প্রতিযোগিতাটি হাতের লেখার
‘সুন্দর হাতের লেখা শিখুন’—এমন বিজ্ঞাপন এখনও চোখে পড়ে। ক্লাসে যার হাতের লেখা ভালো, একসময় তার কদর ছিল আলাদা। এখনো আছে বৈকি। তবে কম্পিউটারের জমানায় তা বোধ হয় অনেকটাই কমে এসেছে।
সুন্দর হাতের লেখার চর্চা এখনও কি কেউ করেন? প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট কর্তৃক আয়োজিত সুন্দর হাতের লেখা প্রতিযোগিতায়। গত ২১ নভেম্বর আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪৫০ জন শিক্ষার্থী এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন। এ প্রসঙ্গে কথা হয় ইনস্টিটিউটের প্রভাষক ও প্রতিযোগিতাটির সমন্বয়ক মিজানুর রহমানের সঙ্গে। প্রতিযোগিতায় জমা পড়া হাতের লেখাগুলো দেখিয়ে তিনি বললেন, ‘এটা ঠিক যে হাতের লেখার চর্চা কমে গেছে। তারপরও কিন্তু অনেক ছেলেমেয়ের হাতের লেখা খুব সুন্দর। সবাই কি-বোর্ডনির্ভর হয়ে পড়ছি। পরীক্ষার খাতা দেখতে গেলে কষ্ট হয়। লেখা ঠিকমতো বোঝা যায় না। সার্বিক দিক বিবেচনা করেই আমরা এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করি।’
সুন্দর হাতের লেখা দিয়ে আয়োজকদের সত্যিই চমকে দিয়েছেন প্রতিযোগীরা। দুটি বিভাগে এ আয়োজন হয়—বাংলা ও ইংরেজি। প্রতি বিভাগে তিনজন করে মোট ছয়জনকে পুরস্কৃত করার কথা ছিল। কিন্তু প্রতিযোগীদের হাতের লেখা দেখে আয়োজকেরা এতই মুগ্ধ হন, শেষ পর্যন্ত পুরস্কৃত করা হয় মোট ২৬ জনকে! বিচারক হিসেবে ছিলেন এই ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ড. শিশির ভট্টাচার্য, ড. শায়লা সুলতানা, রুপা চক্রবর্তী, মো. লিয়াকত আলী খান ও মিজানুর রহমান।
বিজয়ী নির্ধারণ যে মোটেই সহজ কাজ ছিল না, তা ফুটে ওঠে মিজানুর রহমানের কথায়। তিনি বলেন, ‘একটা লেখা আরেকটার চেয়ে সুন্দর। ছেলেমেয়েরা আমাদের কী ঝামেলাতেই না ফেলে দিয়েছিল!’ শেষ পর্যন্ত বাংলা ও ইংরেজি বিভাগে প্রথম হন যথাক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াসাত নাফিস এবং উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের নুসরাত জাহান। প্রতিযোগীদের বাংলায় লিখতে দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের অংশবিশেষ এবং ইংরেজিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের ঐতিহাসিক গেটিসবার্গ ভাষণ।
রিয়াসাত ও নুসরাত। দুজনের হাতের লেখা সুন্দর হলেও পেছনের গল্পটা ভিন্ন। নুসরাতের হাতেখড়ি শিক্ষক বাবার হাত ধরে। ছোটবেলা থেকেই তাঁর হাতের লেখা সুন্দর। সুন্দর হাতের লেখার রহস্যটা কী? ‘না না, রহস্য কিছু না। আসলে আমি সবকিছুতে একটু গোছানো স্বভাবের। আমি চাইতাম লেখাটা গোছানো হোক, যেন মানুষের পড়তে সুবিধা হয়। চোখের শান্তিটা থাকে। এই করতে গিয়ে হাতের লেখা সুন্দর হয়ে গেছে!’ হাসতে হাসতে বলছিলেন নুসরাত। কলেজে দেয়ালপত্রিকা লেখার দায়িত্ব পড়ত নুসরাতের কাঁধে।
রিয়াসাতের গল্পটা ভিন্ন। তিনি ছোটবেলা থেকে ‘ফন্টপ্রিয়’। কোনো দেয়ালে সুন্দর হস্তাক্ষরে কিছু লেখা দেখলেন তো তাঁর মাথায় পোকা ঢুকে গেল! বাসায় গিয়ে সেটি অনুশীলন করতেই হবে। কোনো বইয়ের প্রচ্ছদের লেখার স্টাইলটা ভালো লাগল, শুরু হলো অনুশীলন! এভাবেই হাতের লেখা সুন্দর হয় সাহিত্যপ্রেমী এই তরুণের।
সুন্দর হাতের লেখার সঙ্গে প্রেমপত্রের সম্পর্ক সুনিবিড়। অনেক সময় দেখা যায়, নিজের হাতের লেখা সুন্দর নয় বলে সুন্দর হাতের লেখার কাউকে দিয়ে মনের মানুষের জন্য চিঠি লিখিয়ে নেন অনেকেই। আপনাদের সঙ্গে কি এ রকম কিছু হয়েছিল? উত্তর দেওয়ার আগে এক চোট হেসে নিলেন দুজনে। ‘আমার কাছে কেউ এই আবদার নিয়ে আসেনি,’ ঝটপট উত্তর নুসরাতের। ‘আমার কাছে একবার এসেছিল। লিখে দিয়েছিলাম। কিন্তু সে প্রেমের পরিণতি কী হয়েছিল, জানি না,’ বললেন রিয়াসাত।
এই প্রতিবেদন তৈরি হয়ে যাওয়ার পর আমরা রিয়াসাত নাফিসের কাছে অনুরোধ করেছিলাম শিরোনামটা যেন তিনি নিজ হাতে লিখে দেন। রিয়াসাত যে অনুরোধ রেখেছেন, তা তো দেখতেই পাচ্ছেন!