নর্থ সাউথের নূর যেভাবে সারা দেশের হয়ে উঠলেন

এনজেল নূর
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ভক্তদের জন্য একটা প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছিল জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলস। নিয়মটা সহজ—মাইলসের ‘নীলা’ গানটি গেয়ে ভিডিও পাঠাতে হবে। সাত–পাঁচ না ভেবে ভিডিও পাঠিয়েছিলেন এনজেল নূর। তখন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাংস্কৃতিক সংগঠনের হয়ে ক্যাম্পাসের মঞ্চে টুকটাক গান করেন। বহু মানুষের সামনে গাইবেন—এমনটা কখনো ভাবেননি। কিন্তু সেই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে মাইলসের সঙ্গে গান গাওয়ার সুযোগ পেয়ে যান তিনি। সেটাই ছিল টার্নিং পয়েন্ট। এরপর বাংলালিংকের বিজ্ঞাপন। সব মিলিয়ে দুই ডজনের বেশি বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেছেন নূর। কাজ করেছেন নাটকেও।

একগাল হেসে নূর বলছিলেন, ‘মাইলসের সঙ্গে সুযোগটা আসার আগে আমি আসলে কখনোই ভাবিনি যে এত বড় পরিসরে গান করব। সবকিছু হঠাৎ করে হয়ে গেছে। এরপর বিজ্ঞাপনের সুযোগ এল। অনেক গানের অনুষ্ঠানে প্রস্তাব আসতে শুরু করল। শুরুর দিকে একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। একটা বিষয়ই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল—এত মানুষ থাকতে আমাকেই কেন ডাকছে? নিশ্চয়ই আমার মধ্যে কিছু একটা আছে। এই ভাবনা থেকেই নিজেকে গুছিয়ে নিতে শুরু করি।’

এনজেল নূর
ছবি: সাবিনা ইয়াসিমন, অলংকরণ: রাকিব

বিজ্ঞাপনে কাজ করতে গিয়ে শুরুতে অনেক কিছুই বুঝতেন না। ধীরে ধীরে শিখেছেন, শিখছেন। একটি বিজ্ঞাপনে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের সঙ্গেও৷ নূর বলছিলেন সে অভিজ্ঞতার কথা, ‘সাকিব আল হাসান অনেক বড় মানুষ। পরিচালক আগেই বলে দিয়েছিলেন, কেউ যেন তাঁর সঙ্গে সেলফি তুলতে না যায়, তিনি বিরক্ত হতে পারেন। তো আমিও আমার মতো শট দিচ্ছিলাম। কাজের শেষের দিকে মনে মনে আফসোস হচ্ছিল—এত কাছে পেয়েও তাঁর সঙ্গে ছবি তুলতে পারলাম না। হঠাৎ তিনি নিজেই এসে বললেন, “এনজেল, তোমার সঙ্গে তো ছবি তোলা হলো না।” সাকিব ভাইয়ের কাজ শেষ হলেও আমার তখনো একটা শট বাকি। তিনি আমার জন্য ১৫ মিনিট অপেক্ষা করেছিলেন। এরপর আমরা ছবি তুলেছি। এত বড় মানুষ হয়েও যে এত বিনয়ী হওয়া যায়, এটা তাঁকে দেখে বুঝেছি।’

এত দূর আসার পেছনে নর্থ সাউথ ক্যাম্পাসের যথেষ্ট অবদান আছে, বললেন সে কথাও। শুরু থেকেই বন্ধুরা উৎসাহ দিয়েছে। ক্যাম্পাসে বসে একদিন নিজের মতো গান করছিলেন। পরিচিত এক আপু গানটা ভিডিও করে ছেড়ে দেন নেট দুনিয়ায়। দুই দিনের মধ্যে সেই ভিডিও দেখেছে দুই লাখের বেশি মানুষ। মোটামুটি পরিচিতি পাওয়ার পর শিক্ষকেরাও কখনো কখনো গান শোনানোর আবদার করেন। প্রথম দিকে নূরের নাকি সংকোচ হতো। তবে এখন ততটা হয় না। পেশাদার গায়ক হয়ে উঠছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন আর গানের সূত্র ধরে ক্যাম্পাসের চেনা মুখ হয়ে উঠেছেন এনজেল নূর। এই খ্যাতির অবশ্য বিড়ম্বনাও আছে। বন্ধুরা প্রায়ই খ্যাপায়—‘এখন তো সেলিব্রিটি হয়ে গেছো। আমাদের ফোন ধরো না।’ এই সব টুকটাক খুনসুটি বেশ উপভোগই করেন তিনি।

অভিনয়ে আগ্রহ আছে। একাধিক নাটকে প্রস্তাবও পেয়েছেন। যেহেতু ভালো গান করেন, তার নাটকের গানও তিনিই গাইবেন। নূরের একটি মৌলিক গান রেকর্ড হওয়ার পথে। সংগীত পরিচালক ইমন চৌধুরীর সঙ্গে দুটি গান কাভারের কাজ করেছেন। পিরান খানের সঙ্গে ‘এই মন’ নামের একটি গান প্রকাশিতও হয়েছে। তবে অভিনয় বা গানকে পেশা হিসেবে নিতে চান না এই তরুণ তারকা। হতে চান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। পাশাপাশি গান ও অভিনয়টা চলতে পারে।

টফি আয়োজিত স্টার সার্চ প্রতিযোগিতায় সেরা ১০-এ আছেন এনজেল নূর। এখন গ্র্যান্ড ফিনালের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।