ইন্টারনেটের কর্মশালা
‘ইন্টারনেট সম্পর্কে আগে শুনেছিলাম। মনের মধ্যে ইন্টারনেট নিয়ে আগ্রহ অনেক দিন থেকেই ছিল। কিন্তু ব্রাউজিং করতে পারতাম না বলে একটা ভয়ও ছিল। আজ সেই ভয় একেবারে কেটে গেছে। আই-জিনিয়াসরা সেই ভয় দূর করে দিয়েছেন। এখন আমি ব্রাউজিংসহ ইন্টারনেটের অনেক কিছুই শিখেছি।’ কথাগুলো বলছিল ঈশ্বরদী পূর্ব টেংরী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সালেহা সিদ্দিকা। সে এই স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। শুধু সালেহাই নয়, ইন্টারনেট কর্মশালায় অংশ নিতে আসা ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ ও ঈশ্বরদী সাঁড়া মাড়োয়ারি স্কুল ও কলেজের সব শিক্ষার্থীর মধ্যেই ছিল একই রকম উচ্ছ্বাস। শুধু এই তিনটি প্রতিষ্ঠানই নয়, সারা দেশের আই-ক্যাম্পে অংশ নিতে আসা সব শিক্ষার্থীর অভিব্যক্তিই ছিল দারুণ!
গত ৩০ আগস্ট থেকে আই-জিনিয়াসদের পরিচালনায় শুরু হয়েছে আই-ক্যাম্প (ইন্টারনেট কর্মশালা)। গত দুই বারের আই-জিনিয়াসদের মধ্য থেকে নির্বাচিত ৫২ জন পরিচালনা করছে এবারের ক্যাম্প।
‘গত দুটি উৎসবে আমাদের স্কুল থেকে সুনামগঞ্জের আই-জিনিয়াস নির্বাচিত হয়েছে। এবারও সেই জয় ধরে রাখতে চাই। এ কারণে সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। আমরা পারবই।’ প্রত্যয়ের সঙ্গে বলে সুনামগঞ্জের সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাবিক আহমদ।
সুনামগঞ্জ পৌর কলেজের অধ্যক্ষ শেরগুল আহমদ একই রকম আশাবাদী কণ্ঠে বলেন, ‘আই-ক্যাম্প আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আজ অনেক সচেতন হয়েছে। ভবিষ্যতেও এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে আশা করি।’
চুয়াডাঙ্গার ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী আদ্রিতা হোসেন আই-ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হয়। আবেগ আপ্লুত আদ্রিতা বলে, ‘ইন্টারনেট-বিষয়ক এই কর্মশালার মাধ্যমে আমরা তথ্যপ্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহার শিখলাম। আর এই শিক্ষাই আমাদের আলোর পথের যাত্রী হতে অনুপ্রাণিত করবে।’
অন্যদিকে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা সদরের লক্ষ্মীপাশা আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাজিয়া সুলতানা আনন্দে চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করল। কারণ, সে আই-ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হয়েছে। আবেগী কণ্ঠে সে বলে, ‘এত তাড়াতাড়ি উত্তর দিতে পারব, ভাবিনি। আই-ক্যাপ্টেন হতে পেরে খুব ভালো লাগছে। এ জন্য প্রথম আলো ও গ্রামীণফোনকে ধন্যবাদ। এ ধরনের আয়োজন আরও দরকার।’
লোহাগড়ার লক্ষ্মীপাশা পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে যখন আই-ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তখন শ্রেণিকক্ষের বাইরে দারুণ ভিড়। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। জানালায় উঁকি দিয়েই উপভোগ করছিল আই-ক্যাম্প। ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী স্বপ্না বলে, ‘আমরা ভেতরে যেতে পারলে এসব কুইজের উত্তর দিতে পারতাম।’
আই-জিনিয়াস ও আয়োজকদের টিম টেকনাফের সাবরাং উচ্চবিদ্যালয়ে যখন পৌঁছায়, তখন ঘড়ির কাঁটায় দুইটা বেজেছে। স্কুলে টিফিনের বিরতি। কিন্তু তাতে করে শিক্ষার্থীদের উৎসাহের কোনো কমতি নেই। তারা শ্রেণিকক্ষে বসে অপেক্ষা করছিল। মোবাইল ব্রাউজিং রাউন্ডে এসে শিক্ষার্থীদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো। নানা বিষয়ে তাদের প্রশ্ন, ‘আচ্ছা বলেন তো বঙ্গোপসাগরের গভীরতা কত? মেসির ছেলের জন্ম কত তারিখ? কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতা কত লাইনের?’ এমন আরও অনেক অজানা বিষয় জেনে নেয় তারা এই পর্বে।
এ রকম আরও হরেক রকম জানা-অজানার অভিজ্ঞতায় মেতে উঠেছিল সারা দেশে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন আই-ক্যাম্প। গত ৩০ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এই আই-ক্যাম্প চলবে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
গত বছরের আই-জিনিয়াসরাই এবারের উৎসব সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করছে। তারা শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেয়। আর তাদের সহায়তা করছে আই-ক্যাম্পের তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ দল। সেই সঙ্গে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আই-ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে একজনকে আই-ক্যাপ্টেন নির্বাচিত করে পুরস্কৃত করা হয়।
এই প্রশিক্ষণে শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেটের খুঁটিনাটি বিষয় শেখানো হয়। একই সঙ্গে একটি পর্বে চলে প্রশ্নোত্তর পর্ব। এই পর্বে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে হাত তুলে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয় শিক্ষার্থীরা। প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তিনজন করে বিজয়ীকে শুভেচ্ছা পুরস্কার দেওয়া হয়।
তৃতীয়বারের মতো আয়োজিত ইন্টারনেট উৎসবের আগে ইন্টারনেট বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে আই-ক্যাম্প অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সারা দেশে ৫২টি অঞ্চলের ১৫৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আই–ক্যাম্প। আই–ক্যাম্পের সমাপ্তির পরে ১৫০টি স্থানে অনুষ্ঠিত হবে ইন্টারনেট উৎসব।
প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে গ্রন্থনা করেছেন সুচিত্রা সরকার
বিস্তারিত জানতে ভিজিট করো www.prothom-alo.com/internetutshab