অভিমত
এই মুহূর্তে স্কুল বন্ধ রাখার চেয়ে ভালো বিকল্প নেই
সারাক্ষণ বাসায় থাকার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একধরনের মানসিক অবসাদ দেখা দিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা ও ভবিষ্যতের জন্য করণীয় কী, তা নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক এ বি এম আবদুল্লাহর সঙ্গে।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার এখনো আশানুরূপ কমেনি। এমন অবস্থায় হুট করে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে সংক্রমণের হার আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হবে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি তৈরি হবে প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়ে। কারণ, এসব বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ছোট, একসঙ্গে অনেক শিশুকে বসে ক্লাস করতে হয়, ফলে একটি শিশু আক্রান্ত হলে তা অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
অল্প বয়সী এসব শিশু শ্রেণিকক্ষের বাইরে বিদ্যালয়ে মাঠে দৌড়াদৌড়ি করে, একসঙ্গে খেলাধুলা করে, তাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। আবার এসব শিশুকে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন তাদের অভিভাবক, বিশেষ করে মায়েরা। তাঁরাও বিদ্যালয়ের সামনে সন্তানের জন্য অপেক্ষা করেন, এখানেও সামাজিক দূরত্ব মানা সম্ভব নয়।
মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে আসবেন। তাঁরা হলে, হোস্টেলে বা মেসে থাকবেন। এসব জায়গায় সামাজিক দূরত্ব মানা কঠিন। এখানেও একজন থেকে বহুজন আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে।
তবে সার্বিক বিবেচনায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। কারণ, এসব বিদ্যালয়ের শিশুরা স্বাস্থ্যবিধি মানতে পারবে না, তাদের পক্ষে সব সময় মাস্কও পরে থাকা সম্ভব নয়। আবার এই বয়সী শিশুরা আক্রান্ত হলে তাদের আইসোলেশনে (বিচ্ছিন্নকরণ) রাখাও সম্ভব হবে না।
এমন ঝুঁকির মধ্যেও পড়ালেখার ক্ষতির কথা বলে কেউ কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে বলেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এই ক্ষতি মেনে নিতে হবে, অনলাইনে যতটুকু সম্ভব, পড়ালেখা চালিয়ে যেতে হবে, মা-বাবাকে সন্তানদের পড়ালেখায় সময় দিতে হবে। ঘরে বা ছাদে যতটা সম্ভব ব্যায়াম, হাঁটাচলা বা বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে শিশুদের।
বিদ্যালয় বন্ধ রাখার চেয়ে ভালো বিকল্প এই মুহূর্তে নেই। জীবিকার তাগিদে বড়দের ঘর থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সন্তানকে স্কুলে পাঠানো বিষয়টি মেলানো যাবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে।
এ বি এম আবদুল্লাহ: প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক