জ্যামিতিতে খুবই পরিচিত একটি চিত্র হচ্ছে বৃত্ত, যার কেন্দ্রে ৩৬০° কোণ উৎপন্ন হয়—এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু কেনই ৩৬০°? ১০০° বা অন্য কোনো সংখ্যা নয় কেন? এসব ভাবনা প্রায়ই আমাদের মাথায় আসে। কিন্তু আমরা কি কখনো এই বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেছি? চলুন, আমরা আজ বিষয়টা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।
প্রকৃতপক্ষে এসব প্রশ্নের সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। তবে কিছু কিছু ব্যাখ্যা অনুমান করা হয়। আমরা এখানে কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি বুঝতে চেষ্টা করব…
∎ ১০ বা ১০০ গণনার ক্ষেত্রে খুবই সহজ। তা সত্ত্বেও তারা ৩৬০ ব্যবহার করল। কারণ, ৩৬০–কে ১ থেকে ১০ পর্যন্ত (৭ বাদে) সব স্বাভাবিক সংখ্যা দ্বারাই ভাগ করা যায়! ৩৬০–এর মোট ২৪টা উৎপাদক আছে, যা ৩৬০ থেকে ছোট অন্য কোনো পূর্ণসংখ্যার নেই (এই ধরনের সংখ্যাকে উচ্চতর যৌগিক সংখ্যা বলা হয়)! কিন্তু ১০০–কে ৩ দ্বারা ভাগ করলে আমরা পাব ৩৩.৩৩! কিন্তু এই মানটা হিসাবের ক্ষেত্রে কতটা ঝামেলা তা ভেবে দেখুন তো।
∎ আমরা যদি বৃত্তের ব্যাসার্ধের সমান বাহু নিয়ে সমবাহু ত্রিভুজ আঁকি, তাহলে বৃত্তের অভ্যন্তরে ছয়টি সর্বসম সমবাহু ত্রিভুজ পাব। নিচের চিত্রের মতো—
তাহলে কেন্দ্রে উৎপন্ন কোণ (৬০° × ৬) = ৩৬০°! ১৯৫০ সালের দিকে প্রাচীন ব্যাবিলনে একটা কাদামাটির ফলক আবিষ্কৃত হয়। ওই ফলকে বৃত্তের মাঝখানে দেখা যায় একটা ষড়ভুজ আঁকা, যা ৬টি সর্বসম সমবাহু ত্রিভুজে বিভক্ত ছিল। চিত্রের মতো। কিন্তু সমবাহু ত্রিভুজের কোণকে কেন ৬০° ধরা হলো?
প্রাচীন ব্যাবিলনীয়রা সংখ্যা লেখার জন্য ৬০টি ভিন্ন ভিন্ন প্রতীক ব্যবহার করত! তারা ৬০–কে ভিত্তি সংখ্যা হিসেবে নিয়েছিল। কারণ, ৬০ হলো ৩৬০–এর মতো উচ্চতর যৌগিক সংখ্যা। আবার আমরা অনেক সময় আমাদের হাতের আঙুলে সংখ্যা গণনা করি।
অনেক গণিতবিদ মনে করেন প্রাচীন ব্যাবিলনীয়রাও এভাবে গণনা করত। তারা প্রত্যেক আঙুলে তিন ঘর করে গণনা করত। তাহলে এক হাতে গণনা করতে পারত (৩ × ৪) = ১২ ঘর পর্যন্ত। তারা বুড়ো আঙুলে গণনা করত না। কারণ, ওই আঙুল দিয়ে অন্য আঙুল গোনার নির্দেশ করত। তারা গণনা করত ডান হাতে এবং বাম হাতে হিসাব রাখত কতবার গণনা করা হয়েছে। যেহেতু বাম হাতে ৫টি আঙুল। তাই ৫ বার গণনা শেষ হলে সব মিলে গণনা করতে পারত (১২ × ৫) = ৬০ ঘর পর্যন্ত! অনেক গণিতবিদই ৬০–কে ব্যবহারের এই কারণ মনে করেন।
∎ বছরের হিসাবের সঙ্গে ৩৬০°–এর অনেকটা মিল আছে। আমরা জানি, সূর্যকে পৃথিবী ৩৬৫.৫ ≈ ৩৬৬ দিনে একবার প্রদক্ষিণ করে। এই সময়কে আমরা এক বছর বলি। চাঁদ তার এক দশা থেকে আবার ওই দশাতে ২৯.৫ দিনে ফিরে আসে। এই সময়টা চন্দ্রের হিসেবে এক মাস। একটা ঋতু আবার ওই ঋতুতে ফিরে আসতে সময় লাগে ১২ মাসের মতো। এটা আসলে চক্রাকার। তাহলে একটা ঋতু আবার ওই ঋতুতে ফিরে আসতে মোট সময় লাগে (২৯.৫ × ১২) = ৩৫৪ দিন।
এখন আমরা যদি ৩৬৬ ও ৩৫৪–এর গড় করি, তাহলে পেয়ে যাব ৩৬০! কিন্তু প্রাচীন ব্যাবিলনীয়রা কি জানত যে এক বছর হয় ৩৬৫.৫ দিনে? মনে করা হয় যে তৎকালীন ব্যাবিলনীয় জ্যোতিষীগণ এক বছর ৩৬০ দিনে হিসাব করেছিলেন! কারণ, তারা খেয়াল করেছিল যে চাঁদ পূর্ণিমা থেকে আবার পূর্ণিমায় ফিরে আসতে ৩০ দিনের মতো সময় লাগে।
এই সময়কে তারা মাস হিসাবে ধরেছিল। আবার এক ঋতু থেকে আবার ওই ঋতুতে ফিরে আসতে সময় লাগে প্রায় ১২ মাসের মতো। এভাবেই তারা বছর হিসাব করেছিল (৩০ × ১২) = ৩৬০ দিনে (যদিও তারা মনে করত সূর্য পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরে!)।
এভাবেই ৩৬০°–এর ব্যবহার হয়ে আসছে। এই ৩৬০°–কে ৩৬০ ভাগ করে যে মানটা পাওয়া যায়, তাকে ১° হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।