নবম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপানো শুরু হয়নি
প্রাথমিকে বই ৯ কোটি ৩৮ লাখের বেশি। মাধ্যমিকের বই ২৩ কোটির কিছু বেশি।
নতুন শিক্ষাক্রমে বিষয় কম হওয়ায় চলতি বছরের চেয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষে মোট পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা কমেছে।
নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে দেড় মাস বাকি। কিন্তু এখনো নবম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপা শুরুই হয়নি। দরপত্র অনুযায়ী মুদ্রণকারীদের এসব বই ছাপার জন্য ৫০ দিন সময় দিতে হবে। কিন্তু জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এসব বই ছাপানোর বিষয়ে এখন চুক্তি করছে। ফলে নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুর দিন সব বই দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এই যখন অবস্থা, তখন বিএনপির ডাকা অবরোধের কারণে উপজেলা পর্যায়ে পাঠ্যবই পাঠানোর ক্ষেত্রেও কিছু অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। এসব কারণে আগামী বছরের শুরুর দিনে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব পাঠ্যবই তুলে দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও বাড়ছে।
তবে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম আশা করছেন, বছরের শুরুতেই সব শিক্ষার্থীর হাতে পাঠ্যবই তুলে দিতে পারবেন। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপার কাজ শেষ পর্যায়ে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার কাজও এ মাসে শেষ হয়ে যাবে। শুধু নবম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার জন্য মুদ্রণকারীদের সঙ্গে এখন চুক্তি করা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বলছে, প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপার কাজ এগিয়ে থাকলেও মাধ্যমিকের বই ছাপার কাজ পিছিয়ে।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, এবার প্রাক্-প্রাথমিক থেকে শুরু করে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য মোট ৩২ কোটি ৩৮ লাখের বেশি বই ছাপানো হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাথমিকে বই ৯ কোটি ৩৮ লাখের বেশি। আর মাধ্যমিক স্তরের বই ২৩ কোটির কিছু বেশি। নতুন শিক্ষাক্রমে বিষয় কম হওয়ায় চলতি বছরের চেয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষে মোট পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা কমেছে। চলতি বছর প্রায় ৩৪ কোটি পাঠ্যবই বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়। ভালো মানের মণ্ডের সংকটসহ কিছু কারণে এ বছরও সময়মতো সব শিক্ষার্থীর হাতে মানসম্মত সব বই তুলে দেওয়া যায়নি। শিক্ষাবর্ষের শুরুর দিনে স্কুলে স্কুলে উৎসব করা হলেও সব শিক্ষার্থীর সব বই হাতে পেতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় লেগেছিল।
এবার জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য বিনা মূল্যে পাঠ্যবই ছাপার প্রক্রিয়া আগেভাগেই শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বলছে, প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপার কাজ এগিয়ে থাকলেও মাধ্যমিকের বই ছাপার কাজ পিছিয়ে।
এবার আগেভাগে কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বছরের শুরুতেই সব বই ছাপার কাজ শেষ করা যাবে না।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, নবম শ্রেণি এবং কয়েকটি শ্রেণির শিক্ষক গাইড বই ছাপাতে হবে ৫ কোটি ৬ লাখ ৮৪ হাজার। এগুলো ছাপার বিষয়ে সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে কিছুটা সময় লেগেছে। এ জন্য কিছুটা দেরি হয়েছে। কয়েকটি লটে (বই ছাপার কাজ হয় লটের ভিত্তিতে) ছাপার বিষয়ে চুক্তি করা হয়েছে। বাকিগুলোর বিষয়ে চুক্তি এখনো প্রক্রিয়াধীন। নিয়মানুযায়ী এই শ্রেণির বই ছাপার কাজ শেষ করতে ৫০ দিন সময় দিতে হবে। কিন্তু নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে দেড় মাস সময় আছে। অর্থাৎ ৫০ দিনের কম সময় আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবার যাঁরা নবম শ্রেণির বই ছাপার কাজ পেয়েছেন তাঁরা ‘বড় মুদ্রণকারী’। তাঁদের হাতে অন্য কাজও কম। ফলে তাঁরা আশা করছেন, ৫০ দিনের আগেই ছাপার কাজ শেষ হয়ে যাবে।
অষ্টম শ্রেণি ও মাদ্রাসার ইবতেদায়ি একাধিক শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার কাজ হয় একসঙ্গে। এই শ্রেণিতে পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা ৫ কোটি ৩৪ লাখের বেশি। এনসিটিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত তার ২০ শতাংশ বই ছাপা হয়েছে। বাকি বই এখনো ছাপা হয়নি।
বিদায়ী শিক্ষাবর্ষে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়েছে। আগামী জানুয়ারি থেকে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে চালু হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রম। এ জন্য বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য অন্যান্য শ্রেণির পাশাপাশি নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে এসব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য বই প্রণয়ন করে ছাপানোর কাজও করছে এনসিটিবি।
জানতে চাইলে মুদ্রণশিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান প্রথম আলোকে বলেন, এবার আগেভাগে কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বছরের শুরুতেই সব বই ছাপার কাজ শেষ করা যাবে না।