দুই চলকবিশিষ্ট সরল সমীকরণ: আমাদের সমীকরণ সমাধানের প্রায় সব কটি মৌলিক দিক নিয়েই বিগত পর্বগুলোয় বলেছি। তাই এগুলো আর নতুন করে আলোচনা না করে সরাসরি সমাধানের পদ্ধতি নিয়েই বলি।
আমাদের জানা সমাধানের পদ্ধতি আপাতত চারটা, যা জানলে মোটামুটি উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি আরামে পার করা যাবে (যদিও CASIO fx-991EX CLASSWIZ চার ঘাত পর্যন্ত সমাধান করা যায় নিমেষেই)। বলে রাখি, এই সিরিজে আমি আলোচনা করব প্রতিস্থাপন পদ্ধতি, অপনয়ন পদ্ধতি, বজ্রগুণন পদ্ধতি এবং লেখচিত্রের সাহায্যে সমাধান।
বি: দ্র: তোমাকে দুইটা অজ্ঞাত চলক খুঁজতে হবে, তাই তোমাকে অবশ্যই দুইটা সমীকরণ দেওয়া হবে।
আজকের পর্বে প্রতিস্থাপন আর বজ্রগুণন পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। প্রতিস্থাপন পদ্ধতির মূল ব্যাপারটা হলো, তোমাকে দুইটা সমীকরণ দেওয়া হবে। সেখানে দুইটা অজ্ঞাত চলক থাকবে, যাদের মধ্যে দূরসম্পর্কের একটা আত্মীয়তা থাকবে। সেই সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে যেকোনো একটার আপেক্ষিক মান বের করতে হবে। তারপর একটু বীজগণিত করে দুইটা অজ্ঞাত চলক খুঁজে বের করতে হবে।
এবার একটা অঙ্ক সমাধান করে ব্যাপারটা পরিষ্কার করে ফেলি। তোমাকে দেওয়া হলো সমীকরণ x + 6y = 8 এবং 3x + 4y = 10।
লক্ষ করো, এখানে দুইটা চলক x ও y আছে। উভয় সমীকরণে x ও y এর সহগ ভিন্ন। চলো প্রথম সমীকরণ নিয়ে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করে আসি। সমীকরণটা ছিল x + 6y = 8 । এখান থেকে আমরা y এর সাপেক্ষে x এর একটা মান কিন্তু বের করে ফেলতেই পারি। অর্থাৎ, x + 6y = 8; বা, x = 8 - 6y। অর্থাৎ, আমাদের যেখানে যেখানে x আছে, সেখানে 8 - 6y লিখতেই পারি। দ্বিতীয় সমীকরণেই x এর জায়গায় 8 - 6y লিখে দেখো। দ্বিতীয় সমীকরণটা খেয়াল করো।
দেওয়া আছে, 3x + 4y = 10
বা, 3∙(8 - 6y) + 4y = 10
বা, 24 - 18y + 4y = 10
তোমরা কি একটা জিনিস দেখেছ? আমরা কিন্তু দুই চলক থেকে এক চলকবিশিষ্ট সমীকরণে চলে এসেছি। এখন এটা সমাধান করলেই কিন্তু আমাদের কাজ শেষ। চলো করে ফেলি! একটু আগে দেখলে, 24 – 18y + 4y = 10।
তারপর 24 – 10 = 18y - 4y
বা, 14 = 14y
বা, y = 1
একটা সমাধান তো হয়েই গেল। এখন লাগবে x কে। ওপরের সমীকরণ দুইটা থেকে তোমার ইচ্ছেমতো যেকোনো একটাতে y এর মান বসিয়ে দাও। তাহলে সেই সমীকরণে অজ্ঞাত থাকবে একটা চলক। সেটা বের করে ফেলো। আমার পছন্দ হলো দ্বিতীয় সমীকরণটা। এটা দিয়েই কাজটা করব। সমীকরণটা, 3x + 4y = 10। আমরা তো জানি y = 1।
তাহলে, 3x + 4∙1 = 10
বা, 3x + 4 = 10
বা, 3x = 10 – 4
বা, 3x = 6
বা, x = 2
দেখেছ, দুইটা চলকের মান পেয়ে গিয়েছ। একে (x, y) = (2, 1) এভাবে লিখতে পারো।
এবার বজ্রগুণন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করি।
বজ্রগুণন পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে সমীকরণ সমাধান করার একটা অনেক সুন্দর সূত্র আছে, যদিও সেটা কোনো দিনই আমার পছন্দ ছিল না। পরীক্ষায় নম্বরের জন্যই কোনো রকম আয়ত্ত করেছিলাম বলতে পারো।
কীভাবে এই সূত্র এসেছে, সেটা বলে দেই তোমাদের। মনে করো তোমাকে দেওয়া সমীকরণ,
a1x + b1y + c1 = 0 … … (1) এবং a2x + b2y + c2 = 0 … … (2)
প্রথম সমীকরণকে এবং দ্বিতীয় সমীকরণকে দিয়ে গুণ করে ফেলো। (অনেকটা অপনয়ন পদ্ধতিতে সমাধান)। তাহলে পাওয়া যাবে,
a1b2x + b1b2y + c1b2 = 0 … … (3) এবং a2b1x + b1b2y + b1c2 = 0 … … (4)
এবার (3) নং সমীকরণ থেকে (4) নং সমীকরণ বিয়োগ করে ফেলো।
এবারে প্রথম সমীকরণকে a2 এবং দ্বিতীয় সমীকরণকে a1 দিয়ে গুণ করে ফেলো। তাহলে পাওয়া যাবে,
এই সমাধান পদ্ধতিটা আমার কেমন জানি অদ্ভুত লাগে। তবে অনেকটা সহজ, সেটা মোটেই অস্বীকার করব না। যদি উদাহরণ দিয়ে বলি, তোমাকে দুইটা সমীকরণ দেওয়া হবে। আগের দুটো সমীকরণ দিয়েই কাজ করি। প্রথম সমীকরণ x + 6y = 8 থেকে বলা যায়, x + 6y – 8 = 0 (সব কটি পদকে একপাশে এনে)। একইভাবে দ্বিতীয় সমীকরণ x + 4y = 10 থেকে বলা যায়, 3x + 4y – 10 = 0।
এখানে x এর সহগ a1, a2; y এর সহগ b1, b2 এবং ধ্রুব পদগুলোকে c1, c2 বিবেচনা করে সূত্রে বসালেই পেয়ে যাবে এক চলকবিশিষ্ট সমীকরণের আকার। কীভাবে সেটা সমাধান করতে পারো, তা আগের পর্বেই আলোচনা করেছি আমি। সে অনুযায়ী যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ করে সমাধান করলেই পেয়ে যাবে সমাধান।
এর পরের পর্বগুলোয় থাকবে অপনয়ন আর লেখ। আর সব শেষে দুইটা মজার সমীকরণ সমাধান।