তোমরা যখন কোনো একটা গ্রাফ অঙ্কন করো (অবশ্যই এমন একটা ঘটনা বা উপাত্তের গ্রাফ, যাতে উত্থান-পতন বিষয়টি জড়িত থাকবে), তখন লক্ষ করবে যে গ্রাফের খুব কমন দুইটি পার্ট হলো চিত্রের এই দুই ধরনের কার্ভ।
একটা আমাদের বোঝায় যে, ফলাফল উন্নতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে, অন্যটি বোঝায় অবনতি হচ্ছে। অনেকটা রোলার কোস্টার ট্রাকের কথা মনে পড়ে গেল, তাই না? চিত্রের প্রথম কার্ভ দিয়ে আমরা বলতে পারি x-অক্ষের সাপেক্ষে y-অক্ষের পরিবর্তন ধীর হয়ে যায়। অর্থাৎ পরিবর্তনের হার কমার সঙ্গে সঙ্গে অনুপাতের মান কমতে থাকে। তবে এখানে কিন্তু y-অক্ষ বরাবর পরিবর্তন ধনাত্বক থাকে। অর্থাৎ ঢাল কমতে কমতে একসময় 0 হয়ে যায়, স্পর্শক x-অক্ষের সমান্তরাল থাকে। কৌণিক হিসাবে বলা চলে যে x-অক্ষের পজিটিভ দিকের সাথে কোণের মান কমতে কমতে একসময় স্পর্শক x-অক্ষের পজিটিভ দিকের সঙ্গে 0° কোণে অবস্থান করে। উল্লেখ্য যে, এই বিন্দুতে উক্ত গ্রাফের ফাংশনে x-এর কোনো একটা মানের জন্য y তার সর্বোচ্চ মান প্রকাশ করে। এখানে কিন্তু y-অক্ষের পরিবর্তন সর্বোচ্চ নয়, y-এর মান সর্বোচ্চ। এই বিন্দুকে আমরা বলব গুরুমান।
চিত্রে A থেকে শুরু করে B পর্যন্ত অংশে y-এর পজিটিভ পরিবতর্ন ঘটে। A বিন্দুতে পরিবতর্ন সর্বোচ্চ। এরপর কমতে কমতে B বিন্দুতে এই পরিবর্তন তথা ঢাল 0 হয়ে যায়। AB অংশে সব স্পর্শক x-অক্ষের পজিটিভ দিকের সঙ্গে সূক্ষ্মকোণে অবস্থান করে। B বিন্দু থেকে C পর্যন্ত ঢালের পরিবতর্ন হয় নেগেটিভ। x-অক্ষের সাপেক্ষে y-র মান কমতে থাকে। ফলে গ্রাফ ক্রমেই নিচের দিকে অগ্রসর হয়। আগের আলোচনার অনুরূপে এবার θ-এর মান নেগেটিভ থাকে। x-অক্ষের পজিটিভ দিকের সঙ্গে সূক্ষ্মকোণ হিসাবের সুবিধার্থে ঘড়ির কাঁটার ঘূর্ণনের দিকে কোণ হিসাব করা হয়েছে। ফলে ত্রিকোণমিতিক কোণ নেগেটিভ হয়, কিন্তু সাধারণ জ্যামিতিক কোণ হয় (180°-θ), যা স্থূলকোণ। B থেকে C পর্যন্ত এই স্থূলকোণ বিরাজ করে। স্থূলকোণের মান B থেকে কমতে কমতে C-তে এসে আবার বেড়ে যায়। ফলে আমরা একসঙ্গে বলতে পারি যে, BC এবং CD অংশে y-অক্ষের কেবল অবনতিই ঘটেছে। DE অংশের D বিন্দু থেকে পুনরায় y-অক্ষ নিজেকে রিচার্জ করে ওপরে উঠতে থাকে। এভাবে E পর্যন্ত পৌঁছে। এখানে DE অংশের সব বিন্দু x-অক্ষের পজিটিভ দিকের সঙ্গে সূক্ষ্মকোণে অবস্থান করে। E-এর পরে আবার AB অংশ রিপিট হয়। এরপরে BC এবং CD অংশ আসে, আবার DE আসে। এভাবেই চলতে থাকে। তোমাদেরকে বাংলা ভাষায় গ্রাফের আদ্যোপান্ত বলে দিলাম। এবার গাণিতিকভাবে একটু বলব।
