করোনার গবেষণায় দুই সুখবর
কোভিড-১৯ মহামারির অবসানের সর্বোচ্চ প্রত্যাশা একটি টিকা। প্রার্থীর কমতি নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে থাকা ৩৪টি টিকার ওপর চোখ রেখেছে।
এগুলো কতটা ভালো কাজ করবে, তা অবশ্য অন্য বিষয়। ৯ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা তাদের টিকা নিয়ে একজন স্বেচ্ছাসেবী অসুস্থ হয়ে পড়ার পর সাময়িক পরীক্ষা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যেই মানবদেহে সৃষ্ট অ্যান্টিবডি দীর্ঘ সময় অবস্থানের সুখবর দিচ্ছেন গবেষকেরা।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, টিকা তৈরির প্রক্রিয়ায় এ ধরনের বন্ধ রাখার ঘটনা ঘটে থাকে। এটি এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে সব সময় ফল পাওয়ার আশা করা যায় না। অনেক গবেষণা সত্ত্বেও, ডেঙ্গুজ্বরের জন্য কেবল একটি অসম্পূর্ণ টিকা পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডে ১৯৮৭ সালে প্রথম এইচআইভি টিকার পরীক্ষা শুরু হয়। তিন দশক পেরিয়ে গেলেও প্রাপ্তির খাতা শূন্য।
প্রথমবার সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পর তাঁদের শরীরে অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়। দ্বিতীয়বার চার মাস পরের পরীক্ষায়ও তাঁদের অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়। যাঁদের সংক্রমণের তীব্রতা বেশি ছিল এবং যাঁদের হাসপাতাল পর্যন্ত যেতে হয়েছে, তাঁদের শরীরে অ্যান্টিবডির মাত্রা বেশি ছিল। পুরুষ ও বয়স্ক ব্যক্তি, যাঁরা গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকিতে ছিলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এ ফল পাওয়া যায়।
ব্রিটিশ সাময়িকী ‘ইকোনমিস্ট’-এর প্রতিবেদনে জানানো হয়, নতুন দুটি গবেষণাপত্রে কোভিড-১৯-এর উত্সাহজনক খবর মিলেছে। এর প্রথমটি আইসল্যান্ডের জৈব প্রযুক্তি সংস্থা ডিকোড জেনেটিক্সের বিজ্ঞানীদের একটি দল লিখেছে এবং তা ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’-এ প্রকাশ করা হয়।
এতে গবেষকেরা সার্স-কোভ-২ সংক্রমণের পর সেরে ওঠা ১ হাজার ২০০ আইসল্যান্ডের নাগরিকের অ্যান্টিবডির স্তরের উল্লেখ করেছেন। এতে ৯০ শতাংশ নাগরিক দুবার অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় ইতিবাচক ফল দেখিয়েছেন।
প্রথমবার সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পর তাঁদের শরীরে অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়। দ্বিতীয়বার চার মাস পরের পরীক্ষায়ও তাঁদের অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়। যাঁদের সংক্রমণের তীব্রতা বেশি ছিল এবং যাঁদের হাসপাতাল পর্যন্ত যেতে হয়েছে, তাঁদের শরীরে অ্যান্টিবডির মাত্রা বেশি ছিল। পুরুষ ও বয়স্ক ব্যক্তি, যাঁরা গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকিতে ছিলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এ ফল পাওয়া যায়।
‘ইকোনমিস্ট’ লিখেছে, অ্যান্টিবডির চার মাস স্থায়ী হওয়ার খবরটি দুই কারণে আনন্দের। অ্যান্টিবডি যত দিন পর্যন্ত শরীরে টিকবে, তত দিন সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকা সম্ভব। অর্থাৎ, এমন এক টিকার প্রয়োজন হবে, যা অ্যান্টিবডির উত্পাদনকে প্ররোচিত করতে পারে এবং দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা দিতে পারে। এগুলো খুঁজে বের করাও সহজ। এটি আভাস দেয়, ব্যাপক হারে অ্যান্টিবডি শনাক্তকরণ ফলাফল মোটামুটি নির্ভুল হওয়া উচিত।
দ্বিতীয় আরেকটি গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (এমআরসি) ইমিউনোলজিস্ট তাও দং। তিনি টি-সেল শনাক্তকরণে কাজ করেছেন। টি-সেল শনাক্তকরণের প্রক্রিয়া অবশ্য অ্যান্টিবডির মতো এত আলোচিত নয়। তবে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই এবং দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষায় সমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গবেষণাসংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার ইমিউনোলজি’ সাময়িকীতে। তাঁরা বলছেন, গবেষণার ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ মৃদু সংক্রমণের শিকার ২৮ ব্যক্তির রক্তের নমুনা, ১৪ জন গুরুতর অসুস্থ ও ১৬ জন সুস্থ ব্যক্তির রক্তের নমুনা পরীক্ষা করেছেন।
গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়, সংক্রমিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে টি-সেলের তীব্র প্রতিক্রিয়া তাঁরা দেখেছেন। এ ক্ষেত্রে মৃদু ও গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়ার ভিন্নতা পাওয়া গেছে।
এমআরসির গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের কোষে প্রবেশকারী স্পাইক প্রোটিনসহ ভাইরাসের আটটি পৃথক অংশ শনাক্ত করতে পারে টি-সেল। এই লক্ষ্যের তালিকাটি ভবিষ্যতে টিকার পরিশোধনে প্রয়োজনীয় ইঙ্গিত দিতে পারে।
যুক্তরাজ্যের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব রাসায়নিক প্রকৌশলী আল এডওয়ার্ডস সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, রোগের ক্ষেত্রে যে প্রতিরোধী প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, তা প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করছে। এটি চলতে থাকলে তবে তত্ত্ব অনুযায়ী টিকা দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করবে।
‘ইকোনমিস্ট’-এর তথ্য অনুযায়ী, বাস্তবে এসব সুখবর নিয়ে এখনই উল্লসিত হওয়ার কারণ নেই। কারণ ইমিউনোলজি কখনো ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিজ্ঞান ছিল না। এমন কোনো পরীক্ষা নেই, যা নিশ্চিতভাবে দেখাতে পারে যে কোনো টিকা প্রকৃত চেষ্টার চেয়ে কম কাজ করবে।