এবার বন্যার ধাক্কা শিক্ষায়, ঈদের আগে এসএসসির সম্ভাবনা নেই
করোনা মহামারির কারণে প্রায় দুই বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত দেশের প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ও শিক্ষাপঞ্জি ওলটপালট হয়ে আছে। গত ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পথে এগোচ্ছিল। এর মধ্যে এখন বন্যার বড় ধাক্কা লেগেছে শিক্ষার ওপরও। কেবল সিলেট অঞ্চলেরই চার জেলায় প্রায় চার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবহৃত হচ্ছে বন্যাকবলিত মানুষের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে।
অন্যদিকে বন্যার কারণে ইতিমধ্যে স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। নতুন তথ্য হলো, আসন্ন ঈদের আগে আর এ পরীক্ষা শুরুর কোনো সম্ভাবনা নেই বলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে। আর এসএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় আগামী ২২ আগস্ট থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও পিছিয়ে যাচ্ছে।
করোনা সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছিল সরকার। করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে দীর্ঘ ১৮ মাস পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়। তখন শ্রেণি কার্যক্রম চলছিল স্বল্প পরিসরে। এরপর আবারও নতুন করে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ২১ জানুয়ারি আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর ২২ ফেব্রুয়ারি প্রথমে মাধ্যমিক এবং মার্চের শুরু থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খোলা হয়।
এখন করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যেই সিলেট, সুনামগঞ্জসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় ভয়াবহ বন্যা চলছে। এ জন্য ১৯ জুন এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত ঘোষণা করে সরকার। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল হয়তো বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়ে যাবে এবং ঈদের আগেই স্থগিত পরীক্ষা শুরু করা যাবে। কিন্তু এখন আরও বিভিন্ন জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে ঈদের আগে এ পরীক্ষার সুযোগ নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ধরে নিতে পারেন ৯০ শতাংশ হলো ঈদের আগে পরীক্ষা শুরুর কোনো সম্ভাবনা নেই। এরপরও যদি উচ্চ পর্যায় থেকে কোনো নির্দেশনা আসে, তাহলে ভিন্ন কথা। কিন্তু বাস্তবতা হলো এখনো অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যায় প্লাবিত। সিলেট অঞ্চলে বিপুলসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। সুতরাং এ অবস্থায় ঈদের পরীক্ষা শুরুর পরিস্থিতি নেই।
শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী, আগামী ৩ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত ১৫ দিন পবিত্র ঈদুল আজহা এবং গ্রীষ্মকালীন ছুটি আছে। এর মধ্যে ঈদুল আজহার জন্য ছুটি নির্ধারিত আছে ৯ থেকে ১১ জুলাই।
এ রকম অবস্থায় স্থগিত পরীক্ষা ঈদের আগে শুরু করা সম্ভব কি না, জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম আমিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তাঁদের প্রস্তুতি আছে। তবে পরিস্থিতি বিবেচনা করেই আবার পরীক্ষা শুরুর সময় ঘোষণা করা হবে। তিনি মনে করেন, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় এ বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও পেছাতে হবে।
শ্রেণিকক্ষে মানুষের বসবাস
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে আছে সিলেট অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এর মধ্যে সংখ্যার বিবেচনায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিলেট বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেট অঞ্চলের চার জেলা সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৫ হাজার ৫৪টি। এর মধ্যে আজ বুধবার পর্যন্ত ৩ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান স্থগিত আছে। অর্থাৎ প্রায় ৬৩ শতাংশ বিদ্যালয়েই পাঠদান বন্ধ আছে। এর মধ্যে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ১ হাজার ১৪৮টি বিদ্যালয়। তবে বন্যায় প্লাবিত বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২ হাজার ৮২৮।
অন্যদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক মো. আবদুল মান্নান খান প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার নিয়ে চলা বন্যার কারণে ৮২৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত পাঠদান বন্ধ আছে। এর মধ্যে ৪১১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কারিগরি মিলিয়ে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মাধ্যমিক থেকে কলেজ পর্যায়ের।
আবদুল মান্নান খান এখন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের পক্ষে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র নিরূপণ করবেন। এ রকম অবস্থায় ওই সব এলাকায় ঈদের আগে স্থগিত এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া কঠিন বলে মনে করেন তিনি। তবে তিনি বলেন, পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি শিক্ষা বোর্ডের সিদ্ধান্তের বিষয়।