সাইবর্গ হতে চান ৬৩ শতাংশ মানুষ
এত দিন যা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতে ছিল, তা বাস্তবে চলে আসছে। মাথার মধ্যে চিপসেট বসিয়ে মস্তিষ্ককে বানানো হচ্ছে ক্ষুরধার। নানা রোগ নিরাময়ে প্রযুক্তির দ্বারস্থ হচ্ছে মানুষ। সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, প্রয়োজনে প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে প্রযুক্তিমানব বা সাইবর্গে পরিণত হতেও ইচ্ছুক অনেকেই।
অ্যান্টিভাইরাস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ক্যাসপারস্কির অর্থায়নে এমন একটি সমীক্ষা চালিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান দ্য অপিনিয়াম রিসার্চ।
এতে দেখা গেছে, শীর্ষস্থানীয় পশ্চিমা ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ লোক তাঁদের জীবন উন্নত করতে প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহী। মানবদেহের সঙ্গে প্রযুক্তি যুক্ত করার বিষয়টিও বিবেচনা করতে প্রস্তুত তাঁরা। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে উন্নত স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে সাইবর্গে পরিণত হতেও পিছপা হবেন না তাঁরা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে জানানো হয়, আরেকটি প্রযুক্তিবিপ্লবের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে মানুষ। এর নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা বলছেন, প্রযুক্তিবিপ্লব তাঁদের জীবনের প্রতিটি দিক বদলে দেবে। ক্যানসার থেকে রক্ষা থেকে পেতে শরীরকে পরিবর্তন করে ফেলার সুযোগের পাশাপাশি মস্তিষ্ককে টার্বো-চার্জ করার মতো বিষয়গুলো চলে আসবে।
যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেনসহ বিশ্বের ১৬টি দেশের ১৪ হাজার ৫০০ মানুষকে নিয়ে সমীক্ষা চালায় অপিনিয়াম। এতে ৬৩ শতাংশ মানুষ তাঁদের শরীর উন্নত করা জন্য অগমেন্টিং করার বিষয়টি বিবেচনা করার কথা বলেন। অবশ্য ইউরোপজুড়ে সবার মতামতে ভিন্নতা দেখা গেছে।
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডে শরীরে প্রযুক্তির প্রয়োগের বিষয়টিতে সমর্থনের হার কম। যুক্তরাজ্যে ২৫ শতাংশ, ফ্রান্সে ৩২ শতাংশ আর সুইজারল্যান্ডে এ হার মাত্র ৩৬ শতাংশ। সাইবর্গে পরিণত হওয়ার ইচ্ছা পোষণের দিক থেকে এগিয়ে পর্তুগাল ও স্পেন। দুটি দেশের ৬০ শতাংশ নাগরিক শরীর অগমেন্টিং করার পক্ষে মত দেন।
মস্কোভিত্তিক সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ক্যাসপারস্কির ইউরোপ অঞ্চলপ্রধান মার্কোস প্রিউস বলেন, বর্তমান সময়ে মানুষের শরীর অগমেন্টেশনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অগমেন্টেশনে উৎসাহী ব্যক্তিরা ইতিমধ্যে এর সম্ভাব্য সীমা পরীক্ষা করে দেখতে শুরু করেছেন। তবে এ ক্ষেত্রে সাধারণের গ্রহণযোগ্য একটি মান নির্ধারণ করতে হবে। ঝুঁকি কমিয়ে সম্ভাব্য সীমা নির্ধারণ করতে না পারলে এ ক্ষেত্রে বিপদ বাড়তে পারে।
গত মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের বিলিয়নিয়ার উদ্যোক্তা এলন মাস্ক তাঁর নিউরোসায়েন্স স্টার্টআপ নিউরালিংকের সক্ষমতার বিষয়টি দেখিয়েছেন। তিনি এ সময় গারট্রুড নামের একটি শূকরের মস্তিষ্কে ছোট কয়েন আকৃতির একটি চিপসেট দুই মাস ধরে বসিয়ে রাখার কথা বলেন। এ ধরনের চিপ মানুষের মাথায় প্রতিস্থাপন করে রোগ নিরাময়ের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে একে বিবেচনা করা হচ্ছে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, বেশির ভাগ মানুষই তাঁদের শরীরে অগমেন্টেশন প্রক্রিয়া মানবতার কল্যাণে বা ভালো কাজে লাগুক, তা চেয়েছেন। তবে তাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, সাইবর্গ প্রযুক্তি সমাজের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। হ্যাকাররা এ ধরনের প্রযুক্তি হ্যাক করে অসৎ উদ্দেশ্যে কাজে লাগাতে পারে।
সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন, কেবল ধনী লোকেরাই এ ধরনের অগমেন্টেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবেন। এ ধরনের প্রযুক্তি গরিব পর্যন্ত পৌঁছাবে না।