শব্দময় ছবির আঁকিয়ে
সাজিয়া রহমান ভর্তি হতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকতা বিভাগে। সে অনুযায়ী ভর্তি ফরমও তুলেছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কেন যেন সিদ্ধান্ত বদল করেন তিনি। ভর্তি হন ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভের (ইউডা) চারুকলা বিভাগে। এখন রংতুলির সঙ্গে বেশির ভাগ সময় কাটে তাঁর।
‘আমি খুব আড্ডাপ্রিয়। কথাও বলি বেশি। তাই মনা মামার চায়ের দোকানে বসে যখন আড্ডা দিই, তখন ক্যাম্পাসের সিনিয়র–জুনিয়রদের সঙ্গে খুব দ্রুতই বন্ধুত্ব হয়ে যায়।,’ সাজিয়ার উচ্ছলতাই বলে দেয়, কেন তিনি ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ। চায়ের দোকান থেকে তিনি কিন্তু শুধু বন্ধু নয়, আঁকার উপকরণও খুঁজে পান। কীভাবে?
সাজিয়া রহমান বলছিলেন, ‘এক শিক্ষক একবার আমাদের অ্যাসাইনমেন্ট দিলেন—এক ঘণ্টার মধ্যে কিছু আঁকতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে পেনসিল, কলম কিংবা রংতুলি ব্যবহার করা যাবে না। আশপাশ থেকে কোনো একটা কিছু সংগ্রহ করে নিতে হবে। রংতুলি বা পেনসিল ছাড়া কীভাবে আঁকব, সেটা যখন ভাবছি, তখন একজনের আধখাওয়া চা দেখে বুদ্ধিটা মাথায় আসে। চা আর রাস্তায় পড়ে থাকা পাতলা কয়লা দিয়ে এঁকে ফেলি ভাষা আন্দোলনের একটি ছবি।’
ছবি আঁকার ক্ষেত্রে সাজিয়ার একটা বিশেষত্বও আছে। ইউডার চারুকলার এই শিক্ষার্থী বুঝিয়ে বললেন, ‘আমার ছবিতে মূলত টেক্সট বা লেখা বেশ গুরুত্ব পায়। ছবির মধ্যেই ফুটে ওঠে বিভিন্ন অক্ষর, শব্দ, চিঠি।’
সাজিয়ার আঁকা চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত ২৩তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে, জয়নুল গ্যালারিতে, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্তৃক আয়োজিত প্রদর্শনীসহ আরও বিভিন্ন জায়গায়। খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়িতে পাহাড়ের শিশুদের কাছে রংতুলি পৌঁছে দিতে সাজিয়া কাজ করেছেন হিল আর্টিস্ট নামে একটি দলের সঙ্গে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি শুধু আঁকতে চাই। এমন একটি স্কুলের স্বপ্ন দেখি, যেখানে পথশিশুদের বিনা মূল্যে পড়াশোনা করানোর পাশাপাশি ছবি আঁকা শেখাতে পারব।’ অবসরে পাহাড় ও সমুদ্রের কাছে যেতে ভালোবাসেন এই আঁকিয়ে।