বিষয়: বাংলা | পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি পর্ব-১
উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার স্বপ্ন লাখো শিক্ষার্থীর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, গুচ্ছ পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন চার লাখের বেশি শিক্ষার্থী।
জীবনের অন্যতম এই পাবলিক পরীক্ষায় লাখো পরীক্ষার্থীর মধ্যে নিজেকে সেরা প্রমাণ করার জন্য ভালো প্রস্তুতির বিকল্প নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে কলা বা মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান, আইন, বিবিএ, কিছু ক্ষেত্রে বিজ্ঞান বিভাগের অনুষদগুলোর ভর্তি পরীক্ষায় বাংলা ও সাধারণ জ্ঞান থেকে প্রশ্ন আসে। আমরা ধারাবাহিকভাবে এ দুটি বিষয় থেকে আলোচনা করব। আজ থাকছে বাংলা বিষয় নিয়ে আলোচনা।
সাধারণভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার কোনো নির্দিষ্ট সিলেবাস হয় না। তবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত বছরের আসা প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নিচের বিষয়গুলো থেকে প্রশ্ন আসে—
বাংলা সাহিত্যের যুগবিভাগ ও ইতিহাস
বাংলা ১ম পত্রের নির্ধারিত পাঠ্যসূচির নানা তথ্য ও লেখক পরিচিতি
বাংলা ২য় পত্রের বিষয়গুলো থেকে প্রশ্ন আসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে বহুনির্বাচনি (MCQ) ও লিখিত পদ্ধতির মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ ক্ষেত্রে বাংলা বিষয়ের জন্য এইচএসসি ১ম পত্র (সাহিত্যপাঠ ও সহপাঠ) ও ২য় পত্রের (ব্যাকরণ ও বিরচন/নির্মিতি) ভূমিকা অনেক। যদিও বাংলা ২য় পত্রে এইচএসসি সিলেবাসের বাইরে থেকেও প্রশ্ন আসে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরগুলোর প্রশ্নের আলোকে দেখা যায়, প্রশ্নের বিষয়ের দিক থেকে এইচএসসি বাংলা বিষয়ে পঠিত বিষয়গুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বহুনির্বাচনি পদ্ধতির পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নগুলোতে বছরভেদে ভিন্নতা দেখা যায়। তবে এইচএসসি সিলেবাসভুক্ত বাংলা ১ম ও ২য় পত্রের নির্ধারিত বিষয়গুলোর গুরুত্ব বেশি।
বহুনির্বাচনি প্রশ্নের জন্য বাংলা ১ম পত্রের বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ অংশ—
• অধ্যায়গুলোর উত্স
• প্রকাশের তথ্য
• চরিত্র
• গুরুত্বপূর্ণ উক্তি
• গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
• শব্দার্থ ও টীকা
• কবিতার ক্ষেত্রে মাত্রা ও ছন্দ
• লাইনগুলোর বিন্যাস
• পঙ্ক্তির ব্যাখ্যা
• লেখকদের জন্ম-মৃত্যু, জন্মস্থান, উল্লেখযোগ্য রচনা, প্রাপ্ত পুরস্কার, সাহিত্যের ধরন
• বাংলা সাহিত্যের যুগবিভাগ ও ইতিহাস
• গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিকদের রচিত গ্রন্থের নাম
• সাহিত্যিক বিভিন্ন চরিত্র ও উক্তি খেয়াল রাখতে হবে।
বহুনির্বাচনি প্রশ্নের জন্য বাংলা ২য় পত্রের বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ অংশ—
• সন্ধি
• বাচ্য
• বচন
• সমাস
• বানান
• উপসর্গ
• অনুবাদ
• উচ্চারণ
• বাগ্ধারা
• ধ্বনিতত্ত্ব
• দ্বিরুক্ত শব্দ
• বাক্য প্রকরণ
• প্রকৃতি ও প্রত্যয়
• পারিভাষিক শব্দ
• এককথায় প্রকাশ
• শব্দের প্রকারভেদ
• বাক্যের অপপ্রয়োগ
• ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি
• সমার্থক ও বিপরীত শব্দ।
লিখিত অংশের জন্য বাংলা ১ম পত্রের নির্ধারিত অধ্যায়গুলোর অনুচ্ছেদ ও স্তবক ভালোভাবে পড়তে হবে। এখান থেকে অনুচ্ছেদ বা স্তবক আসে এবং তা থেকে প্রশ্ন দেওয়া থাকে। প্রতিটি অধ্যায়ের মূলভাব, গদ্য ও কবিতার লাইনের ব্যাখ্যাও আসতে দেখা যায়। লিখিতের জন্য আরও ভালোভাবে দেখতে হবে সারাংশ ও সারমর্ম, বানান ও বাক্যশুদ্ধি, পদ পরিবর্তন, বিরামচিহ্নের ব্যবহার, সমার্থক ও বিপরীত শব্দ, শব্দ থেকে বাক্য রচনা, বঙ্গানুবাদ, অনুচ্ছেদ রচনা।
বাংলা বিষয়ে ভালো করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্নের নমুনা দেখে নেওয়া উচিত। এতে প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে ভালো ধারণা তৈরি হবে, যা প্রশ্ন সমাধানের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করবে। বাংলা ১ম পত্রের জন্য এইচএসসির সাহিত্যপাঠ ও সহপাঠ কাজে লাগবে। বাংলা ২য় পত্রের জন্য এইচএসসির পাঠ্য অধ্যায় ছাড়াও অন্য অধ্যায়গুলোর প্রয়োজন হবে। সে ক্ষেত্রে নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ২য় পত্রের সিলেবাসভুক্ত অধ্যায়গুলো দেখা যেতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা একটি যুদ্ধ। নিয়মমাফিক পড়াশোনা ও প্রচুর পরিমাণ প্রশ্ন-সমাধান এ যুদ্ধে নিজেকে জয়ী করার অন্যতম হাতিয়ার। শুধু জয়ী হওয়া নয়, পছন্দের বিষয়ে পড়াশোনা করার জন্য মেধাক্রমে থাকতে হবে ওপরের দিকে। লাখো শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন হওয়ার এ ভর্তির যুদ্ধে মেধাক্রমে উচ্চতরে থাকার জন্য বাংলা হবে সবচেয়ে উপযোগী বিষয়।
সবার জন্য শুভকামনা।
পরবর্তী দিন আমরা সাধারণ জ্ঞান নিয়ে আলোচনা করব। এরপর আসবে গুরুত্বপূর্ণ বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর। তাই প্রতিটি লেখা মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।
রাহাদ হোসেন, (প্রাক্তন শিক্ষার্থী,ঢাবি), প্রভাষক, স্কুল অব জেনারেল এডুকেশন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা