শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের উৎসাহ, অভিভাবকদের উৎকণ্ঠা: ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক মূল্যায়ন
নতুন শিক্ষাক্রম অনুসারে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক মূল্যায়ন শুরু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। আজ সোমবার ছিল বার্ষিক মূল্যায়নের দ্বিতীয় দিন। বার্ষিক মূল্যায়ন নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। শিক্ষার্থীরা ক্লাসের পড়া ক্লাসেই শেষ করেছে। যা কিছু শিখেছে, তার বাস্তব প্রয়োগও তারা স্কুলেই শিখছে এবং অধিকাংশ বিষয়ে তাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করেছে। যেটাকে শিক্ষকেরা বলছেন জীবনঘনিষ্ট শিক্ষাব্যবস্থা।
এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়েই ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে মূল্যায়নে অংশগ্রহণ করছেন, যদিও কিছু কিছু বিষয়ে আরও অনুশীলন এবং তত্ত্বীয় আলোচনা থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা তাঁরা বলছেন। অপর দিকে অধিকাংশ অভিভাবক বলছেন যে শিক্ষার্থীরা বাসায় গিয়ে কোনো পড়াশোনা না করে বিভিন্ন এক্টিভিটি তথা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেদের ব্যস্ত রাখছে। যদিও তারা পড়াশোনা একেবারেই করছে না এমন নয়, তবে যেহেতু আগের মতো পরীক্ষা নেই, তাই শিশুদের মধ্যে পড়াশোনা করার কোনো তাগিদ বা চাপ নেই। ফলে ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে, যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় তারা কীভাবে অংশ নেবে, তা নিয়ে অভিভাবকেরা রয়েছেন উৎকণ্ঠায়।
নিচে ছবিতে দেখুন মূল্যায়নের বিভিন্ন চিত্র। ছবি: প্রথম আলো
ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আজ গণিত, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং জীবন ও জীবিকা—এই তিনটি বিষয়ের প্রথম দিনের মূল্যায়ন সম্পন্ন করেছে। সপ্তম শ্রেণির জন্য আজ ছিল বিজ্ঞান, ধর্ম এবং ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের প্রথম দিনের মূল্যায়ন। প্রতিটি বিষয়ের জন্য ৯০ মিনিটের একেকটি সেশনে এই মূল্যায়নকার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এভাবে একটি বিষয়ের জন্য মোট তিন দিনে মূল্যায়নের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। প্রথম দুই দিনে থাকছে দলগত ও একক মূল্যায়ন। আর তৃতীয় দিনে থাকবে প্রেজেনটেশন।
আজ ঢাকার বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে দেখা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা দলগত মূল্যায়নের অংশ হিসেবে কাজের জন্য বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে। তাদের সামনে রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ।
আজকের মূল্যায়ন কীভাবে হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের এমন প্রশ্ন করা হলে তারা জানায়, ‘এখন আমাদের ষষ্ঠ শ্রেণির স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ের দলগত মূল্যায়নের প্রস্তুতি চলছে। তাই আমরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে বসেছি। এখানে আমাদের শিক্ষক নির্দেশনা দিয়েছেন যে আমরা প্রত্যেকে কিছু কিছু স্বাস্থ্যবিষয়ক সমস্যা খুঁজে বের করব এবং সেগুলোর তালিকা করব। তারপর সেগুলো কীভাবে সমাধান করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করব এবং সেগুলো লিখব। সেখান থেকে একটি সমস্যা আমরা আমাদের শিক্ষককে জানাব, যেটার সমাধান করার জন্য আমরা স্কুলের সবাই কাজ করতে পারি।’
একই শ্রেণির অন্যান্য গ্রুপের শিক্ষার্থীরাও একইভাবে কাজ করছিল। তারা নিজেরাই বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করেছে, যেগুলোর মধ্যে ছিল স্কুলের আঙিনায় কীভাবে আরও গাছ লাগানো যায়, শ্রেণিকক্ষে কীভাবে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস নিশ্চিত করা যায়, শ্রেণিকক্ষ কীভাবে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখা যায়, করিডর আর দরজা-জানালাগুলো কীভাবে নিজেরাই নোংরা হওয়া থেকে বাঁচাতে পারে, স্কুলের টয়লেটের সাবানগুলো কীভাবে নোংরা হওয়া থেকে বাঁচানো যায়, টয়লেটগুলো ব্যবহারের পর নিজেরা কীভাবে পরিষ্কার রাখা যায়, খাবার পানির জার ও গ্লাসগুলো যেভাবে জীবাণুমুক্ত রাখা যায়—এ জাতীয় নানা বিষয় উঠে এসেছে তাদের তালিকা থেকে।
শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের দায়িত্বে থাকা শিক্ষককে মূল্যায়নের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, ‘শিক্ষার্থীদের স্কুলের স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করতে বলেছিলাম, যেগুলো নিয়ে আমরা সমাধানের জন্য কাজ করতে পারি। তারা পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে এমন অনেক সমস্যা চিহ্নিত করেছে, যেগুলোর বিষয়ে এর আগে সামষ্টিকভাবে শিক্ষার্থীরা সচেতন ছিল না এবং তারা নিজেরাই এসব সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের করছে। আমরা স্কুলের পক্ষ থেকে এসব সমাধান বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত থাকায় আশা করি, শিক্ষার্থীদের শুধু শিক্ষণদক্ষতারই উন্নয়ন ঘটবে না বরং সার্বিক জীবনমান পরিবর্তনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।’
শিক্ষার্থীরা বলছে, আগে বইয়ের বিষয়গুলো বার্ষিক পরীক্ষায় শুধু খাতায় ভালোভাবে লিখতে পারার মধ্যেই তাদের যোগ্যতা নির্ধারিত হতো। কিন্তু এখন সেসব বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা ও সমাধানের পথ খুঁজে বের করার মাধ্যমে তারা বিষয়গুলো সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারছে। নিজেরা কীভাবে সেই সমাধান বাস্তবায়ন করবে, সেটা নিয়ে কাজ করার ফলে তারা কোনো একটা বিষয়ে শিক্ষার সুফল হাতেনাতে পাচ্ছে।
তবে কিছু শিক্ষার্থী বলছে, গণিত বইয়ের সব বিষয়বস্তু যেহেতু এখনই দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করার সুযোগ নেই, ফলে মূল্যায়নের সময় এমন কিছু সমস্যার সমাধান তাদের করতে হচ্ছে, যেগুলো তারা ভালোভাবে পারছে না। এ ক্ষেত্রে পাঠ্যবইয়ে আরও বেশি অনুশীলনী যুক্ত করা হলে হয়তো তারা গণিতের বিষয়বস্তুগুলো আরও ভালোভাবে রপ্ত করতে পারবে।