বোর্ড পরীক্ষার প্রস্তুতির ১০টি কার্যকর অভ্যাস

বোর্ড পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে এমন ১০টি অভ্যাস তুমিও গড়ে তুলতে পারো, যা তোমাকে বোর্ড পরীক্ষায় সাফল্য এনে দেবে। চলো দেখে নেওয়া যাক।

১. পড়ার পরিকল্পনা ও সময়সূচি

পড়তে বসার আগেই তোমার পড়ার বিষয়বস্তু ও সময় নিয়ে ভালো পরিকল্পনা তৈরি করো। ভালো পরিকল্পনা তৈরি করতে পড়ার বিষয়গুলো কয়েকটি সেশনে ভাগ করে নাও। প্রতিটি সেশনের জন্য সময় নির্দিষ্ট করো এবং পড়ার মাঝে বিরতির জন্য সময় রাখো। আর অবশ্যই, বোর্ড পরীক্ষার রুটিনটি পড়ার টেবিলের সামনে টাঙ্গিয়ে রাখবে। এতে পড়াশোনার প্রতি একটা দায়বদ্ধতার জায়গা তৈরি হবে।

২. সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য তৈরি করো

প্রতিটি সেশন শেষ করার মাধ্যমে তুমি কোন কোন লক্ষ্য অর্জন করতে চাও, সেগুলো আগে থেকেই ঠিক করে নাও। যেমন ২৫ মিনিটের একটি সেশনের মাধ্যমে তুমি জীববিজ্ঞানের সপ্তম অধ্যায়ের বিগত বছরগুলোর প্রশ্নগুলো রিভিশন দিতে চাও। এভাবে প্রতিটি সেশনের লক্ষ্য তৈরি করো এবং প্রতিদিনের একটি সমন্বিত লক্ষ্যও তৈরি করো। এভাবে পরীক্ষার আগের পুরো সময়টার লক্ষ্য তৈরি করে নাও।

৩. পড়ার টেকনিক

তুমি কীভাবে পড়বে, সেটা ঠিক করো। কিছু পড়া, নোট করা, তারপর অনুশীলন করা, একই ধরনের সমস্যাগুলোর সমাধানের প্র্যাকটিস করা—এভাবে পড়বে, নাকি শুধু প্র্যাকটিস করবে অথবা নোটগুলোতে চোখ বোলাবে, সেটা ঠিক করে নাও। তবে বোর্ড পরীক্ষা সামনে রেখে পড়া, নোটগুলোতে চোখ বুলিয়ে নেওয়া ও প্রয়োজনে নতুন কিছু নোট টুকে রাখা, প্র্যাকটিস করা—এভাবে এগোলে ভালো হবে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

৪. একাধিক বই থেকে পড়লে ভালো

আমাদের দেশে সাধারণত উচ্চমাধ্যমিক, তথা এইচএসসিতে একটি বিষয়ে একাধিক লেখকের পাঠ্যবই থাকে। এমন হয়, কোনো লেখকের বইতে অধ্যায় ৩ ভালোভাবে বোঝানো হয়েছে, আবার অন্য আরেকটি বইতে অধ্যায় ৪ ভালোভাবে বোঝানো হয়েছে। তাই যদি সামর্থ্য থাকে, তাহলে একাধিক বই থেকে বাছাই করে পড়লে ভালো। আর এখন অনলাইনে অনেক রিসোর্স পাওয়া যায়। ফলে অনলাইনের এই সুযোগ কাজে লাগানো যেতে পারে। তবে যাদের বোর্ড পরীক্ষা খুব কাছে, আর মাত্র দু-তিন মাস বাকি আছে, তাদের জন্য একাধিক বই কিংবা রিসোর্স ঘাঁটাঘাঁটি করা ঠিক হবে না। এই পদ্ধতি শুধু তাদের জন্য, যারা বছরের শুরু থেকেই বোর্ড পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে চায়, তাদের জন্য ভালো হবে।

৫. বিগত বছরের প্রশ্ন দেখা

প্রতিবছরই বোর্ড পরীক্ষায় কিছু না কিছু প্রশ্ন বিগত বছরের প্রশ্ন থেকে আসে। তবে আসবেই, এমনটা বলা যাবে না। আসার সম্ভাবনা খুব বেশি। আর বেশির ভাগ প্রশ্নের ক্ষেত্রে যেটা দেখা যায়, হুবহু বিগত বছরের প্রশ্ন থেকে না এলেও একই রকমের প্রশ্ন আসে। প্রশ্নের ধরন মোটামুটি একই থাকে। তাই বোর্ড পরীক্ষার প্রস্তুতির একটা বড় অংশজুড়ে থাকা উচিত বিগত বছরগুলোর প্রশ্নের সমাধান করার চেষ্টা করা।

৬. টপিক মনে রাখতে কৌশল

যেসব টপিক একবার পড়া হয়েছে, সেগুলো যাতে দ্বিতীয়বার আবার বিস্তারিত ঘাঁটতে না হয়। সে জন্য ওই টপিকের জন্য যেভাবে ভালো হয়, সেভাবে নিজের মতো করে চার্ট, গ্রাফ, চিত্র, সূত্র, ছন্দ ইত্যাদি তৈরি করে সেগুলো পড়ার টেবিলের সামনে টাঙিয়ে রাখা যেতে পারে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা, উপপাদ্য, সূত্র, লেখকের তথ্য, ব্যাকরণের টার্ম, পরিসংখ্যানের তথ্য ইত্যাদি এভাবে লিখে রাখলে বইয়ের বিষয়গুলো হালকা মনে হবে। পড়া মনে থাকবে এবং একই সঙ্গে খুব দ্রুত একই ধরনের তথ্যের মধ্যে সম্পর্কও বুঝে ফেলা সম্ভব হবে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন রঙের কলম ও কাগজ (কালার পেন ও কালার পেপার) ব্যবহার করা যেতে পারে।

আরও পড়ুন

৭. নিয়মিত রিভিশন দেওয়া

প্রতিটি বিষয় নিয়মিত রিভিশন দেওয়া জরুরি। ধরো, বাংলা প্রথম পত্র দুদিন ধরে রিভিশন দিলে, এরপর এক মাস আর ধরাও হলো না—এমনটা যাতে না হয়। প্রায় সব বিষয়ই দু-এক দিন পরপর রিভিশন দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যদি বিষয়ের সংখ্যা ১০ থেকে ১২টির মধ্যে হয়, তাহলে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬টি বিষয় রিভিশন দেওয়া যেতে পারে। যেমনটা আগেই বলা হয়েছে, ভালো পরিকল্পনা এবং সময় বণ্টন করে নিতে হবে।

৮. মনকে বিক্ষিপ্ত করা যাবে না

বোর্ড পরীক্ষা সামনে থাকলে দেখা যায়, তখন পড়াশোনার বাইরের প্রতিটি জিনিসই খুব আকর্ষণীয় মনে হয়। কারও খেলার দিকে খুব মন টানে, আবার কারও মোবাইল গেমসের দিকে, আবার কারও টিভি সিরিজ কিংবা মুভি দেখার দিকে মন টানে। এটা সাময়িক, পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে এমন আকর্ষণ আর থাকে না। ফলে দেখা যায়, এই সাময়িক মনকে বিক্ষিপ্ত করার সুযোগ দিলে তা বোর্ড পরীক্ষার ফলাফলে বড় ধরনের বিপর্যয় নিয়ে আসে। তাই যদি বোর্ড পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে চাও, তাহলে মনকে কোনো ধরনের বিক্ষিপ্ত হওয়ার সুযোগ দিলে হবে না। পড়াশোনা, খাওয়া, ঘুম, শরীরচর্চা—এই চারের বাইরে আর কোনো দিকে মন দেওয়ার সুযোগ দেওয়া যাবে না।

আরও পড়ুন

৯. নিয়মিত যোগাযোগ রাখা

বোর্ড পরীক্ষার প্রস্তুতিকালীন নিয়মিত শিক্ষক এবং আরও যারা ভালো প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। আড্ডা দেওয়া কিংবা উদ্দেশ্যহীন যোগাযোগ নয়, বরং তোমার সুনির্দিষ্ট সমস্যা, প্রশ্ন নিয়ে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। এমনকি পরিবারে যদি তেমন কেউ থাকেন, যাঁর সঙ্গে আলোচনা করলে পড়াশোনায় সাহায্য হয়, তাহলে নিয়মিত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলবে এবং সমস্যা সমাধান হয়ে গেলে আবার পড়ায় মনোনিবেশ করবে। দেখবে, আলোচনার দ্বারা প্রস্তুতির অগ্রগতি সম্পর্কে নিজের ভেতরে একটা ভালো ধারণা তৈরি হচ্ছে, এভাবে নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়, যা পরীক্ষার হলে বেশ দরকার।

১০. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হও

পরীক্ষা সামনে রেখে শুধু পড়াশোনার ভেতরে থাকলে হবে না। তোমাকে পড়াশোনার পাশাপাশি পুষ্টিকর পরিমিত খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম, হালকা শরীরচর্চা, ধর্মকর্ম—এগুলোর মধ্যে একটা সুন্দর সমন্বয় করে নিতে হবে। একটা স্বাস্থ্যকর শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং জীবনযাপনের এই শৃঙ্খলা যাতে নষ্ট না হয়, তাই যেসব জিনিস মনকে বিক্ষিপ্ত করে, সময়ের অপচয় ঘটায়, সেগুলোকে মন থেকে না বলতে হবে।

আরও পড়ুন