শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন
আধাআধি প্রস্তুতিতে শুরু নতুন শিক্ষাক্রম
নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী এখনো সব বই পায়নি শিক্ষার্থীরা। মাধ্যমিকের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু হলেও প্রাথমিক শিক্ষকদের শুরুই হয়নি।
গত রোববার দুপুর সাড়ে ১২টা। রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন উচ্চবিদ্যালয়ের ছোট্ট প্রাঙ্গণে খেলাধুলা করছিল একদল শিক্ষার্থী। আশপাশে হাঁটাহাঁটি করছিল আরও কয়েকজন। তারা সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের প্রতিদিন একটি করে ক্লাস হচ্ছিল। সেদিন পর্যন্ত ১০টি বইয়ের মধ্যে পেয়েছে মাত্র ৩টি। বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জানালেন, নতুন শিক্ষাক্রমের বিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষকদের এখন সশরীর প্রশিক্ষণ চলছে। শেষ হবে আগামীকাল রোববার। এর মধ্যে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আছে। তাই ১৫ জানুয়ারির আগে নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে পুরোদমে ক্লাস শুরু হচ্ছে না।
একই দিনে এই বিদ্যালয় থেকে মতিঝিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা গেল, প্রথম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হলেও প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রম নিয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণই শুরু হয়নি। তবে বিদ্যালয়টিতে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণি থাকায় মাধ্যমিকের বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। কিন্তু সেদিন পর্যন্ত সব শ্রেণির সব বই পায়নি শিক্ষার্থীরা। ফলে ক্লাস হয় না পুরোদমে।
অভিযোগ উঠেছে, আধাআধি প্রস্তুতি নিয়ে সারা দেশে শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। অথচ নতুন এই শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষায় বড় ধরনের পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। বদলে গেছে শেখানো ও মূল্যায়নের ধরন। পরিবর্তন হয়ে গেছে পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তু ও বিন্যাসে। তাই আধাআধি প্রস্তুতিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হওয়ায় এটি শিক্ষায় কতটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
অবশ্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কর্মকর্তাদের দাবি, একটু দেরি হলেও এখন প্রশিক্ষণটা শুরু হয়েছে। বছরের প্রথম দিকে এমনিতেই বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি, বই বিতরণসহ নানা কারণে ঠিকমতো ক্লাস হয় না। তাই শিগগির প্রশিক্ষণের কাজ শেষ করে পুরোপুরি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করলেও খুব একটা অসুবিধা হবে না। এ ছাড়া গত মাসে অনলাইন প্রশিক্ষণে শিক্ষকদের ধারণা দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, গত মাসে প্রাথমিক বৃত্তিসহ কিছু কারণে প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু করতে দেরি হচ্ছে। এখন শিগগির তা শুরু হবে। আর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তারা আশা করছেন, শিগগির নতুন শিক্ষাক্রমের সব বইও পেয়ে যাবে শিক্ষার্থীরা।
নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে ভালো প্রস্তুতির কোনো বিকল্প নেই
১ জানুয়ারি থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়েছে। আগামী বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে তা শুরু হবে। এরপর ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে চালু হবে। উচ্চমাধ্যমিকের একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে বড় অংশের মূল্যায়ন হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে (শিখনকালীন)। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পুরোটাই মূল্যায়ন হবে সারা বছর ধরে চলা বিভিন্ন রকমের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। চতুর্থ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঁচটি বিষয়ে কিছু অংশের মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন, বাকি অংশের মূল্যায়ন হবে সামষ্টিকভাবে, মানে পরীক্ষার ভিত্তিতে।
বাকি পাঁচটি বিষয়ের মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন। তবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে গিয়ে ৭০ শতাংশ সামষ্টিক ও ৩০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে। সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষার মাধ্যমে হলেও এখনকার মতো শুধু কাগজ-কলমনির্ভর পরীক্ষা হবে না। অ্যাসাইনমেন্ট, উপস্থাপন, যোগাযোগ, হাতে-কলমের কাজ ইত্যাদি বহুমুখী পদ্ধতি ব্যবহার করে মূল্যায়ন করা হবে। এখনকার মতো জিপিএ বা গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ ভিত্তিতে ফল প্রকাশ করা হবে না। তিন শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। এর মধ্যে প্রথম স্তরটিকে বলা হবে পারদর্শিতার প্রারম্ভিক স্তর। দ্বিতীয় স্তরটি বলা হবে অন্তর্বর্তী বা মাধ্যমিক স্তর। আর সবচেয়ে ভালো স্তরটিকে বলা হবে পারদর্শী স্তর।
যেসব পরিবর্তন আসছে
■ প্রথাগত পরীক্ষা কমে যাচ্ছে, বড় অংশের মূল্যায়ন শিখনকালীন।
■ জিপিএ নয়, ফল হবে তিন নামে।
■ দশম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন বই পড়তে হবে।
■ বিভাগ বিভাজন হবে উচ্চমাধ্যমিকে উঠে।
■ শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে এসএসসি পরীক্ষা।
■ একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে বোর্ডের অধীনে দুটি পরীক্ষা।
পরিবর্তনের মধ্যে আরও আছে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে অভিন্ন বিষয় পড়তে হবে। বিভাগ বিভাজন হবে উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে। এখন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন বিষয় পড়ে নবম শ্রেণিতে বিভাগ (বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা) বিভাজন হয়। তখন শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে হবে এসএসসি পরীক্ষা। এখন নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে হয় এই পাবলিক পরীক্ষা। এ ছাড়া একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে বোর্ডের অধীনে আলাদা দুটি পরীক্ষা হবে। এরপর এই দুই পরীক্ষার ফল সমন্বয় করে এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হবে।
প্রাথমিকের প্রশিক্ষণ শুরুই হয়নি
নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে অন্যতম কারিগর হলেন শিক্ষকেরা। কিন্তু সেই শিক্ষকেরাই এখনো প্রস্তুত নন। শিক্ষাক্রম শুরুর পর এখন মাধ্যমিক শিক্ষকদের পাঁচ দিনের সশরীর প্রশিক্ষণটি অন্তত শুরু হলেও প্রাথমিকের শিক্ষকদের তা শুরুই হয়নি।
প্রাথমিকের সূত্রগুলো জানিয়েছে যে, তারা যেভাবে পরিকল্পনাটা করেছেন তাতে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে অনলাইন এবং সশরীরে সারা দেশে প্রায় ৪ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজটি শুরু হবে। তার আগে প্রশিক্ষক তৈরির জন্য প্রশিক্ষণটি শেষ করা হবে।
নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন নিয়ে আগে থেকেই প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ ছিল। পরিকল্পনা ছিল, গত বছর প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণিতে পরীক্ষামূলকভাবে নির্ধারিত কিছুসংখ্যক বিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করে পরিস্থিতি দেখে এ বছর সব বিদ্যালয়ে চালু করা। কিন্তু পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন ছাড়াই এ বছর সরাসরি প্রথম শ্রেণিতে তা চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রথমে পরিকল্পনা করা হয়েছিল এ বছর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে তা চালু করা হবে, কিন্তু এ বছর কেবল প্রথম শ্রেণিতেই তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আর এখন প্রশিক্ষণেও ঢিলেমির অভিযোগ উঠেছে।
নতুন শিক্ষাক্রমের বিষয়ে প্রাথমিকের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) এ কে এম রিয়াজুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে ডিসেম্বরে মাসব্যাপী ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন কোর্সের শিক্ষকদের পরীক্ষা ছিল। এ ছাড়া ওই মাসে দেশব্যাপী ন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসেসমেন্ট হয়েছে। আবার ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা ছিল এবং বছরের শুরুতে বই উৎসব থাকায় প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে কিছুটা দেরি হচ্ছে। এখন শিগগির তা শুরু হবে।
প্রশ্ন উঠেছে, দীর্ঘ সময় নিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে। এটি এখন শুরু হবে, তা–ও অনেক আগেই নির্ধারিত। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন।
মাধ্যমিকের প্রশিক্ষণ পরিস্থিতি
মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের প্রস্তুত করার কাজটি করছে মাউশি। এনসিটিবি গত ডিসেম্বরে সব শিক্ষককে পাঁচ দিনের সশরীর প্রশিক্ষণ দেওয়ার পথরেখাও ঠিক করে দিয়েছিল। কিন্তু মাধ্যমিক শিক্ষকদের সশরীর প্রশিক্ষণের কাজটি শুরু হয়েছে ৬ জানুয়ারি থেকে। ৬, ৭, ১৩ ও ১৪ এবং ১৫ জানুয়ারি এ প্রশিক্ষণ হবে। শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে মাধ্যমিক স্তরের ৪ লাখ ২০ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণের লক্ষ্য ঠিক করেছিল মাউশি। তবে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৮০ হাজারের মতো শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
মাউশির পরিচালক (প্রশিক্ষণ) প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য্য প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় ৩২ হাজার প্রধান শিক্ষকসহ সব মিলিয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ে সাড়ে তিন লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এখন বিষয়ভিত্তিক যেসব শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিতে পারছেন না, তাঁরা ফেব্রুয়ারিতে প্রশিক্ষণ পাবেন।
সারা দেশে উপজেলা ও থানা পর্যায়ে চলছে মাধ্যমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ। রমনা থানাধীন শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ চলছে রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে। রমনা থানা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মারুফ প্রথম আলোকে বলেন, এখানে ৭১৫ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
গত শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, একদল শিক্ষক গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। মাঝখানে একজন প্রশিক্ষক শেখাচ্ছেন। প্রশিক্ষকের নাম মো. সাইদুর রহমান। তিনি মগবাজার এলাকায় অবস্থিত শাহ নূরী মডেল হাইস্কুলের ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। তিনি ছয় দিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রশিক্ষক হয়েছেন। এখন অন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে ৭০ জন শিক্ষক নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা থাকলেও উপস্থিত ছিলেন ৫৩ জন।
সাইদুর রহমান জানালেন, প্রশিক্ষণ নিতে আসা শিক্ষকদের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী বানিয়ে ‘ডেমো ক্লাস’ নিচ্ছেন। কারণ নতুন শিক্ষাক্রমে হাতে-কলমে বাস্তব বিষয়ের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের শেখাতে হবে। নতুন শিক্ষাক্রমকে ইতিবাচক উল্লেখ করে এই প্রশিক্ষকের মূল্যায়ন হলো, প্রশিক্ষণটি এক-দুই মাসে আগে হলে ভালো হতো।
একই দিনে বাংলার একজন প্রশিক্ষকও জানালেন, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের বিষয়টি এখনো প্রারম্ভিক পর্যায়ে আছে। সবাই এখনো সব বই পায়নি। প্রশিক্ষণও মাত্র চলছে।
প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের একজন শিক্ষক জানালেন, এই শিক্ষাক্রম প্রশিক্ষণ ছাড়া কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। প্রশিক্ষণটি শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগে হলে ভালো হতো।
অবশ্য মাউশির মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ প্রথম আলোকে বললেন, একেবারে প্রশিক্ষণ ছাড়াই শিক্ষকেরা ক্লাসে গেছেন, তা কিন্তু নয়। এর আগে শিক্ষাক্রমের রূপরেখা নিয়ে এবং গত মাসে শিক্ষাক্রমের ওপর অনলাইন প্রশিক্ষণ পেয়েছেন শিক্ষকেরা। এখন সশরীর হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ হচ্ছে। কেউ প্রশিক্ষণ ছাড়া ক্লাসে যেতে পারবেন না।
মাউশির সূত্রমতে, মাধ্যমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের জন্য ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে।
সব বই না পাওয়ায় বাস্তবায়নে সমস্যা
নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে তৈরি করা প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বইগুলো বদলে গেছে। বইয়ের বিষয়বস্তু, বিন্যাসসহ সব ক্ষেত্রেই আনা হয়েছে বড় রকমের পরিবর্তন। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হলেও এই তিন শ্রেণির সব শিক্ষার্থী সব বই হাতে পায়নি। যেমন মতিঝিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা গেল, প্রথম শ্রেণিতে বাংলা ও ইংরেজির বই এলেও গণিত বই ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত আসেনি। সেদিন পর্যন্ত সপ্তম শ্রেণির জন্য তিনটি বই এসেছে। তবে ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই গেছে। যেহেতু এই শ্রেণিগুলোর বইগুলো একেবারে নতুন, তাই সব নতুন বই হাতে না পাওয়ায় নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে অসুবিধা হচ্ছে।
এনসিটিবির সূত্রে জানা গেছে, শুধু নতুন শিক্ষাক্রমের তিন শ্রেণির বই নয়, এ বছর সব শ্রেণির সব বই দিতেই দেরি হচ্ছে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান মো. ফরহাদুল ইসলাম অবশ্য বলেছেন, তাঁরা আশা করছেন, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সব বই পাবে শিক্ষার্থীরা।
একদিকে সব বই হাতে পায়নি শিক্ষার্থীরা, অন্যদিকে শিক্ষকদেরও পুরোপুরি প্রস্তুত করা হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে নতুন শিক্ষাক্রম কতটা প্রভাব ফেলতে পারবে শিক্ষায়? এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটির সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক এম তারিক আহসান প্রথম আলোকে বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে ভালো প্রস্তুতির কোনো বিকল্প নেই।