আজকে আমাদের আলোচনা হবে সংখ্যাপদ্ধতি নিয়ে।
দশমিক বা ডেসিমেল সংখ্যাপদ্ধতি: দশমিক বা ডেসিমেল বা ১০–ভিত্তিক সংখ্যাপদ্ধতিতে আমাদের কাছে প্রতীক বা অঙ্ক আছে মোট ১০টি। সেই জন্যই মূলত একে ১০–ভিত্তিক বলে। কিন্তু তোমরা কোনো দিন কি খেয়াল করে দেখেছ যে সংখ্যাগুলো আসলে কীভাবে লেখা হয়?
নিশ্চিন্তে চলতে থাকে, নিজেদের মতো করে এগিয়ে চলে? সংখ্যার চলন কিন্তু খুব মজার। তুমি ০ থেকেই শুরু করে প্রথমে একক স্থান বাদে অন্য সবগুলোতে ০কে ঠিক রেখে শুধু একক স্থানে ০ থেকে ৯ পর্যন্ত লিখে ফেলো। একক স্থানে তো আর এগোনোর জো নেই, তাই এবার দশক স্থানে একটু পরিবর্তন করে সেখানে ১–কে ঠিক রেখে আবার একক স্থানে ০ থেকে ৯ পর্যন্ত লিখে ফেলো।
এভাবেই লেখা হয় ১০–১৯ পর্যন্ত। তারপরে ২০–২৯; ৩০–৩৯; … ... ৯০–৯৯; পর্যন্ত। একক দশকে তো মোটামুটি সব হয়েই গেল। একটি বিষয় খেয়াল করে দেখো, শুরু থেকেই কিন্তু আমরা শতকের স্থানে ০–কে ঠিক রেখে এগিয়ে গিয়েছিলাম। এবার তবে শতকের ঘরে পরিবর্তন আনার পালা।
চলো এটাকে একটু নাড়িয়ে দিই। শূন্যকে বাড়িয়ে করে দেব ১, আর একই সঙ্গে আমরা পেয়ে যাব ১০০, ১০১, ১০২, … … ১৯৮, ১৯৯ পর্যন্ত। এভাবেই একে একে ২, ৩, ৪, ... … চলতে চলতে ৯ পর্যন্ত এসে থামিয়ে দিতে হবে ৯৯৯ পর্যন্ত, অর্থাৎ ৩ অঙ্কের বৃহত্তম সংখ্যাতে। তারপরে? আমি আর তো জানি না বাপু। তোমরাই বুদ্ধি করে বের করো পরের সংখ্যায় যাওয়ার অ্যালগরিদম!
অন্যান্য সংখ্যাপদ্ধতি: একটা কথা চিন্তা করে দেখো তো, আমাদের কাছে ০–৯ পর্যন্ত ছিল বিধায় আমরা ডেসিমেল পদ্ধতিতে লিখতে পারলাম। কিন্তু আমাদের কাছে এই ৯ না থেকে যদি ০–৮ পর্যন্ত থাকত, কি হতো তাহলে?
ওমা, এইটা আবার বলে দিতে হবে নাকি? আমরা ০, ১, ২, ৩, ... … করতে করতে ৮ পর্যন্ত যেতাম। তারপর একলাফে ৯–কে টপকিয়ে ১০–এ! তখন কিন্তু আমাদের বৃহত্তম অঙ্ক হতো ৮, অর্থাৎ দুই অঙ্কের বৃহত্তম সংখ্যা ৮৮, তিন অঙ্কের ৮৮৮। এরপর আমরা যেতাম ১০০০–এ! অর্থাৎ ৮৮৮–এর পরের সংখ্যা হতো ১০০০।
এদিকে একটা কাণ্ড ঘটে গেছে! তুমি কিন্তু মনের অজান্তেই শিখে ফেলেছ ৯–ভিত্তিক সংখ্যাপদ্ধতি। এবার হয়তো তুমি ৮, ৭, ৬, … …, যেকোনো ভিত্তিক সংখ্যাপদ্ধতিতেই লিখতে পারবে সব সংখ্যা। যাদের কাছে এখনো পরিষ্কার নয়, তাদের আমি আরেকটু সাহায্য করে দিই। ৮–ভিত্তিক বা অক্টালে তোমার অঙ্ক থাকবে ৮টি।
অর্থাৎ তুমি ০–৭ পর্যন্ত অঙ্কই ব্যবহার করতে পারবে। এই সময়ে ৮, ৯ হলো তোমার জন্য নিষিদ্ধ অঙ্ক, এগুলো সম্পর্কে তুমি জানোই না বলা চলে। তাহলে ৭–এর পরের সংখ্যা ১০; ৭৭–এর পর ১০০ আর ৭৭৭–এর পরের সংখ্যাটি হবে ১০০০! আর হয়তো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
এ তো গেল মাত্র নয়টা সংখ্যাপদ্ধতির কথা। অর্থাৎ বাইনারি থেকে ডেসিমেল পর্যন্ত আরকি। কেউ যদি এরপরও এগোতে চায়? চায় বলা ভুল হবে, চেয়েছে অনেকে। অথচ ৯ এরপর আর কোনো নতুন গাণিতিক প্রতীক তথা অঙ্ক তৈরি করা কেমন একটা দেখায় না? অতি সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট।
এ ছাড়া আমাদের মূল সিস্টেম হলো ডেসিমেল যাতে অঙ্ক আছেই ১০টি। ফলে আমাদের অঙ্ক ০ থেকে ৯ এর বাইরে চিন্তা করা একটু কঠিন হয়ে যায়। এ জন্যই নতুন কাউকে না এনে যেটা আছে, সেটা দিয়েই কাজ চালাতে হবে। এভাবেই সংখ্যাতত্ত্বের রাজ্যে অনুপ্রবেশ করানো হলো ইংরেজি বর্ণমালাকে। প্রথমে বড় হাতের অক্ষর (Capital Letter)এবং পরে ছোট হাতের অক্ষর (Small Letter) ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
দেখেছ কী বুদ্ধি? অঙ্ক ছিল ১০টি, আর এখন হয়ে গেল ৬২! ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে ৯–এর পরে আসবে A, B, C, ... … X, Y, Z। এটা শেষ হলে ছোট হাতের অক্ষর আসা শুরু হবে a, b, c, ... … x, y, z – এভাবে। তাহলে তুমি যদি ১১–ভিত্তিক সংখ্যাপদ্ধতির প্রচলন করতে চাও, তাহলে তোমার অঙ্ক থাকতে হবে অবশ্যই ১১টি। সেগুলো হবে – ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, A।
তবে এই অ্যালফাবেটকে সংখ্যায় লেখার যে বুদ্ধি, সেটার কেবল ১৬–ভিত্তিক সংখ্যাপদ্ধতি হিসেবে বিশ্বজুড়ে প্রচলিত হেক্সাডেসিমেল নামে। আর বাকিগুলো অর্থাৎ এই যে ১১–ভিত্তিক, ১২–ভিত্তিক, ১৯–ভিত্তিক কিংবা ৬১, ৬২–ভিত্তিক সংখ্যাপদ্ধতি তেমন কোথাও প্রচলিত না থাকায় অনেকে মনে করে এগুলো কোনো লজিক্যাল কিছু নয়।
সেটাও কোনো ব্যাপার না, কারণ পিথাগোরাসকেও এসব সংখ্যা নিয়ে উল্টাপাল্টা গবেষণা করার জন্য এমন অনেক কিছুই বলা হতো। হতে পারে এই সংখ্যা নিয়ে গবেষণা করতে করতে তুমিও হয়ে যেতে পারো এ যুগের পিথাগোরাস।
আজকে তবে এখানেই শেষ করছি। পরের কোনো এক সপ্তাহে হাজির হব কোনো এক নতুন বিষয়ের মজার কিছু আলোচনা নিয়ে। ভালো থেকো তোমরা।