রচনা: সোনারগাঁ
ভূমিকা: সোনারগাঁও বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান। এর প্রাচীন নাম সুবর্ণগ্রাম। প্রাচীন যুগে এটি বঙ্গ বা সমতট রাজ্যের রাজধানী ছিল। মধ্যযুগে এটি বন্দরনগরী হিসেবে গড়ে ওঠে। চীন, ইন্দোনেশিয়া ও মালয় দ্বীপপুঞ্জের সাথে এর বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। পরে এটি দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার রাজধানী ছিল। ঈশা খাঁ ছিলেন এ অঞ্চলের শাসনকর্তা।
অবস্থান: ঢাকার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে সোনারগাঁও। ঢাকা থেকে দূরত্ব ২৭ কিলোমিটার। এটি নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি দর্শনীয় এলাকা। যাত্রাবাড়ী পার হয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম সড়ক ধরে কাঁচপুর ব্রিজ পেরুলেই সোনারগাঁও উপজেলা শুরু। এরপর মোগরাপাড়া বাসস্ট্যান্ডে নেমে অল্পদূর এগোলেই সোনারগাঁও।
শিল্প-সংস্কৃতি কেন্দ্র: প্রাচীনকাল থেকেই সোনারগাঁও শিল্প-সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছিল। এখানকার তৈরি ‘মসলিন’-এর খ্যাতি ছিল বিশ্বজোড়া। পরে এটি ‘জামদানি’ও সুতি কাপড়ের প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
দৃষ্টিনন্দন সোনারগাঁও: সোনারগাঁওজুড়ে সবুজের সমারোহ। পরিখা ও লেক দিয়ে প্রায় ঘেরা। প্রাচীন মসজিদ, ব্রিজ ও প্রাসাদগুলোর কারুকাজ সত্যিই মন কেড়ে নেয়। মসজিদ ও ছোট উঁচু ব্রিজ মুঘলরা বঙ্গদেশে আসার আগে ১৫১৯ সালে নির্মিত হয়েছিল। পানাম নগরীর বর্তমানে বিদ্যমান দালানগুলো জরাজীর্ণ হলেও সূক্ষ্ম ও দৃষ্টিনন্দন নির্মাণকাজ অপূর্ব মনে হয়।
লোকশিল্প জাদুঘর: পানাম নগরীর অন্যতম আকর্ষণ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের প্রতিষ্ঠিত লোকশিল্প জাদুঘর। এখানে রয়েছে প্রখ্যাত পুরাকীর্তি সর্দারবাড়ি। সামনে পুকুরপাড়ে ঘোড়ায় আরোহী সৈনিকের ভাস্কর্য। শান্ত পুকুর। আর এর পাশেই লোকশিল্প জাদুঘর। এ জাদুঘরে রয়েছে কাঠের তৈরি জিনিস, মুখোশ, মাটির পাত্র, মাটির পুতুল, বাঁশ-লোহা-কাঁসার তৈরি নানা জিনিসপত্র ও অলংকার। এ ছাড়া এখানে রয়েছে প্রাচীনকালে ব্যবহৃত তরবারি, বল্লম ইত্যাদি অস্ত্র। পাশের ভবনে রয়েছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের অনেক বিখ্যাত ছবি, নকশিকাঁথা, জামদানি শাড়ি ইত্যাদি।
উপসংহার: সোনারগাঁও এলে তারই স্পর্শ অনুভব করা যায়। এর ইতিহাস ও ঐতিহ্য সত্যিই অসাধারণ।
খন্দকার আতিক, শিক্ষক, উইল্স লিট্ল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা