বীজগণিতে অজ্ঞাত চলকের মান নির্ণয় সম্পর্কে তো আমরা সবাই জানি। জীবনের অনেকটা সময় গণিতের x কে খুঁজতে ব্যয় করেছি। আমার আজকের আলোচনার মূল বিষয় এটাই। কীভাবে করতে হবে গুপ্ত ঘাতকের সন্ধান? শিখে ফেলি!
বি. দ্র. এখন পড়াশুনা শুরু হবে। প্রথমেই বলতে হবে সমীকরণ সম্পর্কে। ইতিহাসখ্যাত নবম দশম শ্রেণির সাধারণ গণিত বই অনুযায়ী,
“সমীকরণে সমান চিহ্নের দুই পাশে দুটো বহুপদী থাকে অথবা এক পক্ষে শূন্য থাকতে পারে। দুই পক্ষের বহুপদীর চলকের ঘাত সমান না-ও হতে পারে। সমীকরণ সমাধান করে চলকের সর্বোচ্চ ঘাতের সমানসংখ্যক মান পাওয়া যাবে। মান বা মানগুলোকে বলা হবে সমীকরণটির মূল। মূল বা মুলগুলো দ্বারা সমীকরণটি সিদ্ধ হবে। একাধিক মুলের ক্ষেত্রে এগুলো সমান বা অসমান হতে পারে।”
প্রথমবার বইয়ের এই অংশ পড়ার পর আমার মনে হয়েছিল, গণিত করার জন্য রান্না শিখতে হবে। আজব না? আমি করব সমীকরনের সমাধান, সেখানে আবার সেদ্ধ করতে হবে! আগে বইয়ের ব্যাখ্যার সঙ্গে একটু অ্যান্টাসিড মিশিয়ে দিই।
মনে রেখো, সমীকরণের জাত মূলত দুটো বিষয়ের উপরে নির্ভর করে- অজ্ঞাত চলকের পরিমাণ আর সমীকরণের ঘাত। কেবল একটা অজ্ঞাত চলক থাকলে সেটা এক চলকবিশিষ্ট সমীকরণ, দুটো থাকলে দ্বিচলকবিশিষ্ট, এভাবেই নামকরণ করা হয়। আবার সমীকরণের ঘাত 1 হলে এক ঘাত সমীকরণ, ঘাত 2 হলে দ্বিঘাত সমীকরণ।
একটা সমীকরণ 9x + 13 = 7x + 15।
নিয়মানুযায়ী এখানে সমান চিহ্নের দুই পাশে দুটো বহুপদী আছে। এখানে x কে অফিসিয়ালি অজ্ঞাত রাশি বা চলক বলা হয়। যেহেতু একটাই অজ্ঞাত চলক আছে, তাই এটি হলো একচলক বিশিষ্ট সমীকরণ। চলকের সঙ্গে ওই যে 9 আর 7 গুণ আকারে আছে, ওগুলো হলো সহগ। সমীকরণে কিছু সাংখ্যিক মানও দেখা যাচ্ছে। এখানে 13 আর 15 হলো চলকহীন সংখ্যা। এদের নিজেদের নির্দিষ্ট সাংখ্যিক মান আছে, যেটা কখনোই পরিবর্তন করা যায় না। তাই এদের বলে ধ্রুব পদ। এখানে তাহলে দুই রকম পদ দেখা যাচ্ছে- একটার স্বতন্ত্র মান আছে, আরেকটার মান চলকের ওপর নির্ভর করে। সমীকরণকে এ জন্যই বহুপদী বলে।
এবার সমীকরণের পদগুলো সূচকসহ লিখে ফেলি।
9x¹ + 13 = 7x¹ + 15। এখানে একমাত্র চলক x-এর সর্বোচ্চ সূচক বা ঘাত বা শক্তি হলো 1, তাই সম্পূর্ণ সমীকরণের ঘাত হবে 1 এবং এটাকে বলব এক চলকবিশিষ্ট একঘাত সমীকরণ এবং x-এর কেবল এবং কেবলমাত্র একটা মানের জন্যই এই সমীকরণ 324°C তাপমাত্রার সুপার হিটেড ওয়াটার দিয়ে সিদ্ধ হবে।
কিন্তু এই সেদ্ধ করাটা কী?
সহজে বলতে গেলে, x এর কোনো একটা মানের জন্য সমান চিহ্নের উভয় পক্ষ সমান হবে। ওপরের সমীকরণে x = 1 হলেই কেবলমাত্র সমীকরণের দুই পক্ষ সমান হয়, এটা দিয়েই সমীকরণ সিদ্ধ হয়, তাই এটাই হলো সমীকরণের সমাধান, সহজে বললে আমাদের গুপ্ত ঘাতক।
এটা ছাড়া আর কোনো মানের জন্যেই তুমি দুই পক্ষ সমান করতে পারবে না। এত নিশ্চিত করে কীভাবে বললাম জানো? ওই যে সমীকরণের ঘাত 1 বলেছিলাম না? ঐটাই কানে কানে আমাকে বলল যে এটার একটাই সমাধান আছে। আর আমরা তো সেই একজনকে পেয়েও গেলাম।
এখন তাহলে বলো তো, দ্বিঘাত আর ত্রিঘাত সমীকরণ কেমন হবে?
এই উত্তরের জন্য আরেকটা সমীকরণ x³ + x² + x = 0 দেখো। এখানে একমাত্র চলক x এর ঘাত তিন পদে তিন রকম। লক্ষ করো, এখানে ঘাতগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ কিন্তু 3।
তাই পুরো সমীকরণের ঘাত হবে 3 এবং একে আমরা বলব এক চলকবিশিষ্ঠ ত্রিঘাত সমীকরণ। আরেকটা সমীকরণ 5x + 3y² = 17 এ আমরা বলতে পারি ঘাত 2, কিন্তু লক্ষ করে দেখো, এখানে কিন্তু অজ্ঞাত চলক তো দুইটা! x আর y! ঘাত 2 হওয়াতে বলতে পারি এটা দ্বিঘাত সমীকরণ, কিন্তু চলক? এখানে যেহেতু আমাদের চলক একাধিক, তাই বলব দুই চলক বিশিষ্ট দ্বিঘাত সমীকরণ।
তাহলে মোটামুটি সমীকরণের ধরনগুলোর আলোচনা শেষ। পরের পর্বে তোমাদের জন্য থাকবে সমীকরণ সমাধান করার কিছু উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।