করোনা দেখিয়েছে ইন্টারনেট মানুষের মৌলিক অধিকার: ওয়েবের জনক
ওয়েবের জনক স্যার টিম বার্নার্স–লি বলেছেন, মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে ইন্টারনেট সংযোগের গুরুত্ব তুলে ধরেছে করোনাভাইরাস মহামারি। তবে এখনো অনেক তরুণের কাছে ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধা পৌঁছায়নি। তাই মহামারির সময়ে ডিজিটাল বৈষম্যের বিষয়টি আরও প্রশস্ত হয়েছে বলেই মনে করেন তিনি।
২০৩০ সালের মধ্যেই সরকারগুলোকে সর্বজনীন ব্রডব্যান্ড সরবরাহের জন্য বিনিয়োগের আহ্বান জানান স্যার টিম বার্নার্স–লি। বিশ্বব্যাপী ওয়েবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তিনি তাঁর বার্ষিক চিঠিতে লিখেছেন, ‘আমরা এটি না করার সামর্থ্য রাখি না।’
ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্যার টিম বার্নার্স–লি ১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট বিশ্বের প্রথম ওয়েবসাইট চালু করেন। বার্নার্স–লির সেদিনের সেই ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব একবিংশ শতাব্দীতে এসে মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। মানুষ যেন দরকারি তথ্য ও নথি সহজে খুঁজে পায়, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে এমন এক ব্যবস্থা বানাতে চেয়েছিলেন তিনি। টিম বার্নার্স–লি সে সময় সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গবেষণা সংস্থা সার্নের সদর দপ্তরে কাজ করতেন।
এখনো বিশ্বের এক–তৃতীয়াংশ তরুণ জনগোষ্ঠীর কাছে ইন্টারনেট সুবিধা নেই। এ ছাড়া অনেকের কাছে বাড়িতে বসে কাজ বা শেখার জন্য মানসম্মত ইন্টারনেট সংযোগ নেই।
স্যার টিম দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে কম খরচে ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে সরকারকে আহ্বান জানিয়ে আসছেন। তাঁর ভাষ্য, ইন্টারনেটকে মানুষের মৌলিক চাহিদা হিসেবে দেখতে হবে। তবেই প্রবৃদ্ধি হবে দেশের। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিত্সা যেমন মানুষের মৌলিক অধিকার, তেমনি কম খরচে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাও মানুষের মৌলিক অধিকার হওয়া উচিত।
এখনো বিশ্বের কয়েক শ কোটি মানুষ ইন্টারনেট সুবিধার বাইরে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সরকারি গোপন নজরদারি ও সেন্সরশিপ ক্রমেই বাড়ছে। টিম বার্নার্স-লি বলেন, ইন্টারনেট মানুষের মধ্যে কেবল তখনই বৈষম্য দূর করতে পারবে, যখন ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন হবে না এবং ইন্টারনেটে মুক্তভাবে নিজের মতামত ব্যক্ত করা সম্ভব হবে।
করোনা মহামারি নিয়ে স্যার টিম বলেছেন, ১২ মাস ধরে এটি একটি জীবনরেখা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে, যা আমাদের মানিয়ে নিতে এবং জীবন চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। তবে তাঁর মতে, এখনো বিশ্বের এক–তৃতীয়াংশ তরুণ জনগোষ্ঠীর কাছে ইন্টারনেট সুবিধা নেই। এ ছাড়া অনেকের কাছে বাড়িতে বসে কাজ বা শেখার জন্য মানসম্মত ইন্টারনেট সংযোগ নেই।
সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকার স্যার টিম বলেন, ‘ওয়েব এখন যত আরও শক্তিশালী হচ্ছে ততই ইন্টারনেট সুবিধা থাকা ও না থাকা মানুষের মধ্যে ডিজিটাল বৈষম্য বাড়ছে। এ বৈষম্য আগেও ছিল। কিন্তু বাড়িতে বসে কাজ করার বা বাড়িতে বসে শেখার এই সময়টাতে এ বৈষম্য আরও পরিষ্কার হয়ে উঠেছে।’
ডিজিটাল বৈষম্যের বিষয়টি শুধু যুক্তরাজ্যেই নয়, এটি বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও বিদ্যমান। যুক্তরাজ্যেও অনেক তরুণের কাছে কাজে লাগানোর উপযোগী ইন্টারনেট সংযোগ নেই। এই কম্পিউটার বিজ্ঞানী তাই ফাইবার ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেট সেবা প্রত্যন্ত অঞ্চলে দ্রুত পৌঁছানোর ওপর জোর দোর। তিনি বলেন, সরকার ও ব্যবসায়ীদের কাছে এটি সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।
স্যার টিম তাঁর চিঠিতে আরও লিখেছেন, অ্যালায়েন্স ফর অ্যাফোরডেবল ইন্টারনেট ইনিশিয়েটিভের তথ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে সবার কাছে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছাতে সরকারি ও বেসরকারি খাতে ৪২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন পড়বে। ওই চিঠিতে বলা হয়, ইন্টারনেট সুবিধা চালু করা গেলে তা উন্নয়নশীল বিশ্বে বিশাল অর্থনৈতিক সুবিধা আনবে।
তবে স্যার টিম ইন্টারনেটজুড়ে ছড়ানো ভুয়া তথ্য ও এর অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিশেষ করে ইন্টারনেটে তরুণীদের লক্ষ্য করে যেসব ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তিনি। স্যার টিম বলেন, ‘করোনা মহামারি আমাদের নতুন করে ভাবার সুযোগ করে দিয়েছে এবং নতুন করে সৃজনশীলতা উন্নতির সুযোগ করে দিয়েছিল। কোনো কিছু ঠিক করার ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক শক্তি জাগানো ও আরও ভালো বিশ্ব গড়ার শক্তি মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে।