিজ্য) বিভাগের জন্য আলাদা তিনটি পরীক্ষা হবে। বিভাগ পরিবর্তনের জন্য আগের মতো আলাদা পরীক্ষা হবে না। অর্থাৎ একজন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী একটি পরীক্ষা দিয়েই যোগ্যতা অনুযায়ী ভর্তির সুযোগ পাবেন। এই পরীক্ষার মাধ্যমেই নিজ বিভাগের পাশাপাশি অন্য বিভাগভুক্ত বিষয়েও ভর্তি হতে পারবেন। সেভাবে বিষয়ভিত্তিক আসন বরাদ্দ রাখা হবে।
ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ২০১৯ ও ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করা শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। এর মধ্যে মানবিক বিভাগের পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় মোট জিপিএ-৬ থাকতে হবে। বাণিজ্য বিভাগের জন্য মোট জিপিএ-৬ দশমিক ৫ এবং বিজ্ঞানে মোট জিপিএ-৭ থাকতে হবে। তবে এসএসসি ও এইচএসসি—কোনো পরীক্ষায় জিপিএ-৩-এর নিচে থাকলে আবেদন করা যাবে না।
মানবিক বিভাগের পরীক্ষা হবে বাংলা, ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে। এর মধ্যে বাংলায় ৪০, ইংরেজিতে ৩৫ এবং আইসিটিতে ২৫ নম্বরের পরীক্ষা হবে। ব্যবসায় শিক্ষায় (বাণিজ্য) পরীক্ষা হবে হিসাববিজ্ঞান (২৫ নম্বর), ব্যবসায় গঠন ও ব্যবস্থাপনা (২৫ নম্বর), ভাষা (বাংলায় ১৩ ও ইংরেজিতে ১২ নম্বর) ও আইসিটি (২৫ নম্বর) বিষয়ে। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ভাষা (বাংলায় ১০ ও ইংরেজিতে ১০ নম্বর), রসায়ন (২০ নম্বর), পদার্থ (২০ নম্বর) এবং আইসিটি, গণিত ও জীববিজ্ঞান বিষয়ের মধ্যে যেকোনো দুটি বিষয়ে (প্রতি বিষয়ের নম্বর ২০) পরীক্ষা দিতে হবে।
ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, পরীক্ষায় কেউ পাস বা ফেল করবেন না। প্রত্যেকেই পরীক্ষার ভিত্তিতে একটি স্কোর পাবেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের শর্তানুযায়ী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে এবং ওই ফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করবে।
শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়া শিক্ষার্থীদের কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি নেবে, সেটি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় ঠিক করবে।
তারও আগে গত ১ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও উপাচার্যদের এক সভায় ১৯টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও এই গুচ্ছে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। অপর ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয় হলো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।