এক–তৃতীয়াংশের বেশি শিক্ষার্থী প্রাইভেট পড়ে, না পড়লে ‘অপ্রত্যাশিত সমস্যা’

শিশু শিক্ষার্থীফাইল ছবি : প্রথম আলো

তিনটি জেলার নির্ধারিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের ওপর পরিচালিত এক জরিপের তথ্য বলছে, সেখানকার এক–তৃতীয়াংশের বেশি শিক্ষার্থী ‘প্রাইভেট টিউরের’ কাছে পড়ে। আর প্রাইভেট টিউটরের কাছে না পড়লে শিক্ষার্থীরা ‘অপ্রত্যাশিত সমস্যায়’ পড়ে। এমনকি প্রাইভেট টিউটরের কাছে না পড়লে শিক্ষার্থী ফেল করবে বলে মনে করেন জরিপে অংশ নেওয়া এক–তৃতীয়াংশ মানুষ।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম দেশের উত্তরাঞ্চলের তিনটি জেলা গাইবান্ধা, ঠাঁকুরগাও ও নীলফামারীর ৩০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ৪০৮ জনের ওপর জরিপ করে প্রাথমিক শিক্ষার এসব নানা তথ্য পেয়েছে।

আজ রোববার রাজধানীর খামারবাড়ি এলাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে এক জাতীয় সম্মেলনে এই জরিপের তথ্য প্রকাশ করা হয়। ‘প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারি বিনিয়োগ, স্থানীয় অভিজ্ঞতা ও করণীয়’ শীর্ষক এ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

সম্মেলনে জরিপের ফলাফল নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডিরি জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। প্রবন্ধে বলা হয়, দারিদ্র্যের হার গাইবান্ধায় জাতীয় হারের প্রায় দ্বিগুণ। ঠাকুরগাঁও জেলায় এই হার জাতীয় হারের চেয়ে কম হলেও নীলফামারীতে আবার তা জাতীয় হারের চেয়ে প্রায় ৮ শতাংশ বেশি। ঠাকুরগাঁও জেলায় সাক্ষরতার হার জাতীয় হারের বেশি হলেও গাইবান্ধা ও নীলফামারীতে তা জাতীয় হারের চেয়ে কম। আবার গাইবান্ধা জেলায় বাল্যবিবাহের হার জাতীয় হারের চেয়ে প্রায় ১১ শতাংশ বেশি।

প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারি বিনিয়োগ, স্থানীয় অভিজ্ঞতা ও করণীয়’ শীর্ষক সম্মেলন। কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ, ঢাকা, ২৫ জুন
ছবি: প্রথম আলো

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, জরিপ করা ৩০টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৪টিতে ৫টির কম শ্রেণিকক্ষ রয়েছে, যা প্রয়োজনের চেয়ে কম। আর শিক্ষকের গড় সংখ্যা ছিল ৬। সেখানকার শিক্ষার্থীর বিবেচনায় গড়ে ২৯ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক আছেন, যা জাতীয় হারের চেয়েও কম। কিন্তু সমস্যা হয় যখন কোনো শিক্ষক বদলি হন বা অনুপস্থিত থাকেন। তখন ক্লাস নিতে সমস্যা হয়। অন্যদিকে বিদ্যালয়গুলোতে অফিস সহায়ক না থাকায় প্রধান শিক্ষকের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। এর ফলে তিনি পাঠদান ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন না।

জরিপের তথ্য বলছে, ছাত্রছাত্রীদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা নেই বলে জানিয়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ অংশীজন। জরিপ করা ৩০ বিদ্যালয়ের মধ্যে ২২টিতে কোনো ধরনের গ্রন্থাগারের ব্যবস্থা নেই। ইংরেজি ও গণিত শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিশেষ দুর্বলতার কথা জানিয়েছেন জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ উত্তরদাতা।

সম্মেলনে যা বললেন অতিথিরা

অন্য অতিথিদের মতো এসব কাজে স্থানীয় সরকারকে সম্পৃক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনা করেন, কিন্তু সফলতার স্বীকৃতি দেবেন না?’

প্রাথমিক শিক্ষায় বাজেট দিন দিন বাড়ানো উচিত বলে মন্তব্য করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শিরীন আখতার।

সঞ্চালকের বক্তৃতায় এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সিপিডির সম্মানিত ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশে স্থানীয় পর্যায়ে শিক্ষা জোরদার করার জন্য সরকারের উদ্যোগ আছে। আবার চ্যালেঞ্জও আছে।

গুণগত মানসম্মত শিক্ষকের ওপর গুরুত্বারোপ করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, উন্নত মানের শিক্ষক দরকার। শিক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে চাকরির সর্বশেষ পছন্দ হলে এগোনো যাবে না। শিক্ষক হওয়ার জন্য প্রথম বা দ্বিতীয় পছন্দ হওয়া দরকার।

সিপিডির সম্মানিত ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষা আসলে একটি বিনিয়োগ। আমরা যদি এই বিনিয়োগ করি তাহলে পরবর্তী সময়ে মিনিংপুল রিটার্ন দেবে।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ব্রাকের শিক্ষা উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের কর্মসূচি প্রধান সমীর রঞ্জন নাথ, ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ উজ জামান,বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের এডুকেশন গ্লোবাল প্র্যাকটিসের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ সাঈদ রাশেদ আল জায়েদ যশ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধি কাউন্সেলর ইউরাতে স্মলস্কাইট মার্ভিল ও নাদিয়া রশীদ প্রমুখ।

এ ছাড়া উত্তরের তিনটি জেলা গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও এবং নীলফামারী থেকে আসা বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ এবং অন্যান্য সংগঠনের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।