স্কুলশিক্ষক কাস্তিলিও পেরুর প্রেসিডেন্ট হওয়ার গল্প

পেদ্রো কাস্তিলিওর এক সমর্থক
ছবি: রয়টার্স

বামপন্থী নেতা পেদ্রো কাস্তিলিও। বয়স ৫১। তিনি পেরুর নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশটির স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপনের দিনই গতকাল বুধবার শপথ নিয়েছেন। পেরুর ইতিহাসের প্রথম দরিদ্র প্রেসিডেন্টও তিনি। শপথের ঠিক দুদিন আগেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রাপ্য বেতন গ্রহণ না করার ঘোষণা দেন পেদ্রো কাস্তিলিও। তিনি জানান, শিক্ষকতা পেশা থেকে যে অর্থ পেতেন সেই পরিমাণ অর্থ নিয়ে চালাবেন সংসার।

পেরুর ইতিহাসে ৬৩তম প্রেসিডেন্ট সাবেক এই শিক্ষক, কৃষক এবং বামপন্থী উচ্চাভিলাষী রাজনীতিবিদ পেদ্রো কাস্তিলিও। কিন্তু আর কোনো প্রেসিডেন্ট তাঁর মতো দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত ছিলেন না। আর এ কারণেই দেশটির সাধারণ মানুষ ধারণা করছে, দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁর নীতিমালা পেরুকে বিশ্বে তুলে ধরবে এক অনন্য উচ্চতায়।

শপথের পর অভিষেক ভাষণে পেদ্রো বলেন, পেরুতে এখনো ঔপনিবেশিক ক্ষত গভীরভাবে রয়ে গেছে। তিনি এই ক্ষত সারিয়ে তুলতে চান। পেরুতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার ব্যাপারে অঙ্গীকার করেছেন পেদ্রো। তিনি তাঁর ভাষণে বলেন, ‘পেরু একজন কৃষক দ্বারা পরিচালিত হবে।’

পেরুর নতুন প্রেসিডেন্ট এক সময় শিক্ষকতা করতেন
ছবি: রয়টার্স

২ সন্তানের জনক কাস্তিলিওর জন্ম ১৯৬৯ সালের ১৯ অক্টোবরে। ১৯৯৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ছিলেন প্রাইমারি শিক্ষক। পেরুর এক অজপাড়াগাঁয়ের দরিদ্র শিক্ষক ছিলেন তিনি। এর মধ্যে ২০০২ সালে রাজনীতির ময়দানে নাম লেখান। এরপরই স্থানীয় কাউন্সিলের মেয়র হন। সফলভাবে দায়িত্ব শেষ করেন।

পেদ্রো কাস্তিলিও মাত্র চার বছর আগে জাতীয়ভাবে পরিচিতি পান। সে সময় তিনি দেশটির শিক্ষকদের বেতন নিয়ে সফল ধর্মঘটে নেতৃত্ব দেন। এই ধর্মঘটে হাজারো শিক্ষক অংশ নেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে কাস্তিলিও পেরুর খনি ও হাইড্রোকার্বন খাত জাতীয়করণ করার কথা বলেন। নির্বাচনে জয়ী হলে এক বছরে এক লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবেন বলে তিনি জানান। অপরাধ মোকাবিলায় পেরুতে পুনরায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান চালু করার পক্ষে তিনি। ৪৪ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী ও প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার প্রথম দিনটি কাটে নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের মাধ্যমে। এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্পেনের রাজা ষষ্ঠ ফিলিপ, লাতিন আমেরিকার ছয় নেতা, বলিভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস এবং যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষামন্ত্রী।

ছবি: রয়টার্স

পেরুতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বামপন্থী প্রার্থী পেদ্রো কাস্তিলিওকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দ্বিতীয় দফার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দেড় মাস পর অবশেষে বিজয়ী প্রার্থীর নাম জানতে পারল পেরুর জনগণ। গত ৬ জুন পেরুতে দ্বিতীয় দফার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠায় তা পর্যালোচনা করে ফল ঘোষণা করতে দেড় মাস সময় লেগে যায়। কাস্তিলিওর নির্বাচনী প্রতিপক্ষ ডানপন্থী কিকো ফুজিমোরির আনা নির্বাচনী জালিয়াতির অভিযোগ পর্যালোচনা শেষে স্থানীয় সময় গত সোমবার রাতে ফল ঘোষণা করে স্বাধীন সংস্থা ন্যাশনাল ইলেকশনস জুরি (জেএনই)। বিজয়ী প্রার্থী কাস্তিলিও ৫০ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পেয়েছেন। তাঁর প্রতিপক্ষ কিকো পেয়েছেন ৪৯ শতাংশের কিছু বেশি ভোট। কিকোকে ৪৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন কাস্তিলিও।

পেরুর বর্তমান প্রেসিডেন্ট এ ফলাফলকে স্বাগত জানিয়েছেন। গত ১৫ জুন ভোট গণনা শেষ হয় বলে জানায় পেরুর ন্যাশনাল অফিস অব ইলেকটোরাল প্রসেসেস (ওএনপিই)। গণনা করা ভোটে কিকোর চেয়ে কাস্তিলিও মাত্র শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ ভোট বেশি পান। ভোট গণনা শেষ হতেই কাস্তিলিও নিজেকে জয়ী দাবি করেন। অন্যদিকে, পরাজয় মানতে অস্বীকৃতি জানান কিকো। তিনি নির্বাচনে অনিয়মেরও অভিযোগ তোলেন। পেরুতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণার দায়িত্ব স্বাধীন সংস্থা ন্যাশনাল ইলেকশনস জুরির (জেএনই)। অনিয়মের অভিযোগগুলো জেএনই পর্যালোচনা করে। এতে নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণা বিলম্বিত হয়। এ বিলম্বের কারণে উভয় প্রার্থীর সমর্থকেরা রাজপথে নেমে আসেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর পেরুর জনগণ তাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হতে যাচ্ছেন, তা জানতে পারল। অন্যদিকে, কিকো রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে উঠেছেন। তাঁর বাবা আলবার্তো ফুজিমোরি পেরুর সাবেক প্রেসিডেন্ট। দুর্নীতি ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত হয়ে আলবার্তো ২৫ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। অনেক আগেই রাজনীতিতে কিকোর হাতেখড়ি হয়েছে। ডানপন্থী পপুলিস্ট দল পপুলার ফোর্সের নেতা তিনি। কিকো ২০১১, ২০১৬ ও ২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও দুর্নীতির মামলা রয়েছে। তথ্যসূত্র: এএফপি, বিবিসি ও রয়টার্স