প্রাথমিকে পরীক্ষা ছাড়া মূল্যায়ন, রোল থাকবে একই
করোনাভাইরাসের কারণে পরীক্ষা ছাড়াই প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করবেন শিক্ষকেরা। বছরের প্রথম আড়াই মাসে হওয়া ক্লাস এবং টিভি ও রেডিওতে হওয়া ক্লাসের ভিত্তিতে নিজ নিজ শিক্ষার্থীদের নিজেদের মতো করে মূল্যায়ন করবেন শিক্ষকেরা। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যায়নের কাজটি শেষ করতে হবে। এর মাধ্যমে মোটা দাগে সব শিক্ষার্থীই পরীক্ষা ছাড়া ওপরের শ্রেণিতে উঠবে।
আর ওপরের শ্রেণিতে ওঠার পর তাদের রোল নম্বর আগের ক্লাসের রোল নম্বরই থাকবে। তবে কোনো অভিভাবক মনে করলে তাঁর সন্তানকে আগের শ্রেণিতেও রাখার সুযোগ পাবেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম আজ প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মূল্যায়নের বিষয়টি শিক্ষকদের ওপরই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এই মূল্যায়নে কোনো পরীক্ষা হবে না। আর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা আগের শ্রেণির রোল নম্বর রাখতে মত দিয়েছেন।
অবশ্য শিক্ষকেরা বলে আসছিলেন, মূল্যায়নের বিষয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি নির্দেশনা করে দিলে সেটি সবার জন্য ভালো হতো।
এর আগে গত মাসে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছাড়াই ওপরের শ্রেণিতে উঠার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা কিসের ভিত্তিতে ওপরের শ্রেণিতে উঠবে, সে বিষয়ে অস্পষ্টতা কাটছিল না। এ রকম পরিস্থিতিতে একেক বিদ্যালয় একেক রকম চিন্তা করে আসছিল, কিন্তু কোনোটাই কার্যকর করতে পারছিল না। এখন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এই সিদ্ধান্তের কথা জানাল।
বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি স্কুল মিলিয়ে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার ২৫৮টি। এসব প্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থী প্রায় ১ কোটি ৬৩ লাখ। এগুলোর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (৬৫,৬২০টি) শিক্ষার্থী ১ কোটি ১৪ লাখ।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটি বহাল থাকবে। শিক্ষা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছর বিদ্যালয় খোলার সম্ভাবনা খুব কম। এ রকম পরিস্থিতিতে প্রাক্-প্রাথমিকের শিশুদের শেখার বিষয়টি একেবারেই বন্ধ। আর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য টিভি ও বেতারের মাধ্যমে ক্লাস সম্প্রচার করা হলেও বাস্তবে সেটি খুব একটা কাজে আসেনি। পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাও অনেক আগেই বাতিল করা হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের উদ্যোগ নিলেও সর্বশেষ ছুটির ঘোষণার (১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত) কারণে সেটি সম্ভব নয়। কারণ, এরপর শিক্ষাবর্ষ শেষ হতে মাত্র ১১ দিন বাকি থাকে। এই অবস্থায় প্রাথমিকের বিভিন্ন শ্রেণির মূল্যায়ন এবং ওপরের শ্রেণিতে ওঠার পদ্ধতি কী হবে, সেটি নিয়ে আলোচনা চলছিল।