শীতে গাড়ির যত্ন

সংগৃহীত

শীত এলেই গরমের পোশাক ও বাড়তি যত্নের দরকার হয় আমাদের। এ সময় বাতাসে আদ্রতা কমে ধুলাবালি বেড়ে যাওয়ায় শখের গাড়িরও প্রয়োজন হয় বাড়তি যত্নের। শীতে গাড়ির যত্ন নেওয়ার কৌশল জানিয়েছেন মটো সলিউশনের স্বত্বাধিকারী জামান এস খান।

ব্যাটারির কার্যকারিতা বৃদ্ধি

গাড়ি না চললে ব্যাটারির ক্ষমতা কমে যায়। এ জন্য প্রতিদিন সকালে গাড়ি চালু করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। এ সময় গাড়ির ড্যাশবোর্ডে সাধারণত সবুজ বা নীল রংয়ের বিশেষ চিহ্ন দেখা যায়। চিহ্নটি নিভে গেলে গাড়ি চালানোর জন্য ব্যাটারিটি প্রস্তুত হয়ে যায়। ব্যাটারির বয়স দুই বছর হলে বদলে নেওয়া ভালো।

ভালো মানের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার

গাড়ি চালুর পর ইঞ্জিন অয়েল ইঞ্জিনের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। তবে শীতকালে বেশি গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করলে তা ইঞ্জিনে ছড়িয়ে পড়তে সময় নেয়। তাই গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা মেনে সঠিক গ্রেডের আসল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করতে হবে। নকল ইঞ্জিন অয়েল গাড়ির কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। সাধারণত ৫ ডব্লিউ থেকে শুরু করে ২০ ডব্লিউ গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল দেশে ব্যবহৃত হয়। এখানে ডব্লিউ দ্বারা আবহাওয়ার ধরন বোঝানো হয়ে থাকে।সামনের কাচ ঝাপসা হলে

বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গে গাড়ির ভেতরের তাপমাত্রার তারতম্য হলে গাড়ির সামনের কাচ ঘোলাটে হয়ে যায়। অনেক সময় দরজার কাচ ও গাড়ির দুই পাশের পেছনে দেখার আয়নাও ঝাপসা হতে পারে। এতে গাড়ি চালাতে সমস্যা হয়। সমস্যা সমাধানে কিছু সময়ের জন্য পাশের কাচ নামালে উপকার পাওয়া যায়। গাড়ির শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের সুইচের পাশে থাকা ফ্রেশ এয়ার মোড, ডিফগ বা ওয়ার্মার ব্যবহার করে কাচের ঝাপসা ভাব দূর করা যায়। অতিরিক্ত ঘোলাটে হলে ওয়াইপারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাচ পরিষ্কার করে নিতে হবে। তবে ওয়াইপারে শুধু পানির বদলে ওয়াশার ফ্লুইড ব্যবহার করা ভালো। এতে গাড়ির সামনের কাচে স্ক্র্যাচ বা সুক্ষ্ম দাগ পড়ে না।

কুয়াশায় ব্যবহার করতে হবে ফগ লাইট

ঘন কুয়াশায় ফগ লাইট (কুয়াশাভেদী আলো) শুধু আলো দেয় না, অন্য চালকের চোখে নিজের গাড়িকে দৃশ্যমান করতেও ভূমিকা থাকে। তাই শীতকালে হেডলাইটের পাশাপাশি ফগ লাইটও ব্যবহার করতে হবে। হেডলাইটের বাল্ব পরীক্ষা করে যদি আলো কম মনে হয়, সে ক্ষেত্রে হেডলাইটের কাচ পরিষ্কার করতে হবে। নতুন মডেলের গাড়িগুলোতে হেডলাইট ওয়াশার সুবিধা থাকে। এটি কাজে লাগিয়ে ধুলাবালি, কুয়াশা বা কাদার কারণে হেডলাইটকে ঝাপসা হওয়া থেকে রক্ষা করা সম্ভব। দেশে প্রচলিত গাড়িগুলোতে হেডলাইট ওয়াশার কভার চুরি হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। তাই নিরাপদ জায়গায় গাড়ি রাখতে হবে।

এয়ার, কেবিন ও ইঞ্জিন অয়েল ফিল্টার পরিবর্তন

তিন থেকে পাঁচ হাজার কিলোমিটার পথ চললেই গাড়ির এয়ার ফিল্টার, কেবিন ফিল্টার ও ইঞ্জিন অয়েল ফিল্টার পরিবর্তন করা ভালো। শীতকালে পরিবর্তনের সময় না এলেও ব্লোয়ার মেশিনের সাহায্যে এয়ার ও কেবিন ফিল্টার পরিষ্কার করতে হবে। মূলত এয়ার ফিল্টারের মাধ্যমে গাড়ির ইঞ্জিনে বিশুদ্ধ বাতাস ঢোকে। তাই ভালোভাবে হাওয়া প্রবেশের সুযোগ দিলে ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা ঠিক থাকবে।

হাইব্রিডে গাড়ির বিশেষ যত্ন

দেশে হাইব্রিড গাড়ির ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। হাইব্রিড গাড়ির পেছনের আসনে এয়ারভেন্ট (বায়ু চলাচলের জায়গা) থাকে। সিটের আবরণ বা যাত্রী বসার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন হাইব্রিড ব্যাটারি ঠান্ডা থাকার পথ বন্ধ না হয়ে যায়। মনে রাখতে হবে, চাকার হাওয়া কম থাকলে সাধারণত গাড়ির জ্বালানির ব্যবহার বেড়ে যায়। তাই শীতকালে ১৫ দিন পর পর চাকার হাওয়া পরীক্ষা করা উচিত। গাড়িতে টিপিএমএস (টায়ার প্রেশার মনিটর সিস্টেম) ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া এখন বহনযোগ্য টায়ার ইনফ্ল্যাটর যন্ত্র পাওয়া যায়, যা দিয়ে সহজে চাকার বাতাসের পরিমাণ মাপা যায়।

নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ

নির্দিষ্ট সময় পর পর অভিজ্ঞ কারিগর বা প্রতিষ্ঠানে গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণসহ সমস্যা শনাক্ত করতে হবে। ছোটখাটো অনেক সমস্যা গাড়িতে যেকোনো সময় দেখা দিতে পারে। সমস্যাগুলো আগে থেকে শনাক্ত করা গেলে অল্প খরচে গাড়ি সব সময় কর্মক্ষম রাখা যায়। বেশি খরচের হাত থেকে বাঁচতে শুধু শীতকালে নয়, সারা বছরই গাড়ির যত্ন নেওয়া উচিত।