মুক্তিযুদ্ধ - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, অধ্যায় ১ | পঞ্চম শ্রেণি

পঞ্চম শ্রেণির পড়াশোনা

আনোয়ার হোসেনের তোলা এই ছবিটি হয়ে উঠেছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়ের প্রতীক।১৯৭১–এ এটি তোলা হয়েছিল ঢাকার দোহারের একটি গ্রাম থেকে

অধ্যায় ১: যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্ন

প্রশ্ন: কত সালে বাঙালিরা ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে? আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ কীভাবে শুরু হয়? এমন ৪টি ঘটনার কথা উল্লেখ করো যা মুক্তিযুদ্ধ সংঘটনে ভূমিকা রেখেছিল? 

উত্তর: ১৯৫২ সালে বাঙালিরা ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়।

আমাদের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ সংঘটনে ভূমিকা রেখেছে এমন চারটি ঘটনা হলো—

১. ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন

২. ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান

৩. ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় হওয়ার পরও ক্ষমতা না দেওয়া

৪. ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নারকীয় গণহত্যা ও বাঙালিদের প্রতিরোধ।

প্রশ্ন: ১৯৭১ সালের বাঙালি জাতির গৌরবময় ঘটনা কোনটি? কত সাল থেকে পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালির ওপর অত্যাচার ও নিপীড়ন শুরু করে? মুক্তিযুদ্ধের তাত্পর্য চারটি বাক্য লেখো। 

উত্তর: ১৯৭১ সালের ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ’ বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গৌরবময় ঘটনা। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের ওপর শুরু করে অত্যাচার ও নিপীড়ন।

মুক্তিযুদ্ধের তাত্পর্য লেখা হলো—

১. মুক্তিযুদ্ধের ফলেই পৃথিবীর বুকে আজ আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন দেশ। 

২. মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে আমরা পেয়েছি নিজস্ব একটি ভূখণ্ড, একটি নিজস্ব পতাকা।

৩. আমরা পেয়েছি স্বাধীন মতপ্রকাশের  অধিকার।

৪. পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে পেরেছি।

প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ভূমিকা কী ছিল? সাধারণ মানুষ কীভাবে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে? 

উত্তর: বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে নারীর ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক নারী প্রশিক্ষণ নিয়ে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। আবার অনেক নারী খাদ্য, আশ্রয় এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ করতে প্রেরণা জুগিয়েছেন।

এ দেশের সাধারণ মানুষ নানাভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন। পুরুষেরা সরাসরি সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। অনেকেই গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছেন। এ দেশের মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

প্রশ্ন: মুক্তিবাহিনী কবে গঠিত হয়েছিল? মুক্তিযোদ্ধাদের প্রিয় স্লোগান কী ছিল? বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বসূচক উপাধি     সম্পর্কে লেখো। 

উত্তর: ১৯৭১ সালের ১১ জুলাই মুক্তিবাহিনী   গঠিত হয়। 

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রিয় স্লোগান ছিল ‘জয় বাংলা’। 

মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার বীরত্বসূচক 

রাষ্ট্রীয় উপাধি প্রদান করেন। মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করে শহিদ হয়েছেন এমন সাতজনকে সর্বোচ্চ ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধি প্রদান 

করা হয়।

এ ছাড়া সাহসিকতা এবং ত্যাগের জন্য আরও তিনটি উপাধি দেওয়া হয়েছে। উপাধিগুলো হলো বীর উত্তম, বীর বিক্রম, বীর প্রতীক।

প্রশ্ন: আমরা কবে স্বাধীনতা দিবস পালন করে থাকি? কতবার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে এই দিবস শুরু করা হয়। আমরা কীভাবে আমাদের স্বাধীনতা দিবস উদ্​যাপন করি? 

উত্তর: আমরা ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস পালন করে থাকি। এ দিনটি আমরা জাতীয়ভাবে উদ্​যাপন করে থাকি। 

এ দিনের শুরু হয় ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে। এরপর জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল 

দেওয়া শুরু হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠন জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশু-কিশোরদের সমাবেশ হয়। জাতীয়ভাবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা তাদের নিজস্ব ইউনিফর্ম পরিধান করে কুচকাওয়াজ ও শারীরিক কসরত প্রদর্শনের মাধ্যমে  প্রধানমন্ত্রীকে সালাম জানায়। প্রধানমন্ত্রী তাদের সালাম গ্রহণ করেন। 

এদিকে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা বাণী প্রদান করে থাকেন। রেডিও-টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে। বিভিন্ন স্থানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা ও দোয়ার আয়োজন করে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে আমরা দিবসটি উদ্​যাপন করি।

রাবেয়া সুলতানা, শিক্ষক, বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল, ঢাকা