অনুপ্রেরণার কর্মশালা
সকাল থেকেই গুমোট গরম। তবু শিক্ষার্থীদের কোনো ক্লান্তি নেই। তারা ভীষণ উৎসাহ নিয়ে অপেক্ষা করছে মিলনায়তনের বড় কক্ষটিতে। সবার চোখেমুখে জিজ্ঞাসার ভ্রুকুঞ্চন, ‘আচ্ছা কর্মশালায় কী হবে! উত্তর দিতে পারব তো? কে হবে আই-ক্যাপ্টেন?’ এত সব উত্তেজনার চিত্র খুলনার মংলা বন্দর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে। সবশেষে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আই-ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হয় নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতেমাতুন মুনেকা। অনুভূতি জানাতে গিয়ে সে বলে, ‘গতবার ইন্টারনেট উৎসবে অংশ নিতে পারিনি। এবার আই-ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হয়ে স্কুলের প্রতিনিধিত্ব করতে পারছি বলে সত্যিই ভালো লাগছে। তাই আমাদের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য গ্রামীণফোন আর প্রথম আলোকে ধন্যবাদ।’
মংলার সেন্ট পলস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন বলে, ‘এবার আমরা চেষ্টা করব আই-জিনিয়াস হওয়ার।’
শুধু এই দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নয়, একই রকম চিত্র ছিল ইন্টারনেট কর্মশালায় অংশ নেওয়া অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয়। গ্রামীণফোন-প্রথম আলো ইন্টারনেট কর্মশালার তৃতীয় সপ্তাহেও ছিল শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসভরা উপস্থিতি। ৩০ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এই কর্মশালা চলছে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
জয়পুরহাট সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী হুমায়ইয়া মণ্ডল বলে, ‘খুব ভালো লাগছে। নতুন নতুন কত্ত কিছু শিখতে পারলাম।’
ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না ইব্রাহিমের। লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর আলেকজান্ডার আ স ম আবদুর রব সরকারি কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সে। অনুভূতি জানাতে গিয়ে সে বলে, ‘কর্মশালায় এসে তথ্যঘরের দরজাটা খুঁজে পেলাম। শিখতে পারলাম ইন্টারনেট ব্যবহার করে কীভাবে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে হয়।’ এ কলেজে আই-ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হয়েছে প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফারহাবি সুলতানা। সে বলে, ‘কর্মশালায় এসে ব্রাউজিংটা শিখলাম, পরে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আই-ক্যাপ্টেন হলাম। বিষয়টা অবিশ্বাস্য হলেও কী যে ভালো লাগছে, বলে বোঝাতে পারছি না!’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী নূর-ই-সুলতানা বলে, ‘আজকের দিনটা সারাজীবন মনে রাখব। কারণ, আজ আমি আই-ক্যাপ্টেন হয়েছি।’
‘আমাদের বিদ্যালয়ে এই প্রথম এ ধরনের একটি আনন্দময় শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান হলো। সামনের ইন্টারনেট উৎসবে আমাদের বিদ্যালয় অংশ নিয়ে ভালো করবে, এই আশা করছি।’ অনুভূতি জানাতে গিয়ে এমনটাই বলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাজমুল হক।
প্রত্যয়ের কথা বলে হরিমোহন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী এন এম তৌফিক হাসান। সে বলে, ‘এবার আমি কর্মশালায় আই-ক্যাপ্টেন হয়েছি। আমার লক্ষ্য এবার আই-জিনিয়াস হওয়া। আশা করছি পারবই।’
কর্মশালায় অংশ নিতে না পেরে ভীষণ মন খারাপ চরমোহনপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাবিনা খাতুনের। কিন্তু তাকে দমিয়ে রাখা যায়নি। জানালায় উঁকি দিয়ে পুরো অনুষ্ঠানই সে উপভোগ করেছে। কেমন লাগল কর্মশালা, জানতে চাইলে সে বলে, ‘খুব ভালো। আগামী বছর আমি অষ্টম শ্রেণিতে উঠব। তখন কর্মশালা ও ইন্টারনেট উৎসবে আমি যোগ দিবই।’
কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজে শিক্ষার্থী শেফা দাস জানায়, এই আয়োজন ব্রাউজিং-ভীতি দূর করে দিয়েছে।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম মহিলা ডিগ্রি কলেজের আই-ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হয় দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসরুভা জান্নাত। সে বলে, ‘কিছুদিন আগে ফেসবুক চালিয়ে অল্প অল্প ইন্টারনেট চালাতে শিখেছিলাম। কিন্তু আজ এর বাইরেও অনেক অজানা তথ্য জেনেছি।’
ইন্টারনেট কর্মশালা তো শুধু একটা উৎসবই নয়, এ যেন এক মিলনমেলা। এই মিলনমেলার আই-ক্যাম্প আয়োজন চলবে আরও একটি সপ্তাহ। তারপর আসছে ইন্টারনেট উৎসব। এই উৎসবে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উদ্গ্রীব। তারা অপেক্ষা করছে ইন্টারনেটের চেনা-অচেনা দরজায় কড়া নাড়তে!
প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে গ্রন্থনা সুচিত্রা সরকার
বিস্তারিত জানতে ভিজিট করো www.prothom-alo.com/internetutshab
www.fb.com/internetutshab