ইংল্যান্ডে পড়াশোনা: খণ্ডকালীন চাকরি ও স্কলারশিপের সুযোগ, আইইএলটিএসে ৬.৫ স্কোর হলে আবেদন

একটি দেশের দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার মূল চালিকা শক্তি দেশটির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সভ্যতা বিনির্মাণ ও সংস্কৃতির সংস্কারের প্রতিটি স্তরে যোগ্য লোকের উপস্থিতি দেশের সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করে। আর এর মধ্যে সুপ্ত থাকে সেখানে বসবাসরত মানুষের মানসম্পন্ন জীবনধারণের বীজ। এ বিষয়গুলো বিচারে ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় দেশটি হলো ইংল্যান্ড। বিশ্ববিখ্যাত সব বিদ্যাপীঠের আশ্রয়স্থল হওয়ায় উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রত্যেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে দেশটিকে ঘিরে ক্যারিয়ার গঠন করার। ইংল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আবেদনের পদ্ধতি, পড়াশোনার খরচ, স্কলারশিপসহ উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন সুবিধাগুলো জেনে নেওয়া যাক—

কেন ইংল্যান্ড সেরা গন্তব্য

ক্যারিয়ার গঠনে ইংল্যান্ড শিক্ষার্থীদের সেরা পছন্দ হওয়ার নেপথ্যের মূলে রয়েছে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। যেকোনো র‌্যাঙ্কিংয়ে দীর্ঘ সময় ধরে শীর্ষ ১০-এ থাকে দেশটির অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। কেমব্রিজ, অক্সফোর্ড, ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন ও ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন প্রায়ই শীর্ষে থাকে। তা ছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য সেরা শহর বিবেচনায় এ বছরের শীর্ষ স্থানটি দখল করে আছে লন্ডন। ইংল্যান্ডের জীবনধারণের মানও উন্নত। বিশেষ করে আকর্ষণীয় স্কলারশিপগুলো অর্জনের মাধ্যমে পড়াশোনার পাশাপাশি সেই জীবনধারণের সান্নিধ্যে যেতে পারেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা।

আবেদনের পূর্বশর্ত

  • অন্য অনেক প্রয়োজনের মধ্যে অন্যতম হলো আইইএলটিএস পরীক্ষায় ৬ থেকে ৬ দশমিক ৫ স্কোর।

  • আন্ডারগ্রেড প্রোগ্রামগুলোয় ভর্তির জন্য ন্যূনতম ১৩ বছরের একাডেমিক শিক্ষাবর্ষ অতিবাহিত করতে হবে। এখানে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের যোগ্যতা যুক্তরাজ্যের উচ্চমাধ্যমিক বা ন্যাশনাল ডিপ্লোমায় পরিচালিত ‘এ’ স্তরের পরীক্ষার সমতুল্য হওয়া আবশ্যক। আর স্নাতকোত্তর ডিগ্রিতে আবেদনের প্রথম শর্ত হলো স্নাতক পাস করা।

  • শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তির জন্য উচ্চমাধ্যমিকে প্রাপ্ত জিপিএ ৮০ ও ৯৫ শতাংশের মধ্যে থাকা প্রয়োজন। সেখানে ফলাফল ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ হলে আবেদন করা যাবে মাঝারি স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

  • কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেগুলো সর্বশেষ অর্জিত ডিগ্রির মিডিয়াম অব ইনস্ট্রাকশন (এমওআই) ইংরেজি দেখেই আবেদন গ্রহণ করে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভর্তির অন্যতম প্রধান যোগ্যতা থাকে ভালো আইইএলটিএস স্কোর। উপরন্তু স্কলারশিপ দেওয়ায় একাডেমিক যোগ্যতার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষার দক্ষতাকে মূল্যায়ন করা হয়।

  • স্নাতক অধ্যয়নের জন্য আইইএলটিএস স্কোর ৬ থেকে ৬ দশমিক ৫ থাকতে হয়। প্রি-মাস্টার প্রোগ্রামের জন্য প্রয়োজন হবে ৫ দশমিক ৫ থেকে ৬ স্কোর। সরাসরি স্নাতকোত্তরে আবেদন করতে লাগবে ৬ থেকে ৭ ব্যান্ড স্কোর। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নির্ভর করে তা ভিন্ন হতে পারে। এমবিএতে আবেদনের যোগ্যতায় অতিরিক্ত দেখাতে হবে ২ থেকে ৩ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা। এ ক্ষেত্রে আইইএলটিএস ফলাফল ৬ দশমিক ৫ থেকে ৭-এর মধ্যে থাকা জরুরি। আইইএলটিএস ব্যান্ড স্কোরের এ শর্তটি পিএইচডির জন্যও প্রযোজ্য। তবে অবশ্যই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে।

  • স্নাতকোত্তরের কোনো কোনো কোর্সে আরও কিছু প্রবেশিকা পরীক্ষার স্কোরের প্রয়োজন হয়। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন হচ্ছে জিআরই ও জিম্যাট।

আরও পড়ুন

শীর্ষস্থানীয় ইংলিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো

ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজ, ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড, ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন, ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গ, ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার, কিংস কলেজ লন্ডন, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টল, ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারউইক প্রভৃতি।

ইংল্যান্ডগামী ছাত্রছাত্রীরা যে বিষয়গুলো বেশি বাছাই করেন

আইন, ফিজিওথেরাপি, অ্যাকচুয়ারিয়াল সায়েন্স, ক্রীড়া ব্যবস্থাপনা, মনোবিজ্ঞান, ডেটা সায়েন্স, মেডিসিন ও সার্জারি, কম্পিউটার সায়েন্স, বিজনেস স্টাডিজ ও বিজনেস অ্যানালাইটিকস।

আবেদনের উপায়

সাধারণত সামার, অটাম ও স্প্রিং—এ তিনটি সময়ে ইংল্যান্ডের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তির কার্যক্রম শুরু করে। সেখানে সামার মে থেকে জুন পর্যন্ত। সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর অবধি থাকে অটাম এবং জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে চলে স্প্রিং অ্যাডমিশন। তবে ভর্তির মৌসুম নির্বিশেষ প্রত্যেক শিক্ষার্থীর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার ন্যূনতম ৯ থেকে ১০ মাস আগে আবেদন শুরু করা উচিত।

ইংল্যান্ডে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে স্নাতকের আবেদনগুলো নেওয়া হয়। সাইটটির নাম ইউসিএএস (ইউনিভার্সিটিস অ্যান্ড কলেজেস অ্যাডমিশন সার্ভিস), যার ওয়েব ঠিকানা: https://www.ucas.com/undergraduate/applying-to-university। এখানে ছাত্রছাত্রীরা নিবন্ধনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নথিপত্র আপলোডের পর আবেদন সম্পন্ন করে থাকেন।

অপর দিকে স্নাতকোত্তর কোর্সগুলোয় আলাদাভাবে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটে আবেদন করতে হয়।

আরও পড়ুন

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  • অনলাইনে পূরণ করা আবেদনপত্র

  • উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণি বা সমমানে ডিপ্লোমার সনদ ও একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট

  • মিডিয়াম অব ইনস্ট্রাকশন (এমওআই) সার্টিফিকেট (নির্দিষ্ট কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য)

  • বৈধ পাসপোর্ট

  • জাতীয় পরিচয়পত্র

  • ইংরেজি দক্ষতার প্রশংসাপত্র (আইইএলটিএস স্কোর)

  • পারসোনাল স্টেটমেন্ট

  • রেফারেন্স লেটার

  • সিভি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)

  • স্নাতকোত্তরের জন্য অতিরিক্ত যুক্ত করতে হবে—স্নাতক ডিগ্রির প্রশংসাপত্র, অভিজ্ঞতার প্রশংসাপত্র (এমবিএর জন্য), প্রবেশিকা পরীক্ষার স্কোর, যেমন জিআরই ও জিম্যাট।

  • পিএইচডি ক্ষেত্রে অতিরিক্ত নথি—স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির প্রশংসাপত্র, গবেষণা প্রস্তাব

অফার লেটার গ্রহণ

বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ এবং প্রার্থীদের মধ্যকার সাধারণ যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে ই-মেইল। শিক্ষার্থীদের কাগজপত্র যাচাই করে তাঁর ই-মেইল ঠিকানায় দরকারি নির্দেশনা পাঠানো হয়। এই ই-মেইলগুলোর মাধ্যমে সাধারণত অতিরিক্ত প্রয়োজনীয় কাগজ ও প্রবেশিকা পরীক্ষা বা সাক্ষাৎকারের কথা জানানো হয়।

সবদিক মূল্যায়নের পর ভর্তির সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হলে শিক্ষার্থীকে অফার লেটার পাঠানো হয়। ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রে এটি কনফারমেশন অব অ্যাকসেপট্যান্স ফর স্টাডিজ (সিএএস) নামে পরিচিত। এই লেটারটিই ইংল্যান্ডের স্টাডি ভিসার আবেদনের প্রথম শর্ত। সিএএস পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়।

আরও পড়ুন

স্টুডেন্ট ভিসার আবেদনের পদ্ধতি

  • দীর্ঘমেয়াদি উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ড যেতে হলে দেশটির স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন করতে হয়। এটি আগে টায়ার–৪ স্টুডেন্ট ভিসা ছিল। কমপক্ষে ১৬ বা তার বেশি বয়সী ছাত্রছাত্রীরা এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারে।

  • ভিসার মেয়াদ নির্ভর করে ভর্তি হওয়া কোর্সের সময়কালের ওপর। স্নাতক বা স্নাতকোত্তরের মতো ডিগ্রি পর্যায়গুলোয় অধ্যয়নের জন্য সাধারণত পাঁচ বছর পর্যন্ত ইংল্যান্ডে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়।

  • ভিসার আবেদনের জন্য এই লিংকে আবেদন করতে হবে। এ সময় ভিসার জন্য দরকারি যাবতীয় কাগজপত্র আপলোডের প্রয়োজন হবে। আবেদন সাবমিটের পর সম্পূর্ণ পূরণ করা অনলাইন ফরমটি ডাউনলোড করে তার একটি প্রিন্ট নিতে হবে।

ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  • অনলাইনে পূরণ করা আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপি

  • বয়স ১৮ বছরের কম হলে, মা–বাবার বা অভিভাবকের সম্মতির প্রমাণপত্র

  • অফার লেটার: সিএএস ও তার সাথে একটি ভিসা লেটার। লেটারটি আবেদনের আগে বিগত সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে ইস্যুকৃত হতে হবে।

  • বৈধ পাসপোর্ট: যেখানে ইউকে ভিসা সিলের জন্য কমপক্ষে একটি পৃষ্ঠা অবশিষ্ট থাকতে হবে।

  • তহবিলের প্রমাণ: ন্যূনতম প্রথম বছরের অধ্যয়নের জন্য কোর্স ফি এবং সর্বাধিক ৯ মাস পর্যন্ত জীবনযাত্রার খরচ সংকুলান থাকবে। এর সুস্পষ্ট পরিমাণটি নির্ভর করে প্রার্থী লন্ডনে নাকি, তার বাইরে থেকে পড়াশোনা করবেন, সেটির ওপর। তহবিলটি কমপক্ষে ২৮ দিন ধরে নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে অপরিবর্তিতভাবে থাকতে হবে। অধ্যয়ন ফির বাইরে ৯ মাস পর্যন্ত জীবনযাত্রার খরচ বাবদ যে তহবিলটি দেখাতে হবে, তা হলো—

    ১। লন্ডনের বাইরের শহরের ক্ষেত্রে প্রতি মাসে ১ হাজার ৩৩৪ পাউন্ড বা ২ লাখ ৯ হাজার ৩০ টাকা (১ পাউন্ড = ১৫৬ দশমিক ৬৯ বাংলাদেশি টাকা)। এটি ৯ মাসে দাঁড়ায় মোট ১৮ লাখ ৮১ হাজার ২৭২ টাকা।

    ২। লন্ডনে থাকলে মাসে ১ হাজার ২৩ পাউন্ড করে ৯ মাসে মোট ৯ হাজার ২০৭ পাউন্ড (১৪ লাখ ৪২ হাজার ৬৮৫ টাকা)।

  • স্টুডেন্ট লোন বা স্পনসরশিপ থাকলে লোন বা স্পনসরশিপ প্রদান করা কোম্পানির প্রমাণ

  • প্রার্থীর যক্ষ্মা টেস্টের ফলাফল

  • ভিসা ফি প্রদান নিশ্চিতকরণ রসিদ

  • বিগত শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ও মূল মার্কশিট

  • ইংরেজি ভাষার দক্ষতা প্রমাণ (আইইএলটিএস স্কোর)

