রাবিতে শিক্ষক নিয়োগ
‘নির্দিষ্ট প্রার্থী’র জন্য আবার যোগ্যতা শিথিল
দুটি বিভাগে আটজন শিক্ষক নিয়োগ হবে। এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ‘শর্ত’ জুড়ে দিয়ে যোগ্যতা শিথিল।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা আবারও শিথিল করার অভিযোগ উঠেছে। দুটি বিভাগে আটজন শিক্ষক নিয়োগ দিতে যে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে, তাতে ‘শর্ত’ জুড়ে দিয়ে চলমান নীতিমালার চেয়েও যোগ্যতা কমানো হয়েছে।
এর আগে ২০১৭ সালে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা উদ্দেশ্যমূলকভাবে পরিবর্তন করে যোগ্যতা কমিয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য এম আবদুস সোবহান ও তাঁর নেতৃত্বাধীন প্রশাসন। এর মাধ্যমে কম যোগ্যতায় শিক্ষক হন উপাচার্যের কন্যা ও জামাতা। এ রকমভাবে যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্য ৩৪ জনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তদন্তের পর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) তাঁদের নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দেওয়ার সুপারিশ করেছে। এ নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই নতুন করে দুটি বিভাগে এমন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি শিক্ষকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।
ফলিত গণিত বিভাগ ও ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য ১২ অক্টোবর পৃথক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে ফলিত গণিত বিভাগে প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদে দুজন করে এবং ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে প্রভাষক পদে দুজনকে স্থায়ী ও সহকারী অধ্যাপক পদে দুজনকে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। ১৭ অক্টোবর আবেদন গ্রহণ শুরু হয়, যা শেষ হবে ৩ নভেম্বর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেডিং পদ্ধতিতে এসএসসি বা সমমান এবং এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় জিপিএ–৫ স্কেলে যেকোনো একটিতে ন্যূনতম ৪ এবং অন্যটিতে ৪ দশমিক ৫০ থাকলে আবেদন করা যাবে। এই যোগ্যতা ২০১৭ সালে বর্তমান উপাচার্য দায়িত্বে আসার পর ঠিক করা হয়েছিল। এর আগে এসএসসি-এইচএসসি দুটিতেই ন্যূনতম ৪ দশমিক ৫০ থাকার বাধ্যবাধকতা ছিল।
কিন্তু নতুন বিজ্ঞপ্তির নিচের দিকে বলা হয়েছে, শুধু ২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ সালের এসএসসি বা সমমান এবং ২০০৩ সালের এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় জিপিএ–৫ স্কেলে যেকোনো একটিতে ন্যূনতম জিপিএ–৩ দশমিক ৫০ এবং অন্যটিতে ৩ দশমিক ২৫ থাকতে হবে।
১ অক্টোবর সিন্ডিকেট সভায় পরিবর্তিত এই নীতিমালা অনুমোদন করা হয়। সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক আবদুল আলিম বলেন, ১ অক্টোবর সিন্ডিকেটে অনেকগুলো আলোচ্যসূচি ছিল। কয়েকটি নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছে। পরে উপাচার্য বললেন, ২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ সালে পাস করা শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্টে পাস করেছেন। তাঁদের সুযোগ দেওয়া দরকার। তখন এটি নিয়ে খুব বেশি আলোচনা না হয়ে পাস হয়।
একাধিক শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেছেন, ফলিত গণিত বিভাগে গত ৫ মার্চ অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া মো. আবদুল আওয়ালের দাখিলের (এসএসসির সমমান) ফল ছিল জিপিএ-৪ ও আলিমের ফল জিপিএ–৩ দশমিক ৩০। তিনি ২০০১–০৩ সালের মধ্যে দাখিল ও আলিমের শিক্ষার্থী ছিলেন।
ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক মোহা. সোলাইমান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া এক প্রার্থীকে স্থায়ী পদে নিয়োগ দিতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করে এভাবে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। কারণ, বর্তমান উপাচার্যের করা আগের পরিবর্তিত নীতিমালাতেও তাঁর নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ ছিল না।
অ্যাডহক ভিত্তিতে আগেই কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীকে নিয়োগের বিষয়ে ফলিত গণিত বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘তখন আমাদের শিক্ষকের সংকট ছিল। এ জন্য আমরা অ্যাডহক ভিত্তিতে শিক্ষক চেয়েছিলাম। তবে আমরা চাহিদায় বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগ্যতা অনুযায়ী চেয়েছিলাম। কিন্তু আবদুল আওয়ালকে নিয়োগ দিয়েছে প্রশাসন। এখানে আমাদের কিছুই করার ছিল না।’