প্রত্যয় কর্মসূচি পেছানো ‘একধাপ অগ্রগতি’, তবে শিক্ষকদের আন্দোলন চলবে
সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় কর্মসূচির বাস্তবায়ন এক বছর পেছানোর কথা জানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার বিষয়টিকে আন্দোলনের একধাপ অগ্রগতি দেখছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। তাঁরা বলছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তাঁদের বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। তারপরই এই বিজ্ঞপ্তি এল, তবে যেহেতু এখনো দাবি পূরণের বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়নি, তাই তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে আগামী শনিবার ফেডারেশনের সভা ডাকা হয়েছে। সেখানেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তার আগপর্যন্ত এখনকার মতো করে কর্মবিরতি চলবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল রোববার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সভা করেছে। সভায় কনিষ্ঠ শিক্ষকেরা দাবির বিষয়ে বেশি সোচ্চার ছিলেন। তবে শিক্ষকদের কেউ কেউ পরীক্ষা ও লাইব্রেরিকে কর্মবিরতির বাইরে রাখার পক্ষেও মত দেন। এ বিষয়েও শনিবার অনুষ্ঠেয় ফেডারেশনের সভায় সিদ্ধান্ত হবে।
এর আগে গতকাল ফেডারেশনের ভার্চ্যুয়াল সভায় ‘দাবি পূরণ না হওয়ায়’ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। তবে সেই সভায় তাঁরা আশা করেন, সরকার তাঁদের দাবি পূরণ করবে।
কর্মবিরতির অংশ হিসেবে প্রতিদিনের মতো আজ দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের মূল ফটকে অবস্থান নিয়ে নিজেদের কথা তুলে ধরেন শিক্ষকেরা। এ নিয়ে টানা ১৫ দিন ধরে এ কর্মসূচি পালন করলেন শিক্ষকেরা।
সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা প্রথম আলোকে বলেন, আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের সঙ্গে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকের আলোচনার প্রেক্ষাপটেই একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি (প্রত্যয় কর্মসূচির বাস্তবায়ন এক বছর পেছানোর সিদ্ধান্ত) এসেছে। এটি একধাপ অগ্রগতি। কিন্তু প্রজ্ঞাপনে আরও পরিষ্কার করতে হবে। সেখানে শিক্ষকদের সুস্পষ্ট দাবিতে কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, সে জন্য আলোচনা হতে পারে। যদি দ্রুত এটি হয়ে যায় তাহলেই আন্দোলনটি সফল হবে এবং সরকার যে শিক্ষকদের প্রতি আন্তরিক, সেটাও প্রমাণিত হবে।
জিনাত হুদা বলেন, তাঁদের আন্দোলন ও আলোচনা—দুটিই চলবে।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এই পেনশন কর্মসূচি প্রত্যাহারের দাবিতে মিছিল করেছেন।
সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় কর্মসূচির প্রজ্ঞাপন বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে ১ জুলাই থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একযোগে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন। এ কারণে ক্লাস–পরীক্ষা হচ্ছে না। প্রশাসনিক ভবনেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেবা নিতে যাওয়া শিক্ষার্থীরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
প্রত্যয় কর্মসূচি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহার ছাড়াও শিক্ষকদের অন্য দুটি দাবি হলো; বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য উচ্চতর স্বতন্ত্র বেতনকাঠামো এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সুপার গ্রেডে (জ্যেষ্ঠ সচিবদের মতো বেতনকাঠামো) অন্তর্ভুক্ত করা।
গত শনিবার আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষকনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বৈঠকের পর ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আওতায় সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সব কটি প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত হবে ২০২৫ সালের ১ জুলাই। এর আগে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে পেনশনে যোগদানের যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা সঠিক নয়। সবার মতো তাঁরাও ২০২৫ সালের ১ জুলাইয়ে যোগ দেবেন, এটা তাঁদের পরিষ্কারভাবে জানানো হয়েছে।
এরপর গতকাল সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় কর্মসূচির বাস্তবায়ন এক বছর পেছানোর কথা জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।