শুরুতেই একটা গল্প বলি তোমাদের। ২০১৪ সালে যখন আমি প্রথমবার গণিত উৎসবে অংশগ্রহণ করি সেই সময়ের কথা। অনুষ্ঠান আমার স্কুলে অর্থাৎ যশোর জিলা স্কুলে। অনুষ্ঠানে ফলাফল ঘোষণার সময় বারবার একটিই কথা, ‘আজকে অনেকে ঢাকার টিকিট পাবে, অনেকে এখান থেকেই বিদায় নেবে।’ যখন আমার নামটা ডাকা হলো, এক দৌড়ে স্টেজে উঠে হাতে একটা খাম পেলাম। চিন্তা এল, নিশ্চয়ই ঢাকা যাবার বাসের টিকিট দিয়েছে। খুলে দেখি তিনটি কাজ- জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণের ফরম, স্কুলের জন্য একটা আমন্ত্রণপত্র আর জাতীয় পর্যায়ে যাবার জন্য আমাদের দিকনির্দেশনা।
শেষে লেখা, ‘তোমাদের সেকেন্ড ডিফারেনশিয়াল নেগেটিভ হোক’ আর সঙ্গে মুনির হাসান স্যারের স্বাক্ষর। ডিফারেনশিয়ালের সঙ্গে পরিচিত না থাকলেও নেগেটিভ শব্দটা মাথায় আটকে আছে। নেগেটিভ কেন বলল, সেটি নিয়েই ভেবেছিলাম। তবে তখন সেটির সমাধান পাইনি। যখন বুঝলাম, তখন চেষ্টা করতাম সবাইকে ভালো মন্তব্য করতে এটিই বলব। তোমাদের যদি কেউ এভাবে বলে, ভাববে ভালো বলেছে। কিন্তু নেগেটিভ দিয়ে ভালো মন্তব্য কীভাবে করা যায়, সেটি নিয়েই লিখব এ আলোচনায়।
কার্ভ ফাংশনের গ্রাফ এবং ঢাল: তোমাদের তো মোটামুটি গ্রাফ সম্পর্কে একটা ধারণা আছে। কোনো একটি ঘটনা, একটা ফাংশনের আচার-আচরণ নিয়ে যদি একটা চিত্র আঁকা হয়, তবে তাকে আমরা ফাংশনের গ্রাফ বলতে পারি। খুবই বাজে একটি সংজ্ঞা। গ্রাফ থেকে আমরা উক্ত ফাংশন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারি
চিত্রে x-অক্ষ আর y-অক্ষ বরাবর ফাংশন চলতে থাকে এবং সেই চলার পথকে আমরা হাইলাইট করে বলি যে এটিই উক্ত ফাংশনের গ্রাফ। এইযে x-অক্ষের পরিবর্তনের সাপেক্ষে y-অক্ষের পরিবর্তন, সেটিকে আমরা বলি ঢাল বা নতি। একে m দ্বারা প্রকাশ করা হয়। আরও ভালো করে বিষয়টি বুঝতে হলে নিজেদের বাসার সিঁড়ির কাছে চলে যাও। একদম নিচ থেকে শুরু করে ওপরে উঠতে থাক।
ওপরে ওঠার পরে আমার এই লেখাটা পড়ো। একটা জিনিস খেয়াল করো, তুমি ঠিক যে জায়গা থেকে উঠা শুরু করেছ, ওপরে উঠার পর সেই জায়গা থেকে আরেকটু সামনে এবং ওপরে চলে আসছ। যদি প্রতিটি সিঁড়ির প্রস্থ 25 cm এবং উচ্চতা 50 cm হয়, তবে প্রতিবার তুমি একই সঙ্গে 25 cm সামনে এবং 50 cm ওপরে উঠে এসেছ। এইটুকু যদি বুঝে থাক, তাহলে বলতে পার যে প্রতি 25 cm সামনে এগোতে তোমাকে 50 cm উপরে উঠতে হয়েছে। ঐকিক নিয়ম খাটিয়ে বলে দেওয়া যাবে যে 1 cm সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গে তুমি 2 cm ওপরে উঠে গিয়েছ।
গ্রাফে আমরা সামনে এগোনোকে বলব x-অক্ষে পরিবর্তন এবং উপরে উঠাকে বলব y-অক্ষে পরিবর্তন। একই সঙ্গে ঢালের সংজ্ঞা থেকে বলা যায়, m = (y-অক্ষের পরিবর্তন)/(x-অক্ষের পরিবর্তন)। একে আবার ত্রিকোণমিতিক ফাংশন দ্বারা ঘষামাজা করে আরেকটা রূপে লেখা হয়। অর্থাৎ m = tanθ; যেখানে θ হলো x অক্ষের ধনাত্নক দিকের সঙ্গে স্পর্শক সরলরেখার উৎপন্ন কোণ। আমাদের মূল আলোচনার গ্রাফে এই θ নিয়ে অনেক মজার কিছু জিনিস দেখব।
কার্ভের সিলেক্টেড বিন্দুতে স্পর্শক: স্পর্শক সম্পর্কে তোমাদের হয়তো হালকা-পাতলা ধারণা আছে। একটা বৃত্তচাপ বা কার্ভের যেকোনো একটা বিন্দু থেকে যদি এমন একটা সরলরেখা অঙ্কন করা হয়, যেটি কেবল ওই সিলেক্টেড বিন্দু দিয়ে যাবে, উক্ত কার্ভ সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো বিন্দুকে সে স্পর্শ/ছেদ করবে না, তবে সেই সরলরেখাকে আমরা কার্ভের উক্ত বিন্দুর স্পর্শক বলব। স্পর্শক কেবলমাত্র বক্ররেখার জন্যই সংজ্ঞায়িত হয়। কেননা, সরলরেখার প্রতিটা বিন্দুর জন্য স্পর্শক আসলে উক্ত সরলরেখা নিজেই, আলাদা করে স্পর্শক চিহ্নিত করা সম্ভব না।
জেনে রাখো: কোনো একটা সরলরেখার x-অক্ষের সাপেক্ষে y-অক্ষের মানের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করে আমরা তো সহজেই যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি। এই অনুপাতকে আমরা পূর্বেই নাম দিয়েছি ঢাল (m)। কিন্তু যদি এটি সরলরেখা না হয়ে কার্ভ হয়, তাহলে কি চিন্তা করে দেখেছ? এটার প্রতিটা বিন্দুতে x-অক্ষের একক পরিবর্তনে y-অক্ষের পরিবর্তন কিন্তু একই হয় না। কমপক্ষে একটি বিন্দুতে এই অনুপাত ভিন্ন বলেই আমরা একে সরলরেখা না বলে বক্ররেখা বা কার্ভ বলছি। ভেবে বল তো, ভিন্ন এই বিন্দুর ঢালই যদি ধ্রুব হতো তবে পরিবর্তন কেমন হতো? অর্থাৎ, কার্ভের সব বিন্দু উক্ত বিন্দুর ন্যায় আচরণ করলে আমরা কী কী সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারতাম— সেটাই আমরা বুঝে ফেলতে পারি উক্ত বিন্দুর স্পর্শকের পরিবর্তন, আচার-আচরণ পর্যবেক্ষণ করে।
আজকের আলোচনা এই পর্যন্তই রাখছি। পরবর্তী পর্বে আরও কিছু বিস্তারিত আলোচনা করব। মূলকথা হলো, বিষয়টা তোমাদের বোঝাতে আমাকে অনেকগুলো সাব-টপিক নিয়ে আসতে হবে। সে ক্ষেত্রে একটু বড় হবে সম্পূর্ণ আলোচনাটা।
লেখক: মো. মাহামুদ-উল-হাসান