নমুনা সৃজনশীল প্রশ্ন - সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র, অধ্যায় ১ | এইচএসসি ২০২৪
পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাস অনুসারে
অধ্যায় ১
রাজু ও রায়হান দুই ভাই। রাজু বুয়েট থেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করে ঢাকা সানফ্লাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার। অপর দিকে রায়হান লেখাপড়া করতে পারেননি। তাঁর কোনো বাস্তব জ্ঞান না থাকায় তিনি মৌসুমি কাজ করে সংসার নির্বাহ করেন।
প্রশ্ন
ক. পেশা বলতে কী বোঝো?
খ. পেশার সঙ্গে বৃত্তির মূল পার্থক্য ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত রায়হানের কাজটি কোন ধরনের? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত রাজু সাহেবের কাজটি কোন ধরনের? আমাদের দেশে রাজু সাহেবের কাজের যৌক্তিকতা ব্যখ্যা করো?
উত্তর
ক. পেশা বলতে বিশেষ কোনো বিষয়ে নির্দিষ্ট জ্ঞান, দক্ষতা ও নৈপুণ্য অর্জনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য অর্জন করাকে বোঝায়।
খ. পেশা ও বৃত্তির মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। পেশার সঙ্গে বৃত্তির মূল পার্থক্য হলো পেশার ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি তাঁর মেধা দক্ষতা, নৈপুণ্য ও তত্ত্বনির্ভর জ্ঞান ও মূল্যবোধের মাধ্যমে জীবিকা অর্জন করেন। কিন্তু বৃত্তির ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির এসবের কোনো প্রয়োজন নেই। কায়িক শ্রম আর কাজে দক্ষতা থাকলেই যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো বৃত্তি গ্রহণ করতে পারেন।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত রায়হানের কাজটিকে বৃত্তি বলা যায়। লোকজন সাধারণত জীবন ধারণের জন্য যেসব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকে, তাকেই বৃত্তি বলা হয়। বৃত্তির জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট জ্ঞান, বিশেষ প্রশিক্ষণ বা পেশাগত নৈপুণ্যের প্রয়োজন হয় না। প্রতিদিনের চলমান কাজই হলো বৃত্তি। যেমন কুলি-মজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসা, দিনমজুর, রিকশাচালক প্রভৃতি। যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো সময় বৃত্তি পরিবর্তন করে অন্য বৃত্তি গ্রহণ করতে পারেন।
উদ্দীপকের রায়হান একজন শিক্ষাবঞ্চিত যুবক। কোনো বিষয়ে সুনির্দিষ্ট জ্ঞান না থাকার কারণে তিনি মৌসুমি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। অর্থাৎ তিনি যখন যে কাজ পান তা-ই করে অর্থনৈতিক প্রয়োজন পূরণ করেন। তাঁর কাজের জন্য কোনো বিশেষ জ্ঞান, দক্ষতা বা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই। তাই তাঁর কাজটিকে বৃত্তি বলাই যৌক্তিক।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত রাজু সাহেবের কাজটিকে পেশা হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়, বাংলাদেশে যার যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে।
পেশা বলতে একটি কারিগরি ধারণা, দক্ষতা, মেধা ও কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নৈপুণ্য ও বিশেষ জ্ঞানসম্পন্ন ক্রিয়াকলাপকে বোঝায়। প্রতিটি পেশা কতগুলো মূল্যবান নীতিমালা ও মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত হয়, যা রাজু সাহেবের কাজের ক্ষেত্রেও লক্ষণীয়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, রাজু সাহেব বুয়েট থেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করে ঢাকা সানফ্লাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছেন। রাজু সাহেবের কাজটি করতে তাঁকে সুনির্দিষ্ট একটি বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান অর্জন করতে হয়েছে, বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে এবং তিনি কর্মক্ষেত্রে বিশেষ কিছু নীতিমালা এবং মূল্যবোধের আলোকে কাজ করছেন। সুতরাং কাজটি পেশা। বাংলাদেশে যেসব কাজকে পেশা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় তার প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রেই সুনির্দিষ্ট জ্ঞান, বিশেষ দক্ষতা অর্জন করতে হয়। মূল্যবোধ ছাড়া কোনো পেশাই পরিচালিত হয় না।
তাই রাজু সাহেবের কাজটিও এর ব্যতিক্রম নয়। পেশার মানদণ্ডের ভিত্তিতেই কাজটি করা হচ্ছে এবং পেশা হিসেবে বর্তমান বাংলাদেশে এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। বর্তমান বাংলাদেশে ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিগুলো দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তা ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই ইঞ্জিনিয়ারদের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। তাই এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট জ্ঞান অর্জন করে এ কাজে নিজেদের দক্ষ করে তোলার মাধ্যমে যে কেউ এই সেক্টরে পেশাগত সাফল্য অর্জন করতে পারবেন বলে আমি মনে করি।
সুতরাং আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে বাংলাদেশে রাজু সাহেবের মতো ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের শতভাগ যৌক্তিকতা রয়েছে।
মোহাম্মদ জসিমউদ্দীন, প্রভাষক, মোহাম্মদপুর মডেল কলেজ, ঢাকা