বিনা মূল্যের বই
মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থী এখনো সব বই পায়নি
মাধ্যমিকের প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ বই এখনো ছাপাই হয়নি। আর প্রায় দুই কোটি বইয়ের ছাড়পত্র হয়নি।
প্রাক্-প্রাথমিক স্তরের নতুন বই দেওয়ার কাজও পিছিয়ে
প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির প্রায় সব বই শিক্ষার্থীরা পেয়েছে
মাধ্যমিক স্তরের বইয়ের চাহিদা মোট ২৪ কোটি ৭১ লাখ ৫৫ হাজার
গতকাল পর্যন্ত ছাপা হয়েছে প্রায় ২৩ কোটি ১১ লাখ ৫৬ হাজার বই
নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর পর এক সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সব শিক্ষার্থী সব বই হাতে পায়নি। বিভিন্ন শ্রেণিতে একজন শিক্ষার্থী যতগুলো বই পাওয়ার কথা, তার চেয়ে কম বই পাচ্ছে। নতুন বই দেওয়ায় পিছিয়ে আছে প্রাক্-প্রাথমিক স্তরও। তবে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই নতুন বই হাতে পেয়েছে।
ঢাকা ও ঢাকার বাইরের ১৪টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গতকাল রোববার সরেজমিনে গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সূত্রমতে, মাধ্যমিক স্তরের মোট ২৪ কোটি ৭১ লাখ ৫৫ হাজার বইয়ের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত মাধ্যমিক স্তরে প্রায় ২৩ কোটি ১১ লাখ ৫৬ হাজার বই ছাপা হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে বই পাঠানোর ছাড়পত্র পেয়েছে ২২ কোটি ৭২ লাখ ৪০ হাজারের বেশি বই। এই তথ্য অনুযায়ী, এখনো প্রায় ২ কোটি বই ছাড়পত্রই পায়নি। আর ছাপা না হওয়া বইয়ের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ।
এ বছর মোট সোয়া চার কোটি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ৩৪ কোটি ৭০ লাখের বেশি পাঠ্যবই বিনা মূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। করোনার সংক্রমণের কারণে এক দিনে বা একসঙ্গে বই না দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দিন ও সময়ে বিনা মূল্যের বই দেওয়া হচ্ছে।
এবার বই ছাপার কাজে পুনঃ দরপত্র দিতে হয়েছিল। আবার বই ছাপার অনুমোদনসংক্রান্ত কাজে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রায় এক মাস দেরি করেছিল। ফলে ছাপার কাজ শুরু করতেই দেরি হয়। এ জন্য সময়মতো বই দেওয়া নিয়ে আগেই আশঙ্কা করেছিলেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। যদিও শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিরা বলে আসছিলেন, ৯৫ শতাংশ বই ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে ছাপা হয়ে যাবে। আর বাকি বইও ৭ জানুয়ারির মধ্যেই ছাপা হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তব তথ্য বলছে ভিন্ন কথা।
এনসিটিবির সূত্রমতে, কিছুসংখ্যক বই ছাপা ও বিতরণের কাজ শেষ করতে ২০ জানুয়ারি পর্যন্তও লেগে যেতে পারে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যানের রুটিন দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, যেসব বই এখনো যায়নি, সেগুলো যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে যায়, সেই ব্যবস্থাই এখন করছেন।
মাধ্যমিকের বই পিছিয়ে
গতকাল বেলা ১১টার পর মতিঝিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, প্রধান শিক্ষক নুরজাহান হামিদাসহ তিনজন শিক্ষক ভর্তির কাজ করছিলেন। প্রাক্-প্রাথমিক স্তরের একাধিক শিশুকে ভর্তির পর তাদের হাতে দুটি বই দেওয়া হচ্ছিল। তখন প্রধান শিক্ষক জানালেন, এগুলো এ বছরের বই নয়, গতবারের সামান্য কিছু বই রয়ে গিয়েছিল। সেগুলোই দেওয়া হচ্ছে। এ বছরের প্রাক্-প্রাথমিকের বই এখনো তাঁরা পাননি। তবে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির বই পেয়ে গেছেন।
দেশের ছয় শতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো এই বিদ্যালয়েই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। কিন্তু মাধ্যমিক স্তরের সপ্তম শ্রেণির পাঁচটি বই এখনো পাননি। আর অষ্টম শ্রেণিতে কেবল তথ্য যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ের বই পেয়েছেন বলে জানালেন প্রধান শিক্ষক। তবে সোমবার (আজ) বাকি বই পাওয়ার কথা বলে জানালেন তিনি।
এর আগে সকালে রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষক দুলাল চন্দ্র চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সব বই পেলেও অষ্টম ও নবম শ্রেণির সব বই পায়নি বিদ্যালয়টি। এর মধ্যে অষ্টম শ্রেণির ১৪টি বইয়ের মধ্যে সাতটি এবং নবম শ্রেণির ১১টি বই এখনো পাওয়া যায়নি। প্রাক্-প্রাথমিক স্তরের কোনো বই পায়নি।
মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নবম শ্রেণি ছাড়া অন্য শ্রেণির প্রায় সব বই পেয়েছে। একই ধরনের চিত্র মগবাজারের ইস্পাহানি বালিকা বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ে।
একই চিত্র ঢাকার বাইরেও
রাঙামাটি শহরের রাণী দয়াময়ী উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা মাত্র দুই বিষয়ের বই পেয়েছে। আর অষ্টম শ্রেণিতে ১৪টি বইয়ের মধ্যে পেয়েছে আটটি। তবে রাঙামাটি শহরের রাঙাপানি এলাকায় যোগেন্দ্র দেওয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সব বিষয়ের বই পেয়েছে।
সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফয়েজুর রহমান জানালেন, সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আংশিক পরিমাণ বই পেয়েছে। আর অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এখনো কোনো বই পায়নি।
তবে শহরের কালীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সব বই পেয়েছে।
খুলনা নগরের ২৭ নং মিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্–প্রাথমিক শ্রেণির বই এখনো দেওয়া হয়নি। তবে অন্য সব শিক্ষার্থী সব বই পেয়েছে। নগরের সরকারি ইকবাল নগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ১৪টি বিষয়ের মধ্যে পেয়েছে ৭টি। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই এখনো পায়নি।
পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার কলেজিয়েট ইনস্টিটিউটের সপ্তম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এখন পর্যন্ত সাতটি করে বই পেয়েছে। তবে ডোকরোপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মীরগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শতভাগ বই পেয়েছে।
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, সুনামগঞ্জ এবং প্রতিনিধি, খুলনা, রাঙামাটি ও পঞ্চগড়]