  • প্রবেশিকা পরীক্ষার (জিম্যাট, জিআরই) স্কোর (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)

Md. Rashedul Alam Rasel
আরও পড়ুন

ভিসা আবেদন জমা ও বায়োমেট্রিক নিবন্ধন

ইংল্যান্ড দূতাবাসে সশরীর আবেদন জমা দেওয়ার আগে অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। এ তারিখ নেওয়ার জন্য এই লিংকে গিয়ে প্রার্থীর নিজস্ব ই-মেইল ঠিকানা দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। এই ই-মেইলেই পাঠানো হবে সাক্ষাৎকার গ্রহণের তারিখ।

দূতাবাসের ঠিকানা: ভিএফএস বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড, নাফি টাওয়ার, ৫৩, গুলশান অ্যাভিনিউ, গুলশান-১, সপ্তম তলা, ঢাকা-১২১২।

নির্ধারিত তারিখে ওপরের ঠিকানায় ভিসার আবেদনের প্রতিটি নথি মূল কপিসহ উপস্থিত হতে হবে। ভিসাকেন্দ্রে সাক্ষাৎকারসহ প্রার্থীর ছবি ও ১০ আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে। সবশেষে ভিসা ফি গ্রহণপূর্বক একটি রসিদ দেওয়া হবে। ভিসাযুক্ত পাসপোর্ট নিতে আসার সময় এই রসিদ সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে।

ভিসা প্রক্রিয়াকরণের আনুষঙ্গিক খরচ

স্টুডেন্ট ভিসা ফি ৪৯০ পাউন্ড, ঢাকায় ভিএফএস (ভিসা ফ্যাসিলিটেশন সার্ভিসেস) অনুসারে যা ৭৯ হাজার ২৬৫ টাকা। তবে প্রয়োরিটি ভিসার ফি ৫০০ পাউন্ড বা ৭৮ হাজার ৩৪৭ টাকা, যেখানে সুপার প্রয়োরিটি ভিসার জন্য দিতে হবে ৮০০ পাউন্ড (১ লাখ ২৫ হাজার ৩৫৬ টাকা)।

আবেদনের অংশ হিসেবে এই খরচের সঙ্গে অতিরিক্ত স্বাস্থ্যসেবা সারচার্জ দিতে হয়। এর মাধ্যমে প্রার্থী ইংল্যান্ডের জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা লাভ করতে পারেন। এই চার্জ নির্ভর করে সাধারণত ভিসার মেয়াদের ওপর। এই লিংক থেকে এই সারচার্জ বাবদ ঠিক কত খরচ হবে, তা জানা যাবে।

আরও পড়ুন

ইংল্যান্ডে পড়াশোনার সম্ভাব্য খরচ

সাধারণত হিউম্যানিটিস, আর্টস ও জেনারেল এডুকেশন কোর্সগুলো বেশ স্বল্প খরচের হয়। অন্যদিকে মেডিসিন ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো বিষয়গুলো যথেষ্ট ব্যয়বহুল। স্নাতক অপেক্ষা স্নাতকোত্তর পর্যায়ের অধ্যয়ন ফি সাধারণত বেশি হয়ে থাকে, যা বিষয়ভেদে ভিন্ন হয়। অন্যান্য দেশের মতোই এমবিএ প্রোগ্রামগুলোর খরচ সর্বাধিক। স্নাতক ডিগ্রির বার্ষিক খরচ ১০ থেকে ২০ হাজার পাউন্ড এবং স্নাতকোত্তরে গড়পড়তায় খরচ হয় প্রতিবছর ১২ থেকে ২২ হাজার পাউন্ড। বার্ষিক ১৫ থেকে ২৪ হাজার পাউন্ড বাজেট রাখতে হবে ডক্টরেট ডিগ্রির জন্য। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পিএইচডি প্রোগ্রামগুলোর জন্য সম্পূর্ণ অর্থায়নের ব্যবস্থা থাকে।

জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে লন্ডনের বাইরে থাকা হলে বাজেট অনেকটাই সাশ্রয়ী হয়ে আসে। শেয়ার করা রুমে থাকার ক্ষেত্রে গড়ে আবাসন খরচ হতে পারে মাসিক ৫৫৪ পাউন্ড। মাসে সম্ভাব্য ইউটিলিটি বিল হতে পারে ৪০ থেকে ৫০ পাউন্ড। খাদ্য ও গৃহস্থালির জন্য রাখতে হবে ১৬০ থেকে ২০০ পাউন্ড। মুঠোফোন বিল ১৫ থেকে ৫০ পাউন্ড। স্টুডেন্ট পাস নিয়ে যাতায়াত করা হলে পরিবহনে ব্যয় হবে প্রায় ৩২ পাউন্ডের (৫ হাজার ১৪ টাকা) মতো।

স্কলারশিপের সুবিধা

  • কমনওয়েলথ স্কলারশিপ। কমনওয়েলথভুক্ত দেশ হওয়ায় বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীরাও এ স্কলারশিপে আবেদন করতে পারেন। এর আওতায় টিউশন ফি, বিমানভাড়া ও জীবনযাত্রার ভাতা।

  • ব্রিটিশ কাউন্সিল গ্রেট স্কলারশিপ। স্নাতক বা স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরতদের জন্য এ বৃত্তির মূল্যমান ৫ থেকে ২৫ হাজার পাউন্ড, যা প্রায় ৭ লাখ ৮৩ হাজার ৪৭২ থেকে ৩৯ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৮ টাকার সমান। এর মধ্যে অনায়াসেই পড়াশোনার অর্থ সংকুলান হয়ে যায়।

  • চেভেনিং স্কলারশিপ। সম্পূর্ণ অর্থায়নের এ বৃত্তির মধ্যে টিউশন ফি, জীবনযাত্রার খরচ ও বিমানভাড়া পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এই স্কলারশিপ নিয়ে ইংল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সর্বোচ্চ এক বছর সময়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করতে পারেন।

খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ কেমন

টায়ার-৪ স্টুডেন্ট ভিসার মধ্যে চাকরিসংক্রান্ত সুবিধাগুলো হচ্ছে-

  • স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সাবাটিক্যাল অফিসার হিসেবে কাজের সুযোগ।

  • পেশাদার ক্রীড়াবিদ বা ক্রীড়া প্রশিক্ষক ব্যতীত যেকোনো খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ।

  • সেমিস্টার চলাকালে শিক্ষার্থীরা এ কাজগুলোর জন্য সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত কর্মঘণ্টা পেয়ে থাকেন। তবে ছুটির সময়ে এ রকম কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় ফুলটাইম কাজের সুযোগ থাকে।

  • অন-ক্যাম্পাস পার্টটাইম চাকরিগুলোর মধ্যে রয়েছে লাইব্রেরি সহকারী, টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট, ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট, নতুন ছাত্রদের জন্য ক্যাম্পাস গাইড ও ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর।

  • অন্যদিকে অফ-ক্যাম্পাস কাজগুলো হলো গ্রাহক পরিষেবা প্রতিনিধি, বিক্রয় বিশেষজ্ঞ, রেস্তোরাঁ পরিষেবা সহকারী ও ডেলিভারি সহকারী।

এগুলোয় সপ্তাহে গড়ে সর্বনিম্ন ২০০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫০০ পাউন্ড পর্যন্ত আয় হয়। এ ক্ষেত্রে আয়করের বিষয়টি খেয়াল রাখা জরুরি। কেননা, খণ্ডকালীন চাকরির ওপরও ট্যাক্স ও জাতীয় বিমা ধার্য হয়।

মাসে গড়ে ১ হাজার ৪২ পাউন্ডের (১ লাখ ৬৩ হাজার ২৭৬ টাকা) বেশি উপার্জনকারীদের আয়কর দেওয়া বাধ্যতামূলক। আর সপ্তাহে ১৬৬ পাউন্ডের (২৬ হাজার ১২ টাকা) বেশি আয়কারীদের বিমা ফি পরিশোধ করতে হয়। মূলত নিয়োগকর্তারাই আয়কর ও জাতীয় বিমা ফি কেটে মজুরি দিয়ে থাকেন।

তথ্যসূত্র: ইউএনবি নিউজ