অস্ট্রেলিয়ার স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় কী কী
মেধাবী শিক্ষার্থীদের অন্যতম গন্তব্য ওশেনিয়া মহাদেশের দ্বীপদেশ অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ থাকে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা ও জীবনযাত্রার উচ্চ মানের জন্য অন্য দেশগুলোর তুলনায় এখানকার উচ্চশিক্ষা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ। তাই এখানে পড়াশোনার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের একমাত্র মাধ্যম অস্ট্রেলিয়ার স্কলারশিপগুলো।
অস্ট্রেলিয়ার স্কলারশিপগুলো হলো—
অস্ট্রেলিয়ার স্কলারশিপগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য সেরা স্কলারশিপ হচ্ছে সরকারি কার্যক্রমগুলো। গত দশকজুড়ে বাংলাদেশিরা যে সরকারি স্কলারশিপ অর্জনের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন, সেগুলো হলো—অস্ট্রেলিয়ার সরকারি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম (এজিআরটিপি) এবং অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস।
প্রতিবছর কমনওয়েলথ ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং মাস্টার্স ও পিএইচডিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ প্রদানের লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তহবিল দিয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমেও পরিচালিত হয়ে এজিআরটিপি স্কলারশিপগুলো। এই স্কলারশিপের আবেদনের সময় চলে প্রতিবছর নভেম্বর থেকে পরের বছরের আগস্ট পর্যন্ত।
অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়াডর্স কার্যক্রমটি পরিচালনা করে দেশটির পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অস্ট্রেলিয়ার অধিকাংশ স্কলারশিপ মাস্টার্স পর্যায়ের জন্য হলেও এটির জন্য ব্যাচেলর পর্যায়েও আবেদন করা যায়। এ স্কলারশিপের জন্য আবেদন গ্রহণ প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চলে।
অস্ট্রেলিয়ার স্কলারশিপগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
* এনডেভার পোস্টগ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ। আবেদনের সময়: প্রতিবছর জুলাই/আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত।
* জন অলরাইট ফেলোশিপ। এ বৃত্তিতে আবেদনের সময়: ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত।
* ইউনিভার্সিটি অব সিডনি ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ স্কলারশিপ। আবেদনের সময়: সারা বছরই খোলা থাকে, তবে ভিন্ন ভিন্ন ডেডলাইন ওয়েবসাইটে নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়।
* ম্যাকোয়ারি ইউনিভার্সিটি ইন্টারন্যাশনাল স্কলারশিপ। আবেদনের সময়: সারা বছরই খোলা থাকে, তবে ভিন্ন ভিন্ন ডেডলাইন ওয়েবসাইটে নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়।
* ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ স্কলারশিপ। আবেদনের সময়: সেপ্টেম্বরে শুরু হয়, কিন্তু ডেডলাইননির্ভর করে বাছাই করা কোর্সের ওপর।
* অ্যাডিলেড স্কলারশিপ ইন্টারন্যাশনাল। আবেদনের সময়: ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত।
অস্ট্রেলিয়ার স্কলারশিপের সুবিধা
* এজিআরটিপির ২৮ হাজার ৮৫৪ অস্ট্রেলিয়ান ডলারের স্কলারশিপের আওতায় আছে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার সার্বিক ভ্রমণ ও থিসিস ভাতা। নির্ভরশীল শিশুর ভাতাসহ চিকিৎসা ভাতা, ম্যাটার্নিটি ও প্যাটার্নিটি লিভ।
অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডসে প্রায় সবকিছুই বিনা মূল্যে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে অস্ট্রেলিয়ার সরকার। এর মধ্যে রয়েছে দেশটিতে যাওয়ার জন্য বিমানভাড়া (যাওয়া ও আসার টিকিট), পড়াশোনার সামগ্রিক খরচ, আবাসন, খাওয়ার খরচসহ মাসিক অর্থ। এ ছাড়া নারী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য থাকছে বিশেষ সুবিধা।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব স্কলারশিপগুলোর মধ্যে বেশ বৈচিত্র্য আছে। এগুলোতে প্রায় সরকারি অনুদানগুলোর কাছাকাছি সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্সগুলোর ভিত্তিতে প্রতি মাসে বা বছরে সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে থাকা-খাওয়ার খরচসহ অর্থের পরিমাণ কমবেশি হয়। টিউশন ফি মওকুফ করা হয় শতকরা ১০ থেকে ৮০ ভাগ পর্যন্ত।
স্কলারশিপের জন্য যোগ্যতা
বেশির ভাগ স্কলারশিপ স্নাতকোত্তর পর্যায়ের হওয়াতে স্নাতক সনদ চাওয়া হয়ে থাকে। এখানে ভালো সিজিপিসহ একাডেমিক রেকর্ডের পাশাপাশি গুরুত্ব পায় ইংরেজি ভাষা দক্ষতা এবং টিউশন ফি চালানোর সক্ষমতার প্রমাণপত্র।
আইইএলটিএস স্কোর কমপক্ষে ৬ দশমিক ৫ চেয়ে থাকে, যেখানে মডিউলগুলোতে তথা রিডিং, রাইটিং, লিসেনিং ও স্পিকিং—এ ব্যান্ড স্কোর ন্যূনতম ৬ হতে হবে। তবে নারী, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি এবং ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের আবেদনকারী প্রার্থীরা আইইএলটিএস স্কোর ৬ হলে আবেদন করতে পারবেন। আইইএলটিএসের পাশাপাশি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিই (পিয়ার্সন টেস্ট অব ইংলিশ) চেয়ে থাকে, যার স্কোর হতে হয় ন্যূনতম ৫৮। টোফেলের পেপার বেজড টেস্টে কমপক্ষে ৫৮০ এবং কম্পিউটার বেজড টেস্টে কমপক্ষে ২৩৭ নম্বর পেতে হবে।
কিছু বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ্যক্রমবহির্ভূত কার্যক্রম এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিজ্ঞতা চেয়ে থাকে। সামরিক পদে চাকরিরত কেউ স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্বের জন্য আবেদনকারী প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন না। যে বিষয়ে স্নাতকোত্তরের জন্য আবেদন করা হয়েছে, সে বিষয়সংলগ্ন কোনো কাজে ন্যূনতম চার বছরের অভিজ্ঞতা দেখাতে হবে। সর্বোপরি আবেদনের সঙ্গে গবেষণার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার সপক্ষে ডেভেলপমেন্ট ইমপ্যাক্ট প্ল্যান প্রেরণ করতে হবে।
আবেদনের পদ্ধতি
প্রতিটি স্কলারশিপের জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা স্কলারশিপের বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনেই আবেদন করতে পারবেন। এ জন্য ওয়েবসাইটে দেওয়া নীতিমালা খুঁটিনাটি স্পষ্টভাবে অনুসরণ করা বাঞ্ছনীয়। প্রতিটি আবেদনের জন্য ব্যক্তিগত প্রোফাইল বা সিভি, স্টেটমেন্ট অব পারপাস, রিকমেন্ডেশন লেটার গুরুত্বপূর্ণ নথি। এগুলোর নমুনা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে স্কলারশিপের বিজ্ঞপ্তি চলাকালে আবেদন ফর্মের সঙ্গেই সরবরাহ করা থাকে।
আবেদনপত্রের অংশে যাওয়ার আগে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আগেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম্পিউটারের স্ক্রিনে আসা কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হতে পারে। সতর্কতার সঙ্গে সেগুলোর যথাযথ উত্তর প্রদানের মাধ্যমে আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে। প্রয়োজনীয় সব নথি আপলোড করে অনলাইনে আবেদনের সার্বিক কাজ সম্পাদন করা যাবে। আবেদন মঞ্জুর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবেদনের সময় প্রদত্ত শিক্ষার্থীর ই–মেইলে তা জানিয়ে পরবর্তী নির্দেশনা পাঠানো হবে।
অস্ট্রেলিয়ায় স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে, তা হলো, স্কলারশিপের আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পরও শিক্ষার্থীকে স্টুডেন্ট ভিসায় আলাদা করে আবেদন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার জন্যই যে অস্ট্রেলিয়াতে যাওয়া হচ্ছে, তা স্টুডেন্ট ভিসার আবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। এরপরই আসে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও থাকা-খাওয়ার খরচ বহনের আর্থিক সচ্ছলতার ব্যাপারটি।