পিএইচডি করা যাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও, হচ্ছে নীতিমালা
পক্ষে-বিপক্ষে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার পর অবশেষে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু হতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) একটি খসড়া নীতিমালা করতে এক কমিটি গঠন করেছে।
বর্তমানে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডি করার সুযোগ থাকলেও ১৯৯২ সাল থেকে চালু হওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তা নেই। শিক্ষা–সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার সুযোগ দেওয়াটা নিশ্চয়ই ভালো উদ্যোগ। কারণ, এখন কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান তুলনামূলক ভালো। এমনকি কিউএস বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিংয়ে দেশের যে কয়টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান করে নিচ্ছে, সেখানে দেশের কোনো কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামও থাকছে।
এ ছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপরিচিত অনেক সাবেক ও বর্তমান শিক্ষক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অধ্যাপনা করছেন। তাঁদের অনেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সময় পিএইচডি গবেষকের তত্ত্বাবধায়ক (সুপারভাইজার) হতে পারলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পারছেন না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার সুযোগ নিশ্চিত হলে তাঁরা সেখানেও তত্ত্বাবধায়ক হতে পারবেন।
প্রাথমিকভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটি নীতিমালার একটি খসড়া করবে। এটি নিয়ে আরও আলোচনা করে তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনোভাবেই পিএইচডি প্রোগ্রাম ঢালাও চালু করা যাবে না। যারা নির্ধারিত মানদণ্ড পূরণ করতে পারবে, শুধু সেসব বিশ্ববিদ্যালয় এ প্রোগ্রাম চালু করতে পারবে। গবেষণার মানের সঙ্গে কোনোভাবে আপস করা যাবে না।
গবেষণামূলক কাজ করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম বড় একটি দায়িত্ব হলেও ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ১৫ শতাংশ গত বছর গবেষণা খাতে এক টাকাও বরাদ্দ রাখেনি।
জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, প্রাথমিকভাবে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটি নীতিমালার একটি খসড়া করবে। এটি নিয়ে আরও আলোচনা করে তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
দেশে এখন অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১৪। তবে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই ভালো করছে, বলা যাবে না; বরং অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, মানসম্মত শিক্ষার জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার, তার পুরোপুরি নেই এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে।
গবেষণামূলক কাজ করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম বড় একটি দায়িত্ব হলেও ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ১৫ শতাংশ গত বছর গবেষণা খাতে এক টাকাও বরাদ্দ রাখেনি।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর উদ্যোগ বেশ ইতিবাচক। তবে মান রক্ষার জন্য পিএইচডির জন্য যেসব শর্ত (গবেষণা, প্রকাশনা ইত্যাদি) রয়েছে তার মানদণ্ড নির্ধারণ করে দিতে হবে।
তবে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকসহ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় তুলনামূলক বেশি ব্যয় করা হয়।
এ পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি করা হচ্ছে, যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা আছে সেগুলোয় পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করা হোক। গত বছর প্রথম আলোর উদ্যোগে আয়োজিত ‘বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি উৎসবে’ এক শিক্ষা সংলাপে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ শিক্ষা–সংশ্লিষ্টরা বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম কাজ হলো গবেষণালব্ধ নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি করা। এ জন্য দরকার স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ের গবেষক শিক্ষার্থী। তাই সীমিত পর্যায়ে হলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
ছয় সদস্যের কমিটি
এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে ইউজিসি। এ কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রোগ্রাম চালুর লক্ষ্যে গত ৪ জুন ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইউজিসির সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগ) অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দকে আহ্বায়ক করে গঠন করা হয়েছে এ কমিটি।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ইউজিসির সদস্য ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক হাসিনা খান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন ও বর্তমানে উত্তরা ইউনিভার্সিটির সহ–উপাচার্য অধ্যাপক গৌর গোবিন্দ গোস্বামী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের (আইবিএস) সাবেক পরিচালক ও গ্রিন ইউনিভার্সিটির কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ, ইউজিসির পরিচালক ওমর ফারুখ।
কমিটির সদস্যসচিব ইউজিসির জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক শরিফুল ইসলাম।
কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, এ কমিটি যত দ্রুত সম্ভব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর জন্য একটি খসড়া নীতিমালা করবে। কমিটি প্রয়োজনীয়সংখ্যক বিশেষজ্ঞ প্যানেল (কমিটি) গঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন একাডেমিক ডিসিপ্লিন ও ক্লাস্টারের উপযোগী পিএইচডি কোর্স ওয়ার্ক বা গবেষণা পদ্ধতিসংক্রান্ত শিক্ষাক্রম বা মডিউল প্রণয়ন করতে পারবে। কমিটি প্রয়োজন মনে করলে এক বা একাধিক সদস্য কো-অপ্ট করতেও পারবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য এম রেজওয়ান খানের সঙ্গে। এখন তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর উদ্যোগ বেশ ইতিবাচক। তবে মান রক্ষার জন্য পিএইচডির জন্য যেসব শর্ত (গবেষণা, প্রকাশনা ইত্যাদি) রয়েছে, তার মানদণ্ড নির্ধারণ করে দিতে হবে। মান ঠিক থাকলে এবং সুপারভাইজারের পূর্ব অভিজ্ঞতা দেখে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পিএইচডি উন্মুক্ত করাই ভালো।