ক্যালকুলাসে আমাদের এমন উত্থান-পতন টাইপ গ্রাফ দিলে, সেটাতে যতগুলো B বিন্দুর মতো পাবে। অর্থাৎ কোনো একটা ইনপুটের জন্য y-অক্ষের সর্বোচ্চ মান প্রকাশ করে এবং ঠিক তার পরের বিন্দু থেকে y-এর মান কমতে থাকে- এমন সব বিন্দুর মানকে গুরুমান বলে দিব। একইভাবে যেই বিন্দুগুলো D-এর মত আচরণ করবে, অর্থাৎ কোনো একটা ইনপুটের জন্য y-এর সর্বনিম্ন মান প্রকাশ করেছে, সেসব বিন্দুর মানকে আমরা বলব লঘুমান।
একটা বিষয় মাথায় রাখবে যে, গুরুমান কিংবা লঘুমান কিন্তু ফাংশনে x-এর কোনো একটা ইনপুটের জন্য প্রাপ্ত y-এর সর্বোচ্চ কিংবা সর্বনিম্ন মান। তবে গুরুমান সর্বদা বড় হবে কিংবা লঘুমান সর্বদা ছোট, সেটা কিন্তু মোটেই না। একাডেমিক বইতে ক্যালকুলাস পড়তে গেলে এই বিষয়গুলো তোমরা আরো বিস্তারিত জানতে পারবে।
এই যে এতগুলো আলোচনা, শুরুটা মনে আছে তো? আমরা x-অক্ষের সাপেক্ষে y-অক্ষের পরিবর্তন নিয়ে কথা বলছিলাম। ঘুরে ফিরে আবার সেই আলোচনায় ফিরে আসি। কোনো একটা উপাত্তের সাপেক্ষে অন্য একটা সংশ্লিষ্ঠ উপাত্তের পরিবর্তন হিসাব করাকে ক্যালকুলাসে ডিফারেনশিয়েশন করা বলে। নামেই তো কর্মের পরিচয় নিহিত আছে। দুইটি উপাত্তের একটির সাপেক্ষে অপরটি ঠিক কতটা ডিফারেন্ট, সেটা ক্যালকুলেট করতেই আমরা এই বিষয়টা নিয়ে আসি। কোনো একটা গ্রাফের ফাংশনকে যদি আমরা একবার ডিফারেনশিয়েট করি, তবে উক্ত ফাংশনে ইনপুটের সাপেক্ষে আউটপুটের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করতে পারব। এ ক্ষেত্রে প্রাপ্ত ফলকে আমরা উক্ত ফাংশনের ফার্স্ট ডেরিভেটিভ বলব- একেই ঢাল (m) বলেছি।
সাধারণত কোনো ফাংশনে ইনপুট x, আউটপুট y-এরা যথাক্রমে x, y-অক্ষেই অবস্থান করে গ্রাফের কোনো একটা বিন্দুকে নির্দেশ করে। এখানে থেকে একটা ছোট্ট সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি- কোনো গ্রাফের ফাংশনকে একবার ডিফারেনশিয়েট করলে আমরা উক্ত ফাংশনের ঢাল পেয়ে যাব। আমাদের সেই বহুল আলোচিত গ্রাফে AB এবং DE অংশে x-অক্ষের সাপেক্ষে y-অক্ষের পরিবর্তন কিন্তু পজিটিভ।এই দুই ক্ষেত্রেই x-অক্ষের পজিটিভ দিকের সঙ্গে উৎপন্ন কোণ সূক্ষ্মকোণ হয়। আবার এটিও বলা যায়, এই অংশের যেকোনো বিন্দুকে ডিফারেনশিয়েট করলে তার মান পজিটিভ আসবে। তবেগুরুমান বিন্দুতে y-অক্ষের পরিবতর্ন তো শূন্য, ফলে ঢাল শূন্য। অর্থাৎ, গুরুমানের ফার্স্ট ডেরিভেটিভ হলো শূন্য। লঘুমানের জন্যেও একই রকম ঘটনা ঘটে পরবর্তী পর্বে তা আলোচনা করব।