রক্ত পরীক্ষায় বিষণ্নতা নির্ণয়ের পদ্ধতি উদ্ভাবন
অধিক বিষণ্নতা এখন গুরুতর এক অসুস্থতার নাম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর চিকিৎসাপদ্ধতি এখনো অধরা। বিষণ্নতা জীবন ধ্বংস করে দিতে পারে। অধিক বিষণ্ন হয়ে পড়লে অনেকে আত্মহত্যার পথে পা বাড়ায়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানাপোলিসের ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল স্নায়ুবিদ বিষণ্নতার কারণ শনাক্তের নতুন পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করেছেন।
তাঁরা দাবি করছেন, বিষণ্নতা নির্ণয়ে এমন কিছু লক্ষণ তাঁরা বের করতে পেরেছেন, যাতে সহজে বিষণ্নতা ধরা যাবে। এ কাজে প্রয়োজন হবে রক্ত পরীক্ষা করা। সম্প্রতি অধিক বিষণ্নতা বা মেজর ডিপ্রেশন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যের সাময়িকী ‘ইকোনমিস্ট’।
বিশেষজ্ঞদের বরাতে ‘ইকোনমিস্ট’ বলছে, অধিক বিষণ্নতা কখনো কখনো বাইপোলার ডিস-অর্ডার নামক একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এটি আবেগজনিত মানসিক সমস্যা।
বাইপোলার অর্থ হচ্ছে দুটি পোল বা মেরু। এক মেরুতে থাকে বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশন, যেখানে আবেগের প্রকাশ কম; কোনো কিছুই ভালো লাগে না, দুঃখবোধ হয়। অন্য মেরুতে অতি উৎফুল্ল বা ম্যানিয়া, যেখানে আবেগের প্রকাশ বেশি। এই পরিস্থিতিতে রোগীর কখনো ম্যানিয়া আবার কখনো বিষণ্নতা দেখা যায়। এটি প্রায় বাইপোলার রোগীর ক্ষেত্রেই দেখা যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন। তবে বিশ্বের কিছু অঞ্চলে চারজনের একজন তাঁর জীবনের বেশির ভাগ সময়ে অধিক বিষণ্নতায় ভুগে থাকেন।
বিষণ্নতা বা হতাশা নির্ণয়ের জন্য একটি সাধারণ মান রয়েছে। এই মান কোনো রোগীর মেজাজের বিষয়ে চিকিৎসকের মূল্যায়নের ওপর নির্ভর করে। এ ক্ষেত্রে রোগের উপসর্গের বিভিন্ন ধরন দেখে থাকেন চিকিৎসক। এসব লক্ষণ রোগীর আচরণের ওপর ভিত্তি করে ঠিক করা হয়। রোগটি নির্ণয়ে নির্ভরযোগ্য জৈব রাসায়নিক উপায় খুঁজছিলেন গবেষকেরা, যাতে তাঁরা রোগটি শনাক্তের পাশাপাশি রোগের পূর্বাভাস দিতে পারেন। বিষণ্নতার নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কার্যকর চিকিৎসাপদ্ধতির খোঁজও করছিলেন তাঁরা। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিদ আলেক্সান্ডার নিকুলেস্কুর নেতৃত্বে গবেষকেরা বিষণ্নতা শনাক্তকরণে সক্ষম এমন একটি ‘মার্কার সেট’ পাওয়ার দাবি করেছেন।
‘মলিকুলার সাইক্রিয়াট্রি’ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাসংক্রান্ত নিবন্ধটি।
এ গবেষণার ক্ষেত্রে গবেষক নিকুলেস্কু ও তাঁর সহকর্মীরা ইন্ডিয়ানাপোলিস ভেটেরানস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন মেডিকেল সেন্টারের কয়েক শ রোগীর ১৫ বছরের তথ্য ও রক্তের নমুনা নিয়ে কাজ করেছেন।
তাঁদের এই গবেষণায় রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড বা আরএনএর ছোট্ট অংশ নিয়ে কাজ করেন তাঁরা। এ পরীক্ষায় তাঁরা বিষণ্নতা নির্ণয়ে বিশেষ আরএনএ মার্কার শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁদের দাবি, রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই বিশেষ আরএনএ মার্কার ঠিক করা সম্ভব। এতে কেবল বিষণ্নতা নির্ণয় নয়, বরং বাইপোলার ডিস-অর্ডার তৈরির পূর্বাভাস দিতে পারে।
‘ইকোনমিস্ট’ বলছে, গবেষক নিকেলেস্কু ও তাঁর সহকর্মী অনন্ত শেখর ইতিমধ্যে মাইন্ডএক্স সায়েন্সেস নামের একটি কোম্পানি তৈরি করেছেন। তাঁরা এখন আরএনএ-ভিত্তিক পরীক্ষাপদ্ধতি নিয়ে কাজ করার জন্য নিয়ন্ত্রকদের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছেন।
তাঁরা আশা করছেন, সবকিছু ঠিকঠাক হলে রক্ত পরীক্ষার পাশাপাশি থুতু ব্যবহার করেও বিষণ্নতা পরীক্ষা করা যাবে। বিশেষজ্ঞরা বিষণ্নতা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে একে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